আগেরবার শুধু বিকেএমইএ উদ্যোগ নিলেও এবার বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথভাবে কমিটি করেছে।
নিজেদের মধ্যে অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ গত ১ জানুয়ারি পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। গঠন করে ১৫ সদস্যের একটি যৌথ কমিটি। অবশ্য গত এক মাসেও সেই কমিটি কোনো সভা করতে পারেনি। তবে একটি প্রাথমিক নীতিমালা করেছে এ যৌথ কমিটি। মূলত কারখানার প্রতি মিনিটের উৎপাদন খরচ হিসাব করে কাজটি করতে চায় তারা।
অবশ্য পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেছেন, পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করাটা জটিল কোনো ব্যাপার নয়। যৌথ কমিটি যে পথে হাঁটছে তাতে পুরো বিষয়টি ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কারণ, প্রতি মিনিটের খরচ একেক কারখানায় একেক রকম। ফলে এ পদ্ধতিতে পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ সম্ভব নয়।বিজ্ঞাপন
দেরিতে হলেও পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এটি খুবই জরুরি ছিল। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় কয়েক শ কোটি ডলার বাড়বে। তবে বিষয়টি কার্যকর করা একটি চ্যালেঞ্জ।
ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ
যৌথ কমিটির নেতৃত্বে আছেন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান। কমিটির কোনো বৈঠক না হলেও তিনি দাবি করেন, ‘পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণের জন্য গত এক মাসে একটি প্রাথমিক নীতিমালা করা হয়েছে। মূলত কারখানার প্রতি মিনিটের উৎপাদন খরচ হিসাব করে কাজটি করতে চাচ্ছি আমরা। এটিই সর্বশেষ ও আধুনিক পদ্ধতি। এটি চূড়ান্ত করার জন্য ১০০-১৫০টি কারখানা মালিকের সঙ্গে বৈঠক করব।’ তিনি জানান, প্রাথমিক কাজ শেষ। চলতি সপ্তাহেই যৌথ কমিটির প্রথম সভা হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিক নীতিমালায় শুরুতে সাধারণ ছোট ও মাঝারি, কমপ্লায়েন্ট ও পরিবেশবান্ধব—এই তিন ধরনের পোশাক কারখানার প্রতি মিনিটের উৎপাদন খরচ বের করা হবে। নির্ধারণ করা হবে শ্রমিকের মজুরি-ভাতা, গ্যাস-বিদ্যুতের বিলসহ অন্যান্য ব্যয় হিসাব করে প্রতি মিনিটের উৎপাদন খরচ। তারপর কোন পোশাক তৈরিতে কত সময় লাগে সেটি বের করে ন্যূনতম খরচ বের করা হবে। এর সঙ্গে সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের মূল্য যোগ হবে। পুরো বিষয়টি প্রতিটি ক্রয়াদেশের বিপরীতে ইউডি নেওয়ার সময় যাচাই-বাছাই করা হবে।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেরিতে হলেও পোশাকের ন্যূনতম মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এটি খুবই জরুরি ছিল। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় কয়েক শ কোটি ডলার বাড়বে। তবে বিষয়টি কার্যকর করা একটি চ্যালেঞ্জ। তাঁর মতে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি যেসব পোশাক রপ্তানি হয়, তার মধ্যে কয়েকটি পোশাকের দাম বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। তার মধ্যে ট্রাউজার ১ হাজার ৬৮ , টি–শার্ট ও নিট শার্ট ৭২৪, সোয়েটার ৪০৫, শার্ট ২০৫ এবং অন্তর্বাস ১৭৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে।
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের মূল্য নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। অনেক সময় লোকসান কমানোর জন্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে ক্রয়াদেশ নেন তাঁরা। এ জন্য অনেকেই ন্যায্য দাম পাচ্ছিলেন না।
অবশ্য দেড় দশক আগে একবার পোশাকের ন্যূনতম দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিকেএমইএর নেতারা। টি-শার্ট, পলো শার্টসহ কয়েকটি ধরনের পোশাকের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেওয়া সংগত হবে না, এমন যুক্তি দেখিয়ে তখন বিজিএমইএর শীর্ষ নেতারা অনাগ্রহ দেখান। পুরো উদ্যোগটি ভেস্তে যায় তখন।
বর্তমান উদ্যোগ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উদ্যোক্তা বলেন, কমপক্ষে ৪০ ধরনের কারখানা রয়েছে। ফলে তিনটি ক্যাটাগরির কারখানার প্রতি মিনিটের খরচ নির্ধারণ করলে কাজ হবে না। সেটি করলে আসলে পোশাকের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি উদ্যোক্তার হাতেই রয়ে যাবে। যৌথ কমিটি যে পথে হাঁটছে, তাতে মনে হচ্ছে উদ্যোগটি মাঠে মারা যাবে।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘তিন মাসে না পারলেও ছয় মাসের মধ্যে কাজটি আমরা করতে চাই। প্রতি মিনিটের উৎপাদন খরচের পাশাপাশি কয়েকটি জনপ্রিয় পোশাকের দাম নির্ধারণের বিষয়টি চিন্তাভাবনায় আছে। শেষ পর্যন্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে উভয় সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের মতামত নেওয়া হবে। তা ছাড়া যেহেতু আমরা বিষয়টি নতুন করে করছি, ফলে ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করারও সুযোগ থাকবে।’