তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের তথ্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, ৯৪ শতাংশ কারখানায় জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন দেয়া হয়েছে। ১১০ কারখানায় বেতন বাকি আছে। অন্যদিকে শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, ১১২৬ কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়নি। অবশ্য শ্রমিক নেতারা বলছেন, শিল্প পুলিশের তথ্য সঠিক। বিজিএমইএ’র তথ্য ভিত্তিহীন, মনগড়া। আর শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, অন্যবারের তুলনায় এবার শ্রম পরিস্থিতি সন্তোষজনক। বিজিএমইএ’র তথ্য মতে, সদস্যভুক্ত ৯৪ শতাংশ কারখানায় সরকার নির্ধারিত হারে জুলাই মাসের বেতন দেয়া হয়েছে। ১৮৯৮টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ১৭৮৮টি। অর্থাৎ ১১০টি কারখানা বেতন দেয়নি। আর বোনাস দেয়া হয়েছে ৯৬ শতাংশ কারখানায়। অবশ্য শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, ভিন্ন কথা। তথ্য মতে, বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৮৮২টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে ৭৫৬টি কারখানা। বেতন পরিশোধ করেনি ১১২৬টি কারখানা। একইভাবে বিকেএমইএভুক্ত ১১০১টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করেনি ২৫৩টি কারখানা। আর বিটিএমইএ’র বেতন দেয়নি ১৭০টি কারখানা। এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সমিতির সদস্যভুক্ত কোনো কারখানা বেতন-বোনাস দেয়নি, এমন অভিযোগ পাইনি। গাজীপুরে শ্রমিকরা শতভাগ বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বলে শুনেছি। এর দায়-দায়িত্ব মালিকরা নেবে না। কারণ শ্রম আইন অনুযায়ী পুরো মাসের বেতন দিতে আমরা বাধ্য নই। তারপরও মানবিক কারণে অনেক কারখানা মালিক পুরো বেতন দিয়েছেন। আর বিজিএমইএ’র জনসংযোগ কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম বলেন, বেতন পরিশোধে বিজিএমইএ’র তথ্য শতভাগ সঠিক। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কারখানা ঘুরে ঘুরে ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছে। শিল্প পুলিশের তালিকা আপডেটেড কিনা বলতে পারছি না। তবে আমরা আমাদের তথ্যের ব্যাপারে কনফিডেন্ট। প্রসঙ্গত, ২০ জুলাই বিজয়নগরের শ্রম ভবনে শ্রম পরিস্থিতি এবং পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে সরকার, মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ২৭ জুলাই এবং চলতি মাসের বেতনের অর্ধেক ৩০ তারিখের মধ্যে মালিকরা পরিশোধ করবেন। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, শিল্প পুলিশের তথ্য পুরোপুরি সঠিক। বিজিএমইএ’র তথ্য ডাহা মিথ্যা। এরা আগেও শ্রমিকদের ঠকিয়েছে, এখনও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঠকাচ্ছে। গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়ায় অনেক শ্রমিক বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। মালিকদের অনেকে বলেছেন, সন্ধ্যার মধ্যে বেতন পরিশোধ করবেন। জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। তবে কয়েকটি কারখানায় বেতন দেয়নি, শুধু বোনাস দিয়েছে। তারপরও বড় ধরনের অসন্তোষ হয়নি। পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলছে শ্রম মন্ত্রণালয় : এদিকে ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের চেয়ে ‘সন্তোষজনক’ আখ্যা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এবং শ্রম অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সার্বিক শ্রম পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি ঈদের আগের নির্দিষ্ট সময়ে শ্রমিকদের প্রতিশ্রুত বেতন-বোনাস দেয়ায় মালিকদের ধন্যবাদ জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কেএম আবদুস সালাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই অধিদফতরের কর্মকর্তা এবং মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। সারা দেশে গঠিত ২৩টি কমিটি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে মালিক-শ্রমিক সবাই আন্তরিক। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় জানান, অন্য যে কোনো ঈদের চেয়ে এবারের ঈদুল আজহার আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রম অসন্তোষ নেই বললেই চলে। সারা দেশে বিশেষ করে শ্রমঘন শিল্প এলাকা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দু-চারটে কারখানায় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা থাকলেও আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছেন এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।