দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও রপ্তানি উদ্বুদ্ধ করতে পোশাক খাতে নগদ সহায়তা প্রদান করে আসছে সরকার। এতে করে প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতেও ভূমিকা রাখছে। খাতভিত্তিক বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা হলেও পোশাক খাতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে নানা জটিলতা রয়েছে।
অথচ অন্যান্য খাতে এত জটিলতা নেই। পোশাক ও বস্ত্র খাতের চারটি সংগঠন সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে নগদ সহায়তা প্রাপ্তি সহজীকরণের দাবি করেছেন। বিদ্যমান
জটিলতা দূর করে অন্যান্য খাতের মতো সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তার অর্থ প্রদান করা হলে জটিলতা কমবে। এ বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাক
ও ‘সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ’-এর যৌথ উদ্যোগে পোশাক খাতের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের আলোচনার সারমর্ম নিয়ে আজকের বিশেষ আয়োজন।
সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা
প্রদান কেন জরুরি :মোহাম্মদ হাতেম
১ম সহসভাপতি, বিকেএমইএ এবং সিনিয়র সহসভাপতি, ইএবি
বা ংলাদেশের রপ্তানি খাতে নিটওয়্যার ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অপরিসীম। এ সেক্টরের প্রতি সরকারেরও সুনজর ও সহানুভূতি বরাবরই ছিল এবং দেশের পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম এই খাতে নগদ সহায়তা চালু করে। শুরুতে ২৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার ফলে ইতিমধ্যেই দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে বিশেষ করে নিটওয়্যারের একটি শক্তিশালী পশ্চাত্ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সুতাসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত নগদ সহায়তা সংক্রান্ত সার্কুলারগুলোর অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট ফার্ম, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ এ সংক্রান্ত সার্কুলারসমূহ নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা প্রদান করায় বহুবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে (এফ ই সার্কুলার-০৯, ২০০১. এফই সার্কুলার-০৭, ২০০৩, এফই সার্কলার-১২, ২০১০ ইত্যাদি)। ২০০৩ সাল থেকেই সার্কুলার জটিলতা ও অস্পষ্টতা নিরসন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা সংবলিত বহু লেখালেখির পরও অজ্ঞাত কারণে তার অধিকাংশ আজও সমাধান হয়নি। এফ ই সার্কুলার-০৯, ২০০১ এর ‘ফরম খ’ এর এক ‘স্বীয়’ শব্দ অপসারণ করতেই লেগেছে ১৪ বছর; ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এফই সার্কুলার ৩৫ এর মাধ্যমে একটি সংশোধনী দিয়ে ‘ফরম খ’ এর ‘স্বীয় উত্পাদিত বস্ত্রমূল্য’ এর ‘স্বীয়’ শব্দটি বাদ দিলেও হেডিংয়ে রয়ে গিয়েছে ‘কম্পোজিট’ শব্দটি যা নিয়ে বিড়ম্বনার কোনো শেষ নেই, তাছাড়া ‘স্বীয়’ শব্দটি বাদ দিলেও সেখানে নতুন করে অযৌক্তিক কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে আরো নতুন বিড়ম্বনা যোগ করা হয়েছে। ফলে নগদ সহায়তা পেতে চরম বিড়ম্বনা ও হয়রানির মাত্রা পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রয়েছে রপ্তানিকারকদের এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; একইভাবে বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা প্রাপক উদ্যোক্তাগণ। আর সার্কুলারসমূহের এ অস্পষ্টতাগুলোর সুযোগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পক্ষ। এতে করে পুরো কারখানার পুঁজি এবং উত্পাদন প্রক্রিয়ার ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অথচ সরকার বরাবরই দেশের এক বিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সমৃদ্ধ রপ্তানি শিল্পের প্রধান এ খাতের উত্তরোত্তর রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের নীতিগত সহায়তা দিয়ে আসছেন; নিট ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদানের কথা বিবেচনায় রেখেই এবং দেশীয় পশ্চাত্ সংযোগ শিল্পের বিকাশের স্বার্থে বহুবছর যাবত্ই বাজেটে দেশীয় সুতা ব্যবহারের বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে (বাস্তবে যা সর্বোচ্চ ৩.