Home বাংলা নিউজ জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশ

জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশ

গত জানুয়ারিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে জানা গেছে, জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে চার দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত বছর একই মাসে রপ্তানি হয়েছিল চার দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।

পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে তিন দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাটের মতো অন্যান্য প্রচলিত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

জানুয়ারির রপ্তানি আয়ের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রপ্তানি আয় প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৮ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

তৈরি পোশাক ছাড়াও জুলাই থেকে জানুয়ারিতে কিছু পণ্য ভালো পরিমাণে রপ্তানি হয়েছে।

যেমন, হিমায়িত মাছ রপ্তানি বছরে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৮৩ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য বলছে, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কৃষিপণ্য রপ্তানি ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৭৩ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ওষুধ রপ্তানি ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ১৩২ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ১৮১ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে ৬৬৯ দশমিক শূন্য তিন মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বাইসাইকেল রপ্তানি ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৩ দশমিক শূন্য চার মিলিয়ন ডলার। চামড়া-বহির্ভূত জুতা রপ্তানি ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩১৮ দশমিক শূন্য নয় মিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য বলছে—হোম টেক্সটাইল রপ্তানি ছয় দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে ৪৯৩ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার ও বিশেষায়িত টেক্সটাইল রপ্তানি ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ২২৯ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

কৃত্রিম ফিলামেন্ট রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়ে ২৩১ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার এবং তুলা ও তুলা পণ্য রপ্তানি ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ৩৬৯ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

এ ছাড়াও, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত হস্তশিল্প রপ্তানি ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে ২৩ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সংকট উপেক্ষা করে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’

তিনি আশা করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি লাভবান হতে পারে।

গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে কার্যকর শুল্কের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন।

ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশও লাভবান হবে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মেক্সিকো প্রধান পোশাক উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।’

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর এই পরিবর্তন আনা হলো। পরে, চীনা নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) অধীনে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নেয় এবং মেক্সিকোয় বিনিয়োগ করতে ভিড় করে।

জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১২ শতাংশ বেড়ে মোট ২৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি অর্থবছরের পোশাক রপ্তানির সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনা করলে দেখা যায়, দুই বছর মেয়াদে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত চার মাসে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) টানা দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এক মাসে রপ্তানি আয় ছিল তিন দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি ছয় দশমিক ৬২ শতাংশ ও ওভেন পোশাক রপ্তানি চার দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান উৎসাহব্যঞ্জক হলেও এ শিল্প যেসব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে পণ্যের দাম ও উৎপাদন খরচের চাপ তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।

তার মতে, এই প্রবণতাকে প্রভাবিত করে এমন নির্দিষ্ট কারণগুলো শনাক্ত করতে আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যেমন, বাজার-নির্দিষ্ট কর্মক্ষমতা, পণ্য ও বাজার পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিষয়।

গত বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে পণ্যের দাম নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে।

মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, ‘চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।’

তবে ধারাবাহিক জ্বালানি সরবরাহ এবং স্থিতিশীল আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়াতে বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here