সুখবর নিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাসে এসেই ধাক্কা খেয়েছে রপ্তানি আয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে অগাস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২৮৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার করেছে। রপ্তানির এই পরিমাণ গতবছর একই মাসের তুলনায় সাড়ে ১১ শতাংশ কম। গতবছর অগাস্টে বাংলাদেশ ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এবার অগাস্টে ৩৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করেছিল বাংলাদেশ। এই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ কম আয় হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। গতবছর জুলাইয়ে এ খাতে আয় হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ১৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশের মত। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ২২ লাখ ডলার। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে শূণ্য দশমিক ৯২ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। গত বছর জুলাই-অগাস্ট সময়ে ৬৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। এবার জুলাই-অগাস্টের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রপ্তানিকারকরা বলছেন, কোরবানি ঈদের কারণে কয়েক দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন থেকে শুরু করে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সে কারণেই অগাস্টে রপ্তানি কমেছে। পরের মাসগুলোতে এ ধারা থাকবে না। ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-অগাস্ট সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৯১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। অর্থাৎ ৬৭৩ কোটি ২২ লাখ ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৫৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের যোগান দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। তবে এ খাতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে দশমিক ৩৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ আয় কম হয়েছে এবার। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ২৯২ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩৩ শতাংশ। উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৭৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি কমেছে শূণ্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণেই অগাস্টে সার্বিক রপ্তানি আয় কমেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানিতে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছিল ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের বর্তমাস সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থবছরের শুরুটা খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু কোরবানির ঈদের কারণে ৮/১০ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন হয়নি; রপ্তানি হয়নি। সে কারণেই অগাস্টে রপ্তানি আয় ধাক্কা খেয়েছে।” প্রতি বছরই দুই ঈদের কারণে এমন হয় হয় বলে জানান তিনি। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে আয় বাড়বে আশা করে তিনি বলেন, “চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও খুব একটা বাড়বে না। তবে বাকি মাসগুলোতে ভালো হবে আশা করছি।” যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়বে কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে পারভেজ বলেন, বাজার ধরে রাখতে চায়না তাদের মুদ্রার মান অনেক কমিয়েছে। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতা করে তাদের বাজার দখল করা খুবই কঠিন। “যুদ্ধের ডামাডোলে সামগ্রিকভাবে পোশাকের চাহিদা কমবে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া পোশাকের দাম অনেক কমে গেছে। সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ আমাদের রপ্তানিতে ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।” অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-অগাস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে শূণ্য দশমিক ৪৩ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশ। চা রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ৫ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২২ দশমিক ১১ শতাংশ। তামাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। সার্বিক রপ্তানি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।