২ শতাংশ) বিকল্প নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য প্রণোদনা সুবিধা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এফই সার্কুলার ৩৫ নতুন করে আরো জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। যদিও এই সার্কুলার জারির আগে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নগদ সহায়তা কেন্দ্রিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তত্কালীন অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠক করেছিলাম আমরা। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যই ছিল তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা পরিশোধ সংক্রান্ত সার্কুলারসমূহের জটিলতা নিরসন। সে সভায় উপস্থিত ছিলেন তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ (এমপি), অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদ্বয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রমূখ। উক্ত সভায় বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও ইএবির পক্ষ থেকে বস্ত্রখাতের নগদ সহায়তা পেতে বিভিন্ন সমস্যা, বিড়ম্বনা ও হয়রানির কথা তুলে ধরা হয় এবং সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি রপ্তানিমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের দাবি জানানো হয়। সবকিছু শুনে মন্ত্রী মহোদয় সার্কুলারসমূহের জটিলতা দূর করে সহজীকরণ করার সিদ্ধান্ত দেন এবং সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানিমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ট্যারিফ কমিশন সম্ভাব্যতা যাচাই করে সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানিমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের সুপারিশ প্রদান করেন। কিন্তু বৈঠকের সূত্র ধরে, আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ এফই সার্কুলার-৩৫ জারি করা হয়—যাহাতে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নতুন করে আরো অনাহুত জটিলতা তৈরি করা হয়েছে।
বস্ত্রমূল্য নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই : বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের এফই সার্কুলার ০৯/২০০১ এ ২য় অনুচ্ছেদের (ক) এ বলা হয়েছে, ‘তন্তু হইতে সুতা ও পরবর্তী সকল পর্যায়ের উত্পাদন বাংলাদেশে সম্পাদিত হইয়াছে এরূপ রপ্তানির জন্যই কেবল বিকল্প নগদসহায়তা সুবিধা প্রযোজ্য থাকিবে।’ কিন্তু বর্তমানে নগদ সহায়তা প্রাপ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিসাবায়নের পদ্ধতিটি জটিল করে রাখা হয়েছে, যেমন—প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্য (প্রত্যাবাসিত মূল্য-ফ্রেইট চার্জ) এর ৮০ শতাংশ [মূল্য সংযোজনের ন্যূনতম মাত্রার (২০) বিয়োজনোত্তর অঙ্ক ১০০-২০=৮০] এবং প্রদর্শিত বস্ত্রমূল্য, এ দুইটির মধ্যে যেটি কম দাঁড়াবে তার ৪ শতাংশ। আমরা ধরে নেই, এই হিসাবে প্রচলিত নগদসহায়তা ১০০-এর ৮০ শতাংশের ৪ শতাংশ= সর্বোচ্চ ৩.২ শতাংশ পাওয়ার সুযোগ আছে। কোনো অবস্থাতেই এর বেশি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর এখানে বস্ত্রমূল্য নির্ণয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা পদ্ধতি নেই এবং করাও কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ কাপড়ের বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশনেবল ডিজাইন ও গুণগত মানের তারতম্যের কারণে মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন পদ্ধতি বা প্যারামিটার অবলম্বন করতে হয় যা অত্যন্ত টেকনিক্যাল। যেমন—বস্ত্র তৈরিতে নিটিং চার্জ ও ডাইং চার্জের কোনো সীমানা নেই। কারণ বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন ও ডিজাইন এবং কাপড়ের গুণগত মানের তারতম্যের কারণে নিটিং চার্জ (প্রতি কেজি ১৫ থেকে ১৭০ টাকা) এবং ডাইং চার্জ (প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে) বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেটা নির্দিষ্ট ঐ সেক্টরের টেকনিক্যাল ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। যে কারণে এফই সার্কুলার-৭/২০০৩ এর ধারা-৪ এ নির্ধারিত ঐ চালানে ব্যবহূত বিভিন্ন কাঁচামালের মূল্যের সঠিকতার বিষয়ে স্ব স্ব অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রত্যায়নপত্র প্রদানের বিধান থাকলেও তা অডিট ফার্মসমূহ বা অডিট কর্তৃপক্ষ আমলে নিচ্ছে না। আর সেখানেই যতসব জটিলতা। বর্তমানে বিদ্যমান অন্যান্য সকল খাতের নগদসহায়তা সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর দেওয়া হলেও একমাত্র পোশাক খাতেই তা প্রদানের ক্ষেত্রে বস্ত্রমূল্যকে অথবা প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ৮০ শতাংশ (মূল্য সংযোজনের ন্যূনতম মাত্রার বিয়োজনোত্তর অঙ্ক) কে আমলে নেওয়া হয়ে থাকে যা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল।
অন্যদিকে নগদসহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অডিট সিস্টেম আরো একটি জটিল বিষয় এবং বিড়ম্বনার অপর নাম। কারণ, অডিট ফার্মসমূহের (বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োজিত সিএ ফার্ম) অযৌক্তিক ও বিরক্তিকর চরম স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই শিল্প মালিকদের নানাভাবে হয়রানি হতে হয় ও সার্টিফিকেট পেতে বিলম্বিত হয় এবং অনেক সময় নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নগদসহায়তার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন সার্কুলার আমলে নিয়ে হয়রানি করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে সিএ ফার্মসমূহ বলে থাকেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশেই তাদের এগুলো আমলে নিতে হয়। এ বিষয়ে সিএ ফার্মসমূহের অ্যাসোসিয়েশন আইসিএবিয়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করলে তারাও বিড়ম্বনা নিয়ে বিব্রত বোধ করেন এবং জটিলতা নিরসনে সহমত পোষণ করেন। আবেদনের মাধ্যমে নগদসহায়তা পেতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে দেশীয় সুতা ও বস্ত্র দ্বারা উত্পাদিত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে মূল্য প্রত্যাবাসিত হওয়ার পর প্রচলিত পদ্ধতিতে এবং নির্ধারিত হারে আবেদন করা হয়েছে কি না শুধু তাই বিবেচ্য, সেক্ষেত্রে অডিটের কোনো প্রয়োজন পড়ে না, কারণ এক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছেই এ রপ্তানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব দালিলিক প্রমাণ রক্ষিত আছে, পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের অডিট তো রয়েছেই। অথচ অডিটের কারণে নগদসহায়তার সার্টিফিকেট পেতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ০৬ মাস থেকে ০১ বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এরপর সার্টিফিকেটসহ এই ক্লেইম বাংলাদেশ ব্যাংকে যাবার পর আরো ০৬ থেকে ১২ মাস সময় লেগে যাচ্ছে। আবার নগদসহায়তার ওপর ৫ শতাংশ হারে উেস কর কর্তন করা হচ্ছিল (১ জুলাই ২০২০ থেকে আবার ১০ শতাংশ হয়েছে) যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, কারণ এটা কোনো ইনকাম নয়, এটা একটা ভর্তুকি, ভর্তুকির ওপর কোনোভাবেই টেক্স হতে পারে না। বর্তমানে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত পোশাক খাতের উদ্যোক্তাগণ প্রতি তিন মাস অন্তর এ টাকাটার জন্য প্রহর গুনতে থাকে, আর টাকাটা পাওয়ার পর তা থেকে বকেয়া গ্যাস বিদ্যুত্ বিলসহ বিভিন্ন ধরনের দেনা মিটানো হয়ে থাকে। কারণ রপ্তানি বিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কোনোভাবেই উত্পাদন খরচের সকল দেনা পরিশোধ করা অসম্ভব। সেখানে কষ্টার্জিত এ টাকার ১০০ টাকা দিয়ে ১০ টাকা নিয়ে গেলে তা বড়ই কষ্ট লাগে, আঁতে ঘা লাগে।
