তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন এ খাতে শ্রমিক সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ। এর মধ্যে নারী শ্রমিক ৮০ শতাংশ। তবে এমন দাবির সঙ্গে বর্তমানে বাস্তবতার মিল দেখা যাচ্ছে না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট মাঠ পর্যায়ে তথ্য নিয়ে দেখেছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের হার অনেক কম। বর্তমানে এ খাতে নারী শ্রমিকের হার ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর পুরুষ শ্রমিকের হার প্রায় ৪২ শতাংশ। গত দুই বছর ধরে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থান চিহ্নিত করা এবং ডিজিটাল উপায়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজ করে আসছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট, যা ম্যাপড ইন বাংলাদেশ নামে পরিচিত। ইতিমধ্যে গার্মেন্টস শিল্প অধ্যুষিত ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কারখানার অবস্থানসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে ৩ হাজার ২২৩টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। ঐ তথ্যে তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার কমে আসার এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিক ১৪ লাখ ৯৪ হাজার আর পুরুষ শ্রমিক ১০ লাখ ৬৮ হাজারের কিছু বেশি। সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট ম্যাপড ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হুসেন ইত্তেফাককে বলেন, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আলোচ্য চিত্র উঠে এসেছে। এতে আমাদের নিজস্ব কোনো মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। ম্যাপড ইন বাংলাদেশের এমন তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেননি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, এই খাতে আগে যে বেশি হারে (৮০ শতাংশ) নারী শ্রমিক রয়েছে বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, তা কোনো জরিপ কিংবা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ছিল না। বর্তমানের হিসাব অনুযায়ী নারী শ্রমিকের হার কম বলে যে দেখা যাচ্ছে, এতে নারী শ্রমিকের হার কমে যাচ্ছে বলে কোনো উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ নেই। অবশ্য তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, এক সময় এ খাতে নারী শ্রমিকের হার ৮০ শতাংশের মতোই ছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো ৭০ শতাংশের মতো হবে বলে ইত্তেফাককে জানান তিনি। গত প্রায় এক দশক ধরে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনগুলো দাবি করে আসছে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে শ্রমিক সংখ্যা চার মিলিয়নের (৪০ লাখ) ওপরে। কিন্তু ম্যাপড ইন বাংলাদেশের হিসাবে দেখা গেছে, ৩ হাজার ২২৩টি কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা ২৫ লাখ ৬২ হাজারের মতো। আরো যেসব এলাকার শিল্প কারখানা অন্তর্ভুক্ত করার বাকি রয়েছে, তা হিসাবে আনলে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়াবে না। অথচ গত এক দশকে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সেই হিসেবে পোশাক কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা আগের চেয়েও বাড়ার কথা। ম্যাপড ইন বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, তথ্য পাওয়া ৩ হাজার ২২৩টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৮৮৬টি। বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ৫১২টি। আর উভয় সংগঠনের সদস্য ২৫১টি। এছাড়া উভয় সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কারখানার ৫৭৪টি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে সদস্যবহির্ভূত কারখানার প্রায় সবাই সাব কন্ট্রাক্টটিংয়ের (ঠিকাভিত্তিতে) মাধ্যমে কাজ করার কথা। অন্যদিকে সদস্য কারখানাও সাব কন্ট্রাক্টিংয়ে কাজ করে। তবে এই সংখ্যা কত, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই কারো কাছেই।