আর কিছুদিন পরেই আগমন ঘটবে শীতের। করোনায় লোকসানের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কেরানীগঞ্জের গার্মেন্ট পল্লীর ব্যবসায়ীরা। তাই শীত মৌসুম সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। করোনার লোকসান কাটিয়ে ভালো ব্যবসা করে আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন- এমনটাই আশা করছেন দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীর ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীর কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানাগুলোতে চলছে শীতের পোশাক তৈরির চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সব বয়সের মানুষের জন্য নানা ধরনের পোশাক তৈরিতে দিন-রাত কাজ করছেন এখানকার কারিগররা। ছেলেদের জ্যাকেট, কোর্ট, মেয়েদের সোয়েটার, কার্ডিগান, বাচ্চাদের বাহারি রঙের শীতের পোশাকসহ সবই তৈরি হচ্ছে এখানে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ জামা সেলাই করছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, কখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হচ্ছে সেই খবর নেই তাঁদের। মো. আমান উল্লা নামের এক কারখানা মালিক বলেন, ‘একটা সিজন কাজ করতে পারি নাই। ধার-দেনা করে সংসার ও কারিগর চালাইতে হইছে। ইনশাআল্লাহ শীতের কাম কইরা সব ধার-দেনা শোধ কইরা দিমু।’ মো. শফিক নামে এক কারিগর বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বসা ছিলাম। কাজ করতে পারি নাই। চলতে-খাইতে কষ্ট হইছে। আল্লাহ আমাগো মুখের দিকে তাকাইছে। এখন দিন-রাতে ওভারটাইম করতাছি।’ কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীর আগানগর ও শুভাঢ্যায় প্রায় ছয় হাজার শোরুম রয়েছে। এসব শোরুম থেকে পাইকারি পোশাক কিনতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন। শোরুমগুলোতেও ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে শীতের বাহারি পোশাক। প্রতিটি শোরুমে ঝুলছে নানা রঙের নানা সাইজের শীতের পোশাক। দামে কম সেই সঙ্গে গুণগত মান অনেক ভালো এখানকার শীতের পোশাকের। বাজার ধরার জন্য সব ব্যবসায়ী শীতের পোশাক সংগ্রহ করছেন। দেশীয় তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বিদেশি পোশাকও সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানেই কিছু কিছু কাস্টমারের আনাগোনা চোখে পড়ছে। নবরাজ প্যান্ট হাউসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনার কারণে এবার পণ্য কিনতে চায়না যেতে পারিনি। মোবাইলে অর্ডার দিয়ে চায়না থেকে পণ্য আনতে হচ্ছে। ফ্লাইট জটিলতার কারণে প্রতিটি পণ্যে বেশি ট্যাক্স দিয়ে আনতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু পণ্য হাতে পেয়েছি। মার্কেটে ক্রেতার সমাগমও আছে। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ চাইলে করোনার ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব। টপ কালেকশনের মালিক মো. সীমান্ত হোসেন বলেন, রোজার মৌসুমে ব্যবসা করতে না পারলেও শীত মৌসুমে ব্যবসা করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কারখানায় বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি করে রেখেছি। আলহামদুলিল্লাহ ইতিমধ্যে কিছু কিছু পাইকার আসতে শুরু করেছে। আশা করছি, ভালো ব্যবসা করতে পারব। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মুসলিম ঢালী বলেন, আমাদের গার্মেন্ট পল্লী রোজার ঈদের পরপরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে শীত মৌসুমের বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের পোশাক এসেছে কম। তাই আমাদের কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাকের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। গত এক সপ্তাহে যে বেচাকেনা হয়েছে, এমন চলতে থাকলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লীর জন্য আমি ভালো কিছুই দেখছি। গত রমজানে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো পোষানো যাবে না। তবে কিছুটা কাভার করা সম্ভব হবে। ক্ষতি পোষাতে হলে আগামী রমজানের আগে করোনামুক্ত বাংলাদেশ দরকার।