এমতাবস্থায় নগদসহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ইস্যুকৃত সার্কুলার সমূহের শব্দগত জটিলতা ও অস্পষ্টতার অবসান ঘটিয়ে এবং উপরোক্ত সকল জটিলতা নিরসন করে অন্যান্য সব খাতের মতো এ খাতেও সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদসহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা সংবলিত নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করার যৌক্তিক দাবি জানাচ্ছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সুনজর কামনা করছি।
বিভিন্ন শর্তের কারণে সমস্যা
হচ্ছে :টিপু মুনশি এমপি
বাণিজ্যমন্ত্রী
ন গদ সহায়তার এই সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলা রয়েছে। বিভিন্ন শর্তের কারণে ব্যবসায়ীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক সময় এই সুবিধার টাকা ছয় মাসেও পাওয়া যায় না। যেহেতু এটি প্রণোদনা, সেজন্য যাতে সহজে এবং ঝামেলামুক্ত-ভাবে পেতে পারেন—সে চেষ্টা করা দরকার। ব্যাংকে ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর পণ্য রপ্তানির পেমেন্ট আসলে নগদ সহায়তার ৭০ শতাংশ অর্থ আগাম দিলে সুবিধা। নইলে ছয় থেকে নয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। বাদবাকি ৩০ শতাংশ প্রয়োজনে কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেওয়া হোক। এটা করা হলে রপ্তানিকারকরা রক্ষা পাবেন।
এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এক-দেড় মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছি। নগদ সহায়তা যিনি নিচ্ছেন, এর সঠিকতা অবশ্যই দেখতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যথাযথ সহযোগিতাও করা দরকার। যাতে তারা হয়রানিমুক্তভাবে এ সুবিধা নিতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যরা চিন্তা করলে এটি সম্ভব।
অডিটের ঝামেলা উঠিয়ে দিতে
হবে :এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি
সভাপতি, বিকেএমইএ
প্র বাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠান ব্যাংকের মাধ্যমে। তাদের বিষয়ে কোনো অডিট করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এখন প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের ওপর ইনসেনটিভ পাচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যাংকের বাইরে অন্য কাউকে দায়িত্ব নেওয়া লাগছে না। ব্যাংকই এখানে সব। ফলে তাতে কোনো ঝামেলা হয় না। প্রবাসীর আত্মীয়স্বজন সহজে ও কম সময়ে অর্থ গ্রহণ করতে পারেন। আবার রপ্তানিকারকরাও বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। ব্যাংকই এখানে কাজ করে, তাহলে এখানে কেন এত ফর্মালিটিজ করতে হবে? ব্যাংকেই তো রপ্তানিকারকের সব তথ্য থাকে। রপ্তানিকারকদের ক্যাশ ইনসেনটিভ পেতে হলে অডিট কেন লাগবে? অডিটরের ঝামেলা এ খাত থেকে তুলে দিতে হবে।
পণ্য জাহাজীকরণ হয়ে মূল্য প্রত্যাবাসিত হয়ে গেলে তার ওপর রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা হিসাবে যে অর্থ দেওয়া হয় তা দিয়ে দিতে হবে। আর এরপর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কারণে মনে করে যে অডিট করা দরকার তাহলে তা করতে পারে। অডিটের পরে সেখানে অসংগতি কিছু দেখলে জরিমানাসহ নানা পদক্ষেপ নিতে পারে।
অডিটের এই পদ্ধতির কারণে রপ্তানিকারকদের হয়রানি হতে হয়। এই যে, এখন করোনার সময়ে গত কয়েক মাস ধরে অডিটফার্মগুলো বন্ধ। কারখানাগুলো কিন্তু সবই সচল আছে। আর কারখানা চালাতে শ্রমিকদের বেতনসহ সব খরচ দিয়েই কিন্তু চালাতে হচ্ছে। অথচ যে পণ্য রপ্তানি হয়ে গেছে তার ওপর প্রাপ্য অর্থ এখনো রপ্তানিকারকরা পাচ্ছে না। এ অর্থ পেলে এই কঠিন সময়ে কাজে লাগত।
অডিটের কারণে কারখানাগুলোকেও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন, এজন্য কারখানাগুলোকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। সব ধরনের কাগজপত্র জোগাড় করে রাখতে হয়। আর অডিটের সময় অডিটরদের অপ্রত্যাশিত আবদার তো থাকেই।
সকল ঝামেলার মূল হলো বস্ত্রমূল্য নির্ধারণ। আমরা যারা এ খাতে কাজ করি তারাই তো এ বিষয়ে এক্সপার্ট। শিল্প চালাতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরোতে হয়। তার ওপর যদি বাড়তি এ কাজটি করতে হয় তাহলে তা সত্যিই দুঃখজনক। তাই সরকারের কাছে আবেদন অন্যান্য সব পদ্ধতি তুলে দিয়ে শুধু এফওবি মূল্যের ওপর ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হোক।
