Home Apparel চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্রয়াদেশ আসছে বাংলাদেশে

চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্রয়াদেশ আসছে বাংলাদেশে

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাড়তে পারে বাংলাদেশের রফতানি। এরই মধ্যে ক্রেতারা বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে আয়োজিত অ্যাম্বিয়েন্তে শীর্ষক প্রদর্শনীর দর্শনার্থী-ক্রেতা প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রত্যাশা জানিয়েছে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো।

৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ৩৪টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে সিরামিক ও পাট খাতের প্রতিষ্ঠানও। তারা বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত পশ্চিমা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা। ফলে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহ রয়েছে। নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছেন তারা।

প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া সিরামিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে প্যারাগন সিরামিক, শাইনপুকুর, পিপলস সিরামিক, মুন্নু সিরামিক ও ফার সিরামিকস। পাট খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে প্রকৃতি, সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ, আর্টিসান হাউজ, এসিক্স বিডি, অরণ্য ক্র্যাফটস, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, বিডি ক্রিয়েশন, ঊষা হান্ডিক্র্যাফটস ও আস্ক হ্যান্ডিক্র্যাফটস।

শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার (ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং) মো. ছালেক মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। এ মনোভাব বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সম্ভাবনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লিভিস চীনের সঙ্গে যেমন কাজ করে, তেমনি বাংলাদেশের শাইনপুকুরের সঙ্গেও কাজ করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনে অর্ডার দেয়ার কথা থাকলেও তারা এখন তা বাংলাদেশে দিচ্ছে। একই রকম ঘটনা আরো দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।

প্যারাগন সিরামিকের ম্যানেজার (ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং) মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, এসব মেলায় সাধারণত বিদ্যমান ও নতুন—এ দুই ধরনের ক্রেতাই আসেন। এবার নতুনদের আনাগোনা শূন্য। বিদ্যমান ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও তাদের জন্য এখানে আসার প্রয়োজন ছিল না।

প্রতীক সিরামিকস লিমিটেডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) এমএ হাসেম বণিক বার্তাকে বলেন, চীনের সাম্প্রতিক সমস্যার কারণে যারা চীন থেকে পণ্য সরবরাহ নিতেন, তাদের অনেকেই বিকল্প খুঁজছেন। তাই আমাদের কাছ থেকে পণ্য সরবরাহ নিতে যোগাযোগ করছেন তারা। এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। শুধু ক্রেতা এলেই তো চলবে না, কাঁচামালের উৎসও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাঁচামালের বড় অংশ আসে চীন থেকে। চলমান সংকটের কারণে চীন তো কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারবে না। তাই এটা উভয় সংকট। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বেশি দাম দিয়ে হলেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ করবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বেশি দাম পেলেও কাঁচামাল কিন্তু আমাদের চীন থেকেই আনতে হবে। ইতিবাচক দিক হলো অনেক বছর ধরে চেষ্টার পরও যেসব ক্রেতাকে আমরা আনতে পারিনি, তারা এবার নিজ থেকেই আসছে।

পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুত্ফর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এবারের প্রদর্শনীতে ক্রেতা কম, কারণ করোনাভাইরাস। অনেকেই ভয়ে আসতে চাচ্ছেন না। যেখানেই জনসমাগম হচ্ছে, সে স্থান এড়িয়ে চলছে মানুষ। কিন্তু চীন থেকে যেসব কাঁচামাল আসার কথা, তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাকে হয়তো বিকল্প উৎস থেকে কাঁচামাল আনতে হবে। তাতে খরচ পড়বে বেশি। অর্থাৎ তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে বিকল্প উৎস থেকে বেশি দাম দিয়েই কাঁচামাল কিনতে হবে। এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে তা বলাই যায়।

ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, চীনের এ সংকট খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু আমাদের জন্য বড় ধরনের সম্ভাবনা। আজ সকালে এক ক্রেতা অর্ডার নিশ্চিত করেছেন। আগামী তিন-চার মাসের জন্য ওই ক্রেতা চীনে যাবেন না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। পোশাকসহ অন্য খাতের জন্য হয়তো সংকট তৈরি হবে। কারণ সেগুলোর কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে, যা পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নেই। কাজেই আমাদের জন্য এটা অনেক বড় সম্ভাবনা, যেটা আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।

জার্মানির বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক ক্রেতা ফ্রাংকফুর্ট এলেও হোটেলেই অবস্থান করছেন। লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে তারা মেলায় আসছেন না। তার পরও এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। কারণ যারাই আসছেন, তারা বাংলাদেশে পণ্য প্রস্তুতকারকদের নিয়ে আগ্রহী।

জার্মানিতে সফররত বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ অংশ নেয়ায় যে সাড়া পাওয়া গেছে, তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অর্ডার আসার প্রবণতা বেশি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। চীনের বিষয়টি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক। বিগত সময়ের সঙ্গে তুলনা করে তারা এ মনোভাব জানিয়েছেন।

বণিক বার্তার সঙ্গে কথা হয় বেশকিছু ইউরোপিয়ান ক্রেতা প্রতিনিধিদের। ব্যবসা ও ভাবমূর্তির স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাননি তাদের কেউ। তারা বলেছেন, চীনে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন ও সচেতন। এর অংশ হিসেবে পণ্য প্রস্তুতের বিকল্প গন্তব্য ভাবছেন তারা। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন রাতারাতি পরিবর্তন না হলেও পর্যায়ক্রমে এটি ঘটবে বলে মনে করছেন তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here