বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির নতুন দিগন্ত হতে পারে ইউরেশিয়ার বাজার। এই বাজারে রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ। জানা গেছে- ইউরেশিয়াভুক্ত পাঁচটি দেশের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, আলু ও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং সমস্যা ও মুদ্রা বিনিময় জটিলতায় এই রপ্তানি সুবিধার সুফল মিলছে না। যদিও রপ্তানি বাড়াতে দুই বছর আগে পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার অর্থনৈতিক জোট ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিশন বা ইইসির সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, ইউরেশীয় দেশগুলোতে পণ্যমানের গুণগত চাহিদা এখনো ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারের মতো উচ্চপর্যায়ের নয়। বাংলাদেশ বিদ্যমান গুণগত মান নিয়েই অনায়াসে ইউরেশীয় বাজারে প্রবেশের সক্ষমতা রাখে। এসব দেশ বর্তমানে যেসব দেশ থেকে যে মূল্যে পণ্য আমদানি করে, তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি সম্ভব। ফলে ইউরেশীয় বাজারই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন গন্তব্য। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যেসব বাংলাদেশি পণ্যের তেমন একটা চাহিদা নেই, সেসব পণ্যের চাহিদাও ইউরেশীয় বাজারে রয়েছে। ফলে ওই দেশগুলো শুধু বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার হিসেবে নয়, নতুন পণ্য বাজারজাতকরণের সুযোগ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আদলে রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তানের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন (ইইইউ)। এই ইইইউর কার্যক্রম পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষই হচ্ছে ইইসি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এই দেশগুলো বর্তমানে কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্টস স্টেটসের সদস্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১-৯৩ সময়ে যে ১১টি দেশ হয়, এগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্টস স্টেটস (সিআইএস)। ইইইউভুক্ত ৫টি দেশ সিআইএসভুক্ত দেশও। ইউরেশিয়ার এই দেশগুলোতে কাস্টমস সীমান্ত নেই। ফলে বাধাহীনভাবে শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য যাতায়াত করতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও দেশগুলো একই শুল্ক হার এবং অভিন্ন বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করে থাকে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইউরেশিয়ার বাজারে রপ্তানি বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা।এ প্রসঙ্গে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বা সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- ইউরেশিয়ার বাজারে রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও ব্যাংকিং সমস্যা ও মুদ্রা বিনিময় জটিলতায় সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ইইসির সঙ্গে দুই বছর আগে চুক্তি হলেও, এরপরের অগ্রগতি নেই। রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে হলে ব্যাংকিং সমস্যার সমাধান করতে হবে। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন বলছি, কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। ব্যাংক লেনদেন চালু হলে তৃতীয় দেশ অর্থাৎ তুরস্ক, পোল্যান্ডের মতো দেশের ওপর আর নির্ভর করতে হবে না বলেও মত দেন এফবিসিসিআইর এই সহসভাপতি।
এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন- ইউরেশিয়ার বাজারে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকার পরও, সুযোগ নিতে পারছি না। শুধু ব্যাংকিং লেনদেনের ঝুঁকির কারণে। আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেও পারিনি। এখন সরকার টু সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ের চেষ্টা লাগবে। তবেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। সিআইএস-বিসিসিআই জানায়, রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ শুল্ক। শুল্কায়নের জটিলতাও আছে। তার চেয়েও বড় কথা দেশগুলোর সঙ্গে আধুনিক ব্যাংক যোগাযোগ নেই বাংলাদেশের। আবার বাণিজ্য করতে হয় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে এবং মান্ধাতা আমলের টেলিগ্রাফিক লেনদেন (টিটি) পদ্ধতিতে। এ ছাড়া ব্যাংক যোগাযোগের বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েও আবার পিছিয়ে গেছে উভয় দেশ। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল যে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও রাশিয়ার স্পুতনিক ব্যাংক উভয় দেশের ব্যাংক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এবং উভয় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে ঠিক করবে ব্যাংক যোগাযোগ কীভাবে হবে। সে ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি নেই।