টিকে থাকার স্বার্থে অডিট পদ্ধতি তুলে দিতে হবে :এ মতিন চৌধুরী
সাবেক সভাপতি, বিটিএমএ
সা ধারণত ক্যাশ ইনসেনটিভের পলিসি হলো এফওবির মূল্যের ওপর দেওয়া। ওষুধ, চামড়াসহ অন্য সকল ক্ষেত্রে সেটাই প্রাকটিস। তবে বস্ত্রখাতের জন্য অত্যন্ত একটি জটিল পদ্ধতির ভেতরে আবার অডিট পদ্ধতি রয়েছে যার কারণে এ খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
বস্ত্রমূল্য নির্ধারণ নিয়ে যত জটিলতা, অডিটর বলেন নিটিং চার্জ এত কেন? ডায়িং চার্জ বেশি হয়ে গেছে। তারা অনেক সময় কাপড়ের ওজন নেয়। এভাবে নানা জটিলতা দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট, স্থানীয় ও রাজস্ব অফিসের অডিট, দুর্নীতি দমন কমিশনের জেরা প্রভৃতির কারণে এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন খরচ বেশি হচ্ছে, অন্য দিকে সময়ও ক্ষেপণ হচ্ছে। এসব ঝামেলা থেকে আমরা মুক্তি চাই। এজন্য সরকারের কাছে আবেদন একটাই রপ্তানিতে যতটুকু ক্যাশ ইনসেনটিভ দেবে তা সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর দিয়ে দিক, অন্য কোনো পদ্ধতিতে নয়। অযথা জটিলতা তৈরি করে রাখা হয়েছে।
মূলত স্থানীয় সুতা শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এবং রপ্তানিকারকদের স্থানীয় সুতা কিনতে উত্সাহ দিতেই অডিট পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া শুরু হয়। তবে যে উদ্দেশ্যে দেওয়া শুরু হয়েছিল এখন সে উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায় থেকে যারা সুতা কেনেন অডিটের কারণে তাদেরকে অযথা যে হয়রানির শিকার হতে হয় তাতে ব্যবসায়ীদের বিপদ এবং বিড়ম্বনা আরো বাড়ে। অন্য দিকে ক্যাশফ্লোতে সমস্যা হয়, দীর্ঘদিন ধরে টাকার একটা বড় অংশ আটকে থাকে। এ পদ্ধতি ব্যবস্থাপনার জন্য বেশি লোকবলের প্রয়োজন হয়। নানান ডকুমেন্ট সংরক্ষণে রাখতে হয়। ফলে অন্যান্য খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে বড় বড় কোম্পানি লোকাল ইয়ার্ন ব্যবহার করে না। বাংলাদেশের বড় রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলোর কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলবে যে বিদেশ থেকে তারা ইয়ার্ন কিনছে। তাদের যুক্তি হলো আজই যদি আমি ভারত থেকে ইয়ার্ন কিনি তাহলে প্রতি কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা কম পাই। আর বাংলাদেশ থেকে কিনলে এক বছর পরে ২০ টাকা পাব। হ্যারেসমেন্ট বা ক্লাশফ্লোসহ অন্য সমস্যা তো রয়েছেই। রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতে হলে এ ব্যবস্থার সহজীকরণ করতে হবে। তা না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়ে যাবে।
১৯৯৯ সালের একটি নিয়মানুযায়ী প্রোডাক্ট তৈরির জন্য ১৬% অবচয় হতে পারে, যেটা ইনসেনটিভের হিসাবায়নে আমলে নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই, কিন্তু অডিটের ক্ষেত্রে এটা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। এ সিস্টেম থাকাই উচিত না। বস্ত্রখাতে একেক পণ্যের মান একেক রকম। যেটাতে ভ্যালু অ্যাড করা হয় সেটাতে খরচও বেশি হয়। তবে অডিটররা সবগুলোকে একভাবে দেখার চেষ্টা করেন। ১০ আর ১০০কে একই ধরলে হবে না। ভ্যালু অ্যাড করতে হলে নিটিং ডাইং প্রিন্টিং এবং ওয়াশিংয়ে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়, যা অডিট ফার্মসমূহ কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থান বাস্তবতা বিবর্জিত। করোনা ভাইরাসের কারণে আবার গত চার-পাঁচ মাস অডিট ফার্মগুলো বন্ধ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পদ্ধতি এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো। সেখানে ভারতের কটন করপোরেশন অব ইন্ডিয়া তুলা উত্পাদক ফার্মারদের সহযোগিতা করার জন্য মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসে সরকার তুলা কিনে থাকে। ইন্ডিয়ান সরকার কমিটেড কৃষককে সহায়তা করার জন্য। সামনে নভেম্বরে যে সিজন আসছে তখন আবার সরকারকে কটন কিনতে হবে। এজন্য কেনা দামের চেয়ে কম টাকায় এখন কটন বিক্রি করে দিচ্ছে সিসিআই। এখন ইন্ডিয়ার লোকাল মার্কেটে কটনের প্রাইস ৫০ সেন্ট, অথচ ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে ৭০ সেন্ট। এক্ষেত্রে আমাদেরকে গ্লোবাল প্রাইসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কটন কিনতে হয় ৭০ সেন্টে। তাই ইনসেনটিভ না বাড়ালে কমপিটিটিভনেস আসছে না। ধরা যাক, বাংলাদেশের এক্সপোর্ট করে ১ বিলিয়ন ফরেন এক্সচেঞ্জ আয় হলো। এজন্য ইমপোর্ট খরচ বাদ দিলে হয়ত এক্সপোর্ট আর্নিং হচ্ছে ০.