অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধের লক্ষ্যে ও দেশীয় শিল্পের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কতিপয় এইচএস কোডভুক্ত ফ্যাব্রিকের ট্যারিফ কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল বস্ত্র ও সুতা উৎপাদনকারী শিল্প মালিক সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবনায় এর প্রতিফলন নেই বলে মনে করে সংগঠনটি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা। প্রস্তাবিত বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ায় এ অনুরোধ জানিয়েছে বিটিএমএ।
বিটিএমএ মনে করে, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ও এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রভাবে আমাদের সামগ্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ রফতানিমুখী টেক্সটাইল মিল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য যেসব টেক্সটাইল মিল সুতা ও কাপড় তৈরি করে এমন প্রতিষ্ঠানও।
অর্থমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত বাজেটে নভেল করোনাভাইরাসজনিত কারণে সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তরণ এবং দেশের শিল্প খাতকে সচল রাখার লক্ষ্যে প্রণোদনা অব্যাহতসহ কতিপয় কর হ্রাসের প্রস্তাব ইতিবাচক বলে মনে করে বিটিএমএ। তবে তারা বলছে, টেক্সটাইল খাতে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলা এবং তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিটিএমএর অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে মূলত দুটি বিষয় রয়েছে। একটি হলো প্রতিযোগী দেশ কর্তৃক আগ্রাসী বিপণন বা প্রচারণা কৌশল গ্রহণ। এতে রফতানিমুখী টেক্সটাইল মিলগুলো যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা বিদ্যমান ৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ আগামী ছয় মাসের জন্য নির্ধারণ করা।
দ্বিতীয় মূল প্রস্তাবটি ছিল, স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলোর মধ্যে যারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য সুতা তৈরি করে, তাদের জন্য নভেল করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে আর্থিক ক্ষতি লাঘবে সব ধরনের সুতার ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার। কারণ সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে পহেলা বৈশাখের বাজার, ঈদুল ফিতরসংশ্লিষ্ট জাকাতের বাজার হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।
বাজেট প্রস্তাবনায় প্রতি কেজি কটন সুতার ওপর ৪ টাকার স্থলে ৩ টাকা ধার্য করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিএমইএ বলেছে, তবে কৃত্রিম আঁশের বা ম্যান মেড ফাইবারের তৈরি সুতার প্রতি কেজিতে সুনির্দিষ্ট মূল্য সংযোজন কর ৬ টাকা ধার্য করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এর ফলে সংশ্লিষ্ট মিলগুলোর জন্য তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করে কৃত্রিম আঁশে তৈরি যেকোনো সুতার ওপর প্রতি কেজিতে ২ টাকা মূসক ধার্যের অনুরোধ করছি। কেননা দীর্ঘদিন পর টেক্সটাইল মিলগুলো চালু হলেও নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে সুতার রফতানি আদেশ মূলত নেই বললেই চলে। অন্যদিকে সুতার মোকামগুলোও ক্রেতাশূন্য।
কৃত্রিম ম্যান মেড ফাইবার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করার জন্য বাজেটে কর অবকাশ সুবিধা প্রদানে বিনিয়োগ বাড়বে। এজন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিএমএ প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, করদাতাদের করহার লাঘবের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এরূপ কোম্পানির করহার ৩৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ ধার্য করেছেন। প্রস্তাবটি ইতিবাচক। তবে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রফতানির মূল্যের ওপর উেস কর কর্তন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের জন্য প্রস্তাবটি কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হবে। এজন্য অউেস কর কর্তন আগের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে বিটিএমএ।