করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনে রয়েছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। সে কারণে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন দেশগুলোর ক্রেতারা। দেশ দুটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপজুড়েই করোনা তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সে কারণে লম্বা সময়ের জন্য লকডাউনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে অনেক দেশ। তেমন কিছু হলে পোশাক রপ্তানিতে বড় বিপর্যয় নামবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী বছরে ২ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৭০২ কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৮৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে জার্মানিতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাজ্যে। তাতে জার্মানিতে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, করোনা সংক্রমণ রোধে জার্মানিতে মধ্য ডিসেম্বর থেকে লকডাউন চলছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন দোকান ও পরিষেবা বন্ধ করেছে সরকার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাসায় বসে অফিস করছেন। এদিকে করোনার নতুন ধরন বা স্ট্রেইন জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে চলমান লকডাউন আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে। সম্প্রতি লকডাউনে অনুমোদিত কারণ ছাড়া ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জানতে চাইলে ফতুল্লা অ্যাপারেলসের স্বত্বাধিকারী ফজলে শামীম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপের এক ক্রেতা ৫ হাজার পিস নিট জ্যাকেটের প্রাথমিক ক্রয়াদেশ দিয়েছিল। হঠাৎ করে গত শনিবার ক্রয়াদেশটি ২ হাজার পিসে নামিয়ে আনার জন্য মেইল করেছে। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলো তিন–চার মাসের লকডাউনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। পরিস্থিতি বুঝতে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানই ক্রয়াদেশ দিতে সময় নিচ্ছেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ে ক্রয়াদেশ বাতিল ও কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে পোশাক রপ্তানিতে ধস নামে। ওই মাসে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের মাসে হয় ১২৩ কোটি ডলারের। তাতে গত অর্থবছর শেষে পোশাক রপ্তানি কমে যায় ১৮ শতাংশে। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলার। চলতি ২০২০–২১ অর্থবছর ঘুরে দাঁড়াতে থাকে রপ্তানি। মাঝে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আবার ধস নামে। শেষ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপের ক্রেতাদের কাছ থেকে ঘরে পরার পোশাকের ক্রয়াদেশ এলেও ঘরের বাইরে পরার পোশাকের ক্রয়াদেশের অবস্থা করুণ। ইউরোপের দেশগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউনে গেলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।