২৫ বিলিয়ন। লোকাল মার্কেট থেকে কাঁচামাল কেনা গেলে ০.৬৫ থেকে ০.৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় হতো। এখন আমরা মোট এক্সপোর্ট দেখব নাকি রিটেনশন দেখব। লোকাল সুতা ব্যবহার করলে রিটেনশন বাড়ে। তাই ইনসেনটিভ শুধু ৪% দিলে হবে না। প্রয়োজনে আরো বাড়াতে হবে। বাড়িয়ে সেটা কত হবে সে বিষয়ে আরো অনেক বেশি আলোচনা করা যেতে পারে।
তিনটি কারণে এখন সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, অডিটর সংক্রান্ত জটিলতা। দ্বিতীয়ত, ইন্ডিয়ান কটন প্রাইসের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আর তৃতীয়ত, আমাদের পলিসির কারণে লোকাল রিটেনশন বাড়ানো যাচ্ছে না।
নগদ সহায়তা :প্রক্রিয়া সহজীকরণ
চাই :মোহাম্মদ আলী খোকন
সভাপতি, বিটিএমএ
বা ংলাদেশের তৈরি পোশাকের অগ্রযাত্রা ও একই সঙ্গে এর রপ্তানির সুযোগটি সৃষ্টি হয়েছে মূলত আশির দশকে শ্রীলঙ্কার জাতিগত সংঘাত থেকে। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, আমাদের সাহসী উদ্যোক্তাগণের এই শিল্পটি সম্পর্কে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিনিয়োগে অপরিসীম সাহস একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষমতার ফলে তৈরি পোশাকশিল্পের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। পাশাপাশি এ খাতটিকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে আমাদের সরকার কর্তৃক বস্ত্রখাতে প্রদত্ত পলিসি সাপোর্ট ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পলিসি সাপোর্টের মধ্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ছিল তা হলো—প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামালকে শূন্য শুল্কে আমদানির সুবিধা প্রদান। অন্যদিকে প্রাথমিকভাবে ২৫ শতাংশ বিকল্প নগদ সহায়তা প্রদান।
উক্ত সুবিধাগুলো প্রদানের মূল উদ্দেশ্য ছিল টেক্সটাইল খাতে যে সব দেশ বিশ্ব বাজারে দাপটের সঙ্গে তাদের দেশ কর্তৃক বিভিন্ন কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও উপকরণ যা বিভিন্নভাবে Subsidized হয়ে আমাদের দেশে রপ্তানি হতো, একই পণ্যসামগ্রী তৈরি ও রপ্তানিতে আমাদের যে Price Dis-advantage ছিল তা সমন্বয় করে ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠা আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড়কে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিটিএমএ অত্যন্ত গর্বিত যে, সরকার প্রদত্ত উক্ত পলিসি সাপোর্ট এবং প্রণোদনার সম্পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে আমাদের সাহসী উদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশের প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে একটি কার্যকর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
আমাদের রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল মিলগুলোর তৈরি সুতা ও কাপড়ের যথাক্রমে ৮০ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ নিট ওভেন পোশাকশিল্পে প্রচ্ছন্নভাবে রপ্তানি করা হয়। ফলশ্রুতিতে তৈরি পোশাক খাতে লিড টাইম কমেছে, পোশাকের ফ্যাশনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনসহ পণ্যের বহুমুখীকরণ হয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত এক বছর ব্যতিরেকে কখনই বাধাগ্রস্ত হয়নি। একই সঙ্গে ক্রমাগতভাবে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক সাশ্রয় (Retention) হয়েছে। অন্যদিকে হয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থান, যার আরো সুযোগ রয়েছে। আমাদের রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল