Home বাংলা নিউজ পোশাক খাত পুনরুদ্ধারে অংশীজনের আরও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন

পোশাক খাত পুনরুদ্ধারে অংশীজনের আরও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন

পোশাক খাতের ভ্যালু চেইনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে মধ্যমেয়াদী পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছিল করোনার কারণে দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যহত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাহিদা কমেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্টের সময়কালে বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে। শুধুমাত্র জাতীয়-স্তরের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই মধ্যমেয়াদী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ অনেক সরবরাহকারী দেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘ভ্যালু-চেইন-ভিত্তিক সমাধান’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এগিয়ে আসতে হবে পোশাকের ব্যান্ডগুলোকেও। এই পর্যবেক্ষণগুলো ‘বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার: ভ্যালু-চেইন-ভিত্তিক সমাধান কি সম্ভব?’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সংলাপে উঠে আসে। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাতে ভার্চুয়ালি এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), ইন্সটিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলঙ্কা (আইপিএস) এবং ৫২টি চিন্তক প্রতিষ্ঠানের আন্তির্জাতিক পর্যায়ের নেটওয়ার্ক সাউদার্ন ভয়েজ’র সহযোগিতায় এই সংলাপটি আয়োজন করা হয়। বুধবার (২১ এপ্রিল) সিপিডির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘সিপিডি এবং আইপিএস সম্প্রতি স্থানীয় পোশাকের পুনরুদ্ধার বিষয়ে একটি ভ্যালু-চেইন ভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করার জন্য যৌথভাবে সাউদার্ন ভয়েজের সহযোগিতায় একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে।’ মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতে ভ্যালু-চেইনের যে ক্ষতি হয়েছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গবেষণাটি সরবরাহকারী দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলায় সহায়তা করবে।’ সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও আইপিএসের অর্থনীতিবিদ কিথমিনা হিউজ জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বড় দেশগুলো এই মহামারির সময়ে সীমাবদ্ধ সংখ্যক সোর্সিং দেশগুলোতে বেশি গিয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ক্রেতাদের কাছে ঠেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। মাহামারির সময়কালে (জানুয়ারি থেকে জুন ২০২০) ক্রেতারা রফতানি আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি বড় সরবরাহকারী দেশকে বঞ্চিত করেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সরবরাহকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্ডার পুনরায় বিতরণ করা যেতে পারে, যদি কোভিড পূর্ব সময়ের রফতানির আদেশের অংশ বজায় রাখা সম্ভব হয়। সমীক্ষায় প্রস্তাব করা হয়েছে যে, যেকোনো বড় বৈশ্বিক সংকটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে সংকট পূর্ব পর্যায়ের রফতানি আদেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি পুনঃবিতরণ পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষত যেসব দেশ আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। শ্রীলঙ্কার স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সফরমেশনের পরিচালক হুসনি সালিহ বলেন, ‘ভ্যালু-চেইনের মান বেড়ে যায় যদি সকল অংশীজন একসঙ্গে কাজ করে। বিশেষ করে এরকম সংকট পরিস্থিতিতে। বিদ্যমান ভ্যালু-চেইনের মধ্যে সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।’ বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সজেঞ্জের সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘চলমান সংকট চলাকালীন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে দায়বদ্ধ ব্যবসায়িক আচরণের অভাব রয়েছে। ব্র্যান্ডগুলো তাদের সরবরাহকারীদের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করা উচিত এবং দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করা উচিত।’ সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পোশাক খাতের ভ্যালু-চেইনের সকল অংশীজনরা অতিমারিতে প্রভাবিত হয়েছিল। তাই এই গবেষণার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতকে টেকসই করে সমধানের দিকে এগিয়ে যেতে সকল অংশীজনদের কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।’ সিপিডি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘আইএলও সরবরাহকারী দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রয়কারী দেশগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে একটি উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সরকার, বিনিয়োগকারী এবং শ্রমিকসহ ত্রিপক্ষীয় সংলাপ করা উচিত। যাতে কেবল কোভিড সংকটের তাৎক্ষণিক প্রভাব নয়, দীর্ঘমেয়াদী সংকট সমাধানের জন্য বেকার বিমা ব্যবস্থার পারস্পরিক সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here