Home বাংলা নিউজ ‘লিড টাইম’ বাড়ছে পোশাকশিল্পে

‘লিড টাইম’ বাড়ছে পোশাকশিল্পে

দেশের বেশির ভাগ বৈদেশিক আয়ের অন্যতম খাত তৈরি পোশাক শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার বা দুই লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার আয় আসে প্রতিবছর। এ ছাড়া ৪০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু সম্প্রতি লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) এবং বন্দর থেকে পণ্য খালাসে জটিলতায় প্রতিযোগী দেশ থেকে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় অবস্থান থেকেও কক্ষচ্যুত হয়েছে।খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য অবকাঠামো সমস্যার পাশাপাশি কাস্টমস-বন্দর জটিলতায় অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে দেশের পোশাকশিল্প। প্রতিযোগিতায় এগোতে হলে লিড টাইম কমিয়ে আনা জরুরি। এ জন্য কাস্টমস এবং বন্দর জটিলতা দূর করে দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উদ্যোক্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, গত কোরবানির ঈদের আগে একটি পোশাক তৈরির মেশিন আনা হয় চীন থেকে। নিয়ম অনুযায়ী বস্ত্র অধিদপ্তর থেকে প্রত্যয়নপত্র নিলে মেশিন ছাড় করবে কাস্টমস। কিন্তু ওই অধিদপ্তরে গেলে কর্মকর্তারা জানান, আগের আইন গত বাজেটে পরিবর্তন হয়েছে। তাই ছাড়পত্র নিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। এদিকে এনবিআরের ভ্যাট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, আপনাদের প্রতিষ্ঠান নতুন, এখনো চালু করেন নাই। দুই বছরের ভ্যাট বকেয়া, ছাড়পত্র নিতে হলে সেটা দিতে হবে। তখন উদ্যোক্তা জানান, আমি কারখানাই শুরু করতে পারি নাই। এখনই কিভাবে ভ্যাট হিসাব করছেন। এর পরও নয়-ছয় করে এক বছরের ভ্যাট দিতে হয়েছে। একই সঙ্গে বিবিধ খরচ। ফলে বন্দর থেকে ওই মেশিন ছাড়াতে সময় লাগে এক মাস। এর মধ্যে বন্দরে ডেমারেজ দিতে হয় এক মাসের। এভাবে কাস্টমস এবং ভ্যাট কর্মকর্তাদের নাজেহালের শিকার হতে হয় উদ্যোক্তাদের। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘কাস্টমস হয়রানি এবং লজিস্টিক সুবিধার অভাবে দেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরগুলোতে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, ক্লিয়ারিং ও পেমেন্ট ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, বন্দরের কাজের পদ্ধতি সহজীকরণ করা না গেলে দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতসহ অন্যান্য রপ্তানি খাতকে বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়তে হবে। বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, দেশের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একক সংস্থা গঠন, বন্দরগুলোতে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার অটোমেশন, বন্দরের সঙ্গে সড়ক, রেল ও নদীপথের যোগাযোগ উন্নয়নসহ উন্নত দেশগুলোর মতো অবকাঠামো উন্নয়নসহ কর্মকর্তাদের মানসিক জটিলতা দূর করতে হবে। জরিপে দেখা যায়, কভিড মহামারির কারণে ৪২ শতাংশ মনে করেন, কারখানা থেকে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ দিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয় এবং ৬২ শতাংশ উদ্যোক্তা সমুদ্রবন্দর থেকে কারখানা পর্যন্ত পণ্য আমদানিতে ১৫ দিনের বেশি সময় লেগেছে বলে মত প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বন্দরগুলোতে কনটেইনারজট, পোর্ট ডেমারেজ চার্জ, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে দীর্ঘসূত্রতা, অপর্যাপ্ত বন্দর অবকাঠামো প্রভৃতি বিষয়গুলো ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলে তাঁরা জানান। এর ফলে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বেশ বেড়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএ পরিচালক শহীদুল হক মুকুল বলেন, ‘বন্ড, কাস্টমস ভ্যাট ও বন্দরকে সমন্বয় করা না গেলে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে আরো পিছিয়ে পড়তে হবে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের মাথায় রাখতে হবে রপ্তানিকারকদের সমস্যা কী। অন্যথায় চীন থেকে বের হয়ে আসা বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য বিনিয়োগ হারাতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here