করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতেও রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বড় এই তিন বাজারে তুলনামূলক ভালো করলেও অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি হাবুডুবু খাচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) নতুন বাজারে রপ্তানি হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ডলারের পোশাক। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কম। নতুন বাজারের মধ্যে জাপান, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত ও মেক্সিকোতে রপ্তানি কমেছে। নতুন বাজারে শুধু রপ্তানিই কমেনি, মোট পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের হিস্যাও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। তার মধ্যে নতুন বাজারে গেছে ১৫ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে মোট পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের হিস্যা ছিল ১৭ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বিপর্যস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন বাজার হিসেবে খ্যাত ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চিলিতেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। নতুন বাজারে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বাজারটিতে রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর কানাডায় গত জুলাই থেকে অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৯ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ইইউতে রপ্তানি হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলারের পোশাক। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ২২ শতাংশ কম। যদিও জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে বাজারটিতে রপ্তানি কমেছিল ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সেই হিসেবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ইইউতে পোশাক রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। করোনার প্রভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল ও কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে পণ্য রপ্তানিতে ধস নামে। ওই মাসে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। পরের মাসে সেটি বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ডলার। জুনে রপ্তানি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায়। সেই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২২৪ কোটি ডলারের পোশাক। তাতে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। নতুন বাজারে গত অর্থবছর ৪৭৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তখন রপ্তানি কমেছিল ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তার মধ্যে ব্রাজিলে ৩৩, চীনে ৩৪, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৬, মেক্সিকোতে ১৮ ও ভারতে পোশাক রপ্তানি ১৫ শতাংশ কমেছিল। দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ৯৬ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ কোটি, রাশিয়ায় ৪৪ কোটি ও ভারতে ৪২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে নতুন বাজারের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ কম ছিল। ব্যতিক্রম হচ্ছে ব্রাজিল, চীন ও ভারত। তারপরও চলতি অর্থবছরের চার মাসে সামগ্রিকভাবে নতুন বাজারের পোশাক রপ্তানি কেন ঘুরে দাঁড়াতে পারল না, সেটি আমাদের কাছেও বোধগম্য নয়।
মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি, বিকেএমইএ
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জাপানে ৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। আগের বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে জাপানে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬ কোটি ডলারের পোশাক। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চীনে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পোশাক। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য। সেই হিসেবে গত জুলাই থেকে অক্টোবরে চীনে রপ্তানি কমেছে ৩১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধায় ভারতে কয়েক বছর ধরে পোশাক রপ্তানি বাড়ছিল। কিন্তু সেখানেও ২৭ শতাংশের মতো রপ্তানি কমেছে। দেশটিতে গত জুলাই থেকে অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ডলারের পোশাক। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২১ কোটি ডলারের। ব্রাজিলে রপ্তানি কমেছে ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক। জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে নতুন বাজারের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ কম ছিল। ব্যতিক্রম হচ্ছে ব্রাজিল, চীন ও ভারত। তারপরও চলতি অর্থবছরের চার মাসে সামগ্রিকভাবে নতুন বাজারের পোশাক রপ্তানি কেন ঘুরে দাঁড়াতে পারল না, সেটি আমাদের কাছেও বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।’