মিলগুলো তৈরি পোশাক খাতে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে যে পরিমাণ সুতা ও কাপড় সরবরাহ করেছে, তার মধ্যে ২০১৪-১৫ সালে তৈরি পোশাকশিল্প কর্তৃক পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ছিল ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৮-১৯-এ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর সঙ্গে বেশ কিছু মিল Domestic ব্যবহারের উদ্দেশ্যে টেক্সটাইল সামগ্রী তৈরি ও বাজারজাত করে, যার মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো, উক্ত হিসাবটি অন্তর্ভুক্ত করা হলে ২০১৮-১৯ সালে টেক্সটাইল সেক্টর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরকার কর্তৃক বস্ত্রখাতে বিকল্প নগদ সহায়তার ইতিবাচক প্রতিফলন (Impact) হচ্ছে—এখাতে গড়ে ওঠা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি যা একদিকে যেমন আমাদের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বস্ত্রসামগ্রীর চাহিদাও পূরণ করছে। যে বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আমাদের দেশ কোনো এক সময়ে টেক্সটাইল সামগ্রী আমদানিতে অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো, বর্তমানে তা টেক্সটাইল সামগ্রী রপ্তানিতে অন্যতম দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে; কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক অস্বাভাবিক কম মূল্যে (আমাদের জানামতে উত্পাদন খরচের তুলনায় কম মূল্যে) সুতা রপ্তানির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মিলগুলো আমদানিকৃত সুতার সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, আপাত্কালীন ব্যবস্থা হিসেবে বস্ত্রখাতে বিদ্যমান ৪ শতাংশ বিকল্প নগদ সহায়তা অন্তত আগামী এক বছরের জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে তা সরাসরি FOB মূল্যের ওপর প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এছাড়াও Cost of Doing Business I Ease of Doing Business যা একটি স্বীকৃত বিষয় তার ওপর গুরুত্ব প্রদান করে নগদ সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনাহুত জটিলতা দূরকরত PRC’র বিষয়টি নিশ্চিত করে সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থাসম্বলিত নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করা অতি জরুরি বলে আমরা মনে করছি।
জটিলতা দূর করে পদ্ধতি সহজ
করতে হবে :ফয়সাল সামাদ
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ
ক্যা শ ইনসেনটিভ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু সমস্যা হয়। একটি রপ্তানি চালানের এ টু জেড প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ব্যাংকেই রক্ষিত থাকে। তারপরও একটা অংশের অল্প কিছু ক্যাশ ইনসেনটিভ পেতে অযথা অনেক বেশি ডকুমেন্টেশন করতে হয়, শত শত ফটোকপি করতে হয়। এটা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য এক দিকে সময় ক্ষেপণ, অন্য দিকে খরচ বাড়িয়ে দেয়। কারণ, ডকুমেন্ট জোগাড় করা বা সংরক্ষণ করার কাজে যে কোনো কোম্পানির অনেক বেশি লোকবল প্রয়োজন হয়। তাই ডকুমেন্টের সংখ্যা কমাতে হবে।
অন্য দিকে অডিট ফার্মগুলোর অদক্ষতা রয়েছে। নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য অডিট ফার্মগুলোর সার্টিফিকেট পেতে ০৬ থেকে ১২ মাস সময় লেগে যায়। ফলে ক্যাশফ্লোতে বেশ সমস্যা দেখা দেয়, টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে। এক্ষেত্রে অডিট ফার্মগুলো অনেক ক্ষেত্রেই তাদের শিক্ষানবিশ ছেলেমেয়েদের অডিটের কাজে ব্যবহার করে থাকে, যাদের বিচার-বিবেচনা ও দক্ষতার অভাব থাকে। আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে অডিট সার্টিফিকেট দেওয়ার বিধান থাকলেও তা কখনো মানা হয় না। রপ্তানি শিল্পের গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানিকারকদের সহযোগিতার জন্য পদ্ধতি সহজ করা অত্যন্ত জরুরি। অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাদ দিয়ে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব জটিলতা দূর করতে হবে।