২০ এপ্রিল তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা ফারুক হাসান। যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শক্তিশালী বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। সভাপতি নির্বাচিত হওয়া ফারুক হাসান সম্প্রতি কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে। জানিয়েছেন সামনের দিনগুলোর জন্য তার পরিকল্পনার কথা। ফারুক হাসান বলেন, সম্মিলিত পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করলেও এখন আমার প্রথম কাজ হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা করা। সভাপতির দায়িত্বটা এমন এক সময় কাঁধে আসলো, যখন কিনা করোনা অস্বাভাবিক বেড়েছে, সরকারও লকডাউন জারি করেছে। তিনি মনে করেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় ঢেউ আরও বড় বিপদ সংকেত দিচ্ছে। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। এই সময়ে গার্মেন্টস মালিকদের বেশকিছু সহায়তা দরকার বলে মনে করেন ফারুক হাসান। তিনি উল্লেখ করেন, গার্মেন্টস খাতের জন্য নীতি সহায়তা বাস্তবায়ন করা হবে আমার নেতৃত্বাধীন পর্ষদের প্রথম কাজ। প্রসঙ্গত, সাত বছর পর তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচন হয়েছে। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার ফারুক হাসান। জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান জানান, করোনার মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। সম্মিলিত পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি সদস্যের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে ফারুক হাসান বলেন, ৪ এপ্রিলের নির্বাচনে যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং যারা দেননি দুই পক্ষেরই নেতা হিসেবে আগামীর পথটুকু চলতে চাই। পোশাক শিল্পে মহামারির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং এই শিল্পকে সক্রিয় রাখা জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচনের আগে বেশ কিছু অঙ্গীকার করেছিলাম। এর মধ্যে ছিল ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বাড়ানো ও কিস্তির আকার ছোট করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া; স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ; কোভিড-১৯ সৃষ্ট ক্ষতিগুলো চিহ্নিত করে তা সামলে ওঠা ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ফারুক হাসান আরও বলেন, সর্বোচ্চ রফতানির পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক রফতানি সর্বনিন্ম ৫ মিলিয়ন ডলার থেকে উন্নীত করে ১০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সরকারের রিফাইনান্সিং স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পের উপযুক্ত সংজ্ঞায়ন ও অন্তর্ভুক্তকরণ করার চেষ্টাও করা হবে। যাতে এ শিল্প ৪-৫ শতাংশ হারে ঋণ নিতে পারে। তার কর্মপরিকল্পনায় আরও আছে- ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পোশাক শিল্পের জন্য সুদের হার ও ব্যাংকিং চার্জ কমাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা চাওয়া, মিরসরাই গার্মেন্টস ভিলেজ ও ইকোনমিক জোন গুলোতে অবকাঠামো নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া, মিরসরাই গার্মেন্টস শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো নির্মাণে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া ইত্যাদি। শ্রম আইন সংস্কার করে প্রতি ৫ বছরে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণের বাধ্যবাধকতার নীতিমালার সংস্কারও চান ফারুক হাসান। জাতীয় পর্যায়ে পোশাক খাতের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ফারুক হাসান বলেন, সামনে রোজা ও ঈদ। এর আগে কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হবে। সরকার যেন গতবারের মতো তিন-চার মাসের বেতন পরিশোধের প্রণোদনা ঘোষণা করে সেই আহ্বান জানাব। উল্লেখ্য, বিজিএমইএ নির্বাচন রবিবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর রেডিসন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে রাত ১টায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাত আনোয়ার জানান, ৩৫ জন পরিচালক পদের মধ্যে ফারুক হাসানের সম্মিলিত পরিষদ ২৪ পদে বিজয়ী হয়েছে। এ বি এম সামসুদ্দিন ও ড. রুবানা হকের নেতৃত্বাধীন ফোরামের ১১ পরিচালক বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে ঢাকায় এক হাজার ৮৫৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এক হাজার ৬০৪ জন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নির্বাচন কেন্দ্রে ৪৬১ ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৯২ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট এক হাজার ৯৯৬টি ভোট কাস্ট হয়েছে। যা মোট ভোটারের ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২০৪ ভোট পেয়েছেন ফারুক হাসান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ১৫৭টি ভোট পেয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক।