fbpx
Home Blog Page 13

পোশাক খাতের মালিকেরা বদলাবেন কবে

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বয়স ৪৫ বছর। ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস এই পোশাক খাত। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা। একক দেশ হিসেবে রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এত কিছু হলেও কেবল একটি জিনিসই বদলায়নি। আর তা হলো পোশাক মালিকদের আচরণ ও মনোভাব। এখনো পোশাক খাত পরিচালিত হয় সনাতন কায়দায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমনই কেবল শিখেছে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিকভাবে পোশাক মালিকেরা এখন এতটাই প্রভাবশালী, যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেদের স্বপক্ষে আনতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি শেখেনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এই সময়ের উপযোগী হতে হলে পোশাক খাত পরিচালনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য দরকার সংস্কার। কাজটি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। কারণ পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

সবার আগে মালিকদের সংস্কার

পোশাক খাতের মালিক সংগঠন দুটি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদে ছিলেন টানা ১৪ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে একবার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছিলেন, বাকি পাঁচবার সভাপতি হন সমঝোতার মাধ্যমে, চাপ দিয়ে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতেন তিনি, তাঁর ভাই শামীম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সেলিম ওসমানের প্রধান কাজই ছিল সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখা। তাঁদের দাপটে বিকেএমইএ ছিল একটি নামসর্বস্ব সংগঠন, শিল্পের স্বার্থে কোনো ভূমিকা ছিল না।

অন্যদিকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট পদ মানেই হচ্ছে সংসদ সদস্য বা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রবেশ করা। ফলে তাদেরও মূল কাজ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া। এখানে কাজ করে কেবল সরকার স্বার্থ ও মালিক স্বার্থ।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৩ জন পোশাক মালিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিজিএমইএ সংবর্ধনা দিয়েছিল নির্বাচিতদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। প্রয়াত আনিসুল হক পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিজিএমইএর শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে যায়। আনিসুল হক প্রয়াত হলে নতুন মেয়র হন বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরাই এ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন, সবাই মেয়র, সংসদ সদস্য অথবা দলে বড় পদ পেয়েছেন। যেমন ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের সভাপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা থেকে ও এর পরের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরের সভাপতি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি এখন পলাতক। এরপরের টানা চার বছরের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৫-০৬ সময়ের সভাপতি টিপু মুনশিও প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আরও অনেক আগে দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রীও ছিলেন রেদোয়ান আহমেদ। তারা বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।

বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মান্নান কচি নামে পরিচিত বিজিএমইএর এই নেতা গত প্রায় এক যুগ ধরেই কমিটিতে থাকতেন। সক্রিয় রাজনীতি করা মান্নান কচিকে কমিটিতে রাখাই হতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য।

গত ৪৫ বছরে বিজিএমইএ একটি কাজই ভালোভাবে শিখেছে, আর তা হলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আন্দোলন দমন, মজুরির দাবি যতটা কম রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা এবং সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন কিছু শ্রমিকনেতাও। যারা অর্থের বিনিময়ে মালিকদের সমর্থন করেন। বিশেষ করে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটেছে।

আসলে বিজিএমইএ বা ব্যবসায়ীদের মূল সংগঠন এফবিসিসিআই মূলত ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী শাখা। চেম্বারগুলোও তা–ই। সুতরাং সংস্কার করতে হবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোরই। তাহলেই ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার কমে আসবে।

আন্দোলন বনাম আলোচনা

মালিকপক্ষের অভিযোগ, যখনই পোশাক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয় না। অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়মতান্ত্রিক দর-কষাকষির ব্যবস্থা পোশাক খাতে নেই। ফলে আন্দোলনও আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘটে না।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পরে আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক খাতে শ্রমিক ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু রাখতে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শিথিল করা হয়। এখন পর্যন্ত এই শিল্পে নিবন্ধিত আছে ১৩০০ শ্রমিক ইউনিয়ন। বাকি ৭০ শতাংশ কারখানায় আছে অংশগ্রহণ কমিটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ইউনিয়ন বা কমিটির নেতৃত্বে আছেন মালিকপক্ষের অনুগতরা। আর যাঁরা অনুগত নন, প্রতিটি আন্দোলনের পরে তাঁরা নানা হয়রানির মুখে পড়েন।

শেখ হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে দাবি আদায়ে আরও অনেকের মতো আন্দোলনে নেমেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। তবে অন্য সবাই কাজে ফিরে গেলেও অস্থিরতা রয়ে গেছে পোশাক খাতে। কারণ, এখন আর গোয়েন্দা সংস্থা বা শিল্প পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থামাতে পারছে না মালিকপক্ষ। এ অবস্থায় দাবি দাওয়া জানানোর জন্য যেমন একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায় বের করতে হবে, তেমনি তৈরি করতে হবে দাবি পূরণের আলোচনার পথ। আর যেকোনো আন্দোলন হলেই বাইরের ষড়যন্ত্র, বিদেশি ইন্ধন-এসব বলাও বন্ধ করা প্রয়োজন।

এবারের যত দাবি দাওয়া

এবারে শ্রমিকদের দাবি অন্তত ২০ ধরনের। একাধিক কারখানার লিখিত দাবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, বার্ষিক প্রণোদনা ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু, ১৫ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি, টিফিন বিল ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা, মোট বেতনের সমান ঈদ বোনাস দেওয়া, শুক্রবার কাজ করলে দুপুরের খাবারের বিল বৃদ্ধি, উৎসব ছুটি ২০ দিন, অর্জিত ছুটি ৩০ দিন, চিকিৎসাকালীন ছুটি ২০ দিন করা এবং বেতন দিতে হবে মাস শেষে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে।

শ্রমিকদের বাকি দাবি হচ্ছে, একবার বিনা মূল্যে আল্ট্রাসনোগ্রামের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া, ডে কেয়ার সুবিধা বৃদ্ধি, মাসিককালীন সময়ে দুই দিন ছুটি মঞ্জুর, এটিএম বুথ স্থাপন, গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন সি প্রদান এবং চক্ষু পরীক্ষা ও সানগ্লাস প্রদান ইত্যাদি।

পোশাক খাতে ২০২৩ সালে ঘোষিত সর্বশেষ নিম্নতম মজুরির ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল২০ হাজার ৩৯৩ টাকা, আর মালিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল ১০ হাজার ৪০০ টাকা। মালিকদের প্রস্তাবে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামলে চার পোশাকশ্রমিক মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মালিকপক্ষ নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব দিলে পরে সেটিই চূড়ান্ত হয়। তারপরেও আন্দোলন চললে তা দমন করতে ৪৩টি মামলা এবং ১১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মজুরি নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এবার সরকার পতনের পরে মজুরি বাড়ানোর দাবি করছে না শ্রমিকপক্ষ। বরং তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছে।

মালিকেরা পেয়েছেন সবই

দেশে পোশাক খাতের জন্য প্রথম মজুরি বোর্ড হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, আর নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ৩০ বছর পরে সেই মজুরি বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ছিল ২২৩ কোটি ডলার। সেই আয় এখন ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই আয় বৃদ্ধির পেছনে সরকার ও আন্তর্জাতিক নীতি সহায়তার একটি বড় ভূমিকা আছে।

যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠার আগে গ্যাট আলোচনার সময় থেকেই মাল্টি ফাইবার অ্যাগ্রিমেন্টের (এমএফএন) আওতায় বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে কোটাসুবিধা পেয়েছে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে কোটা ব্যবস্থা উঠে গেলেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েনি বাংলাদেশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও একাধিক দেশ এখনো শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে।

অন্যদিকে ১৯৮২ সালের শিল্পনীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তখন রপ্তানিতে ডেডো বা ডিউটি ড্র ব্যাক ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির সময় শুল্ক দিলেও রপ্তানি করার পর তা ফেরত পেতেন। বিলম্ব, দুর্নীতি ও প্রক্রিয়াগত সমস্যা হওয়ায় এর পরিবর্তে বন্ড-সুবিধা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে পোশাকমালিকেরা বিনা শুল্কে পোশাক তৈরির সব ধরনের কাঁচামাল আমদানি করতে পারতেন।

১৯৮৬-৮৭ সময়ে সরকার চালু করে স্থানীয় ঋণপত্র বা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় আসার পরেই ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে হতো। পোশাক খাতের অগ্রগতির পেছনে এই দুই নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন গবেষকেরা। এরপরেও সরকার বিভিন্ন সময় নগদ সুবিধাসহ নানা ধরনের কর ছাড় দিয়েছে। আবার যেকোনো সংকটে পোশাকমালিকেরা সরকারের কাছে হাত পেতেছেন, সরকারও সব দাবি পূরণ করেছে।

শুধু নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও করতে হবে

পোশাকমালিকেরা কখনোই মানতে চান না যে ব্যবসা ভালো চলছে। পোশাকমালিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলেই তাঁরা বলেন, ব্যবসার অবস্থা খারাপ, অর্ডার কমে যাচ্ছে, ক্রেতারা কম দামে পোশাক কেনেন, উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে এবং এখানে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কম।

অন্যদিকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন এমন নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, পোশাক মালিকদের বিত্ত আর জীবনযাপন দেখলে মনে হয় না যে ব্যবসা খারাপ। ২০২২ সালেও ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা। সেই ডলারের দর এখন ১২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলার রপ্তানি আয়ে আগের চেয়ে তাঁরা বেশি পেয়েছেন ৩৬ টাকা। তা ছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়াও দরকার। সর্বনিম্ন মজুরি দিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে না। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে।

পোশাক খাতের জন্য আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ঝুট ব্যবসা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। পোশাকমালিকেরা অনেক কম দামে ঝুট কাপড় রাজনৈতিক মাস্তানদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সরকার বদল হলে কেবল নিয়ন্ত্রক বদল হয়। যেমন এত দিন এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে বিএনপির লোকজন।

বর্তমান আন্দোলনে পেছনে তাদেরও ইন্ধন আছে। পোশাক মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে ঝুট কাপড়ের ন্যায্য দাম পেলে সেই অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা যেত। তাঁরা তা করতেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। তবে অবশ্যই এর সমাধান দরকার। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের শাসন; যা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

RMG workers to get food ration in future

Secretary of the Ministry of Labor and Employment, AHM Shafiquzzaman, said that they are thinking about the system of giving ration to the workers after talking to the owners of the garment factories.

RMG workers to get food ration in future
Figure: File Photo

He said these things while talking to the media on Saturday

The labor secretary said, the issue of ration is a long-term process. However, for the time being, an initiative has been taken to provide products at an affordable price to the workers through the Trading Corporation of Bangladesh (TCB).

He also said that the labor intensive areas of the country such as Savar, Ashulia, Gazipur, Tongi and Narayanganj are working on how to increase the supply of goods by trucks at a fair price beyond the TCB card. In the meantime, we have discussed to the Commerce Ministry and I have sent a DO to the Commerce Secretary.

AHM Shafiiquzzaman said, we are trying to sell TCB products at affordable prices through Truck-sale in those areas, so that the workers benefitted. Meanwhile, the Labor Secretary also talked about providing low-cost and easy health care to the workers.

He said that the cost of treatment in government hospitals is already low. However, separate desks can be set up in government hospitals in labor-intensive areas, on the other hand, low-cost medical facilities can be arranged for workers through Memorandum of Understanding (MOU) with private hospitals or clinics in those areas.

গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কারখানার শ্রমিকরা। আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার পলমল গ্রুপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি দাবি জানিয়ে আসছিল। সকালে তারা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বাঘের বাজার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী উভয় লেন দখল করে রাখে। এতে মহাসড়কের ওই অংশ ব্যাপক যানজটের তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে।

অপরদিকে সকাল থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এ্যাসরোটেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা ন্যূনতম হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা ও টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ গ্রেড অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে।

শিল্প পুলিশের শ্রীপুর ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার এস এম আজিজুল হক বলেন, ‘দুটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা দুটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

পোশাক শিল্পে নতুন হুমকি অস্থিরতা

দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ও গত আড়াই মাস ধরে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলতি শরৎ ও শীতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাদেশ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

গত জুলাই থেকে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক্রেতারা সফর পিছিয়ে দিয়েছেন। অনেকে কারখানা পরিদর্শন বাতিল করেছেন। ফলে আসন্ন মৌসুমে কার্যাদেশ কমেছে।

গত জুলাই ও আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বরে ক্রিসমাসের সময় পশ্চিমের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির সেরা মৌসুমই নয়, আগামী শরৎ ও শীতের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার ব্যস্ততম মাস।

দুর্ভাগ্যবশত এমন সময়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতির হয়।

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করলে পোশাক তৈরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান।

নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কয়েকটি খাতের শ্রমিকদের কাছ থেকে নানা দাবি উঠতে শুরু করে।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় প্রায় ১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকে।

আশুলিয়া, জিরানী, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নামেন। কারো কারো বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও আগুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

এরপর মালিকরা অস্থিরতা এড়াতে ও সম্পত্তি রক্ষায় একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেন।

ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের ওপর হামলার কারণে শিল্প পুলিশের সদস্যরা শিল্প এলাকায় টহল দেওয়া বন্ধ রাখে।

এ ছাড়াও, সে সময় সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসনে রদবদল হচ্ছিল। প্রায় সব থানা অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

ফলে মালিকরা কারখানা চালাতে সাহস পাননি।

পোশাক শিল্প

শ্রমিক অসন্তোষের ফলে অনেক মালিক কারখানা খুলেননি। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায়ও কারখানা চালানো যায়নি।

তাই আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবোর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ছিল। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা ভাঙচুর করেছিলেন।

মালিকরা শেষমেশ বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুসারে কারখানা বন্ধ করে দেন। এই আইনটি ‘কাজ নেই, বেতন নেই’ শর্তের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এই সময় কেন অশান্তি?

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে জাতি যখন নাজুক পরিস্থিতিতে, তখন কেন এই অস্থিরতা? বিশেষ করে, যখন গত বছরের ডিসেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হয়।

ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে বেতন বাড়লেও শ্রমিকদের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।

সাধারণ শ্রমিক, ইউনিয়ন নেতা, শ্রম বিশেষজ্ঞ ও কারখানা মালিকদের মতে, শ্রমিক আন্দোলনের পিছনে আরও কিছু কারণ ছিল।

সর্বশেষ অসন্তোষের সময় শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে টিফিন ও উপস্থিতি ভাতা মানসম্মত করার দাবি তুলেছিলেন। কারণ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তা দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের অপর দাবি ‘বৈষম্য’ দূর করতে নারী-পুরুষকে সমান অনুপাতে নিয়োগ দিতে হবে।

রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইনশৃঙ্খলার অভাবকে কাজে লাগাতে শ্রমিকদের প্রভাবিত করেছিল।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ ও ‘ঝুট’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল মুহাম্মদ মো. মঈন খান অস্থিরতার তিন কারণ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: বহিরাগতদের উসকানি, শ্রমিকদের দাবি ও ঝুট বাণিজ্য দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব।

অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, তারা মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে পারে।

তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা এবার তাদের প্রধান দাবি নয়।

পোশাক শিল্প

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের দাবি কার্যাদেশ ১০ শতাংশ কমে যাওয়া ছাড়াও প্রায় সমপরিমাণ কার্যাদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর পর অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে।’ শ্রমিকদের দাবির বৈধতা দিয়ে তিনি বলেন যে তাদের জীবন মানসম্মত নয়।

নাজমা আক্তার মনে করেন, পোশাক ব্যবসার বৃহত্তর স্বার্থে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বাস্তবায়ন ও নারী শ্রমিকের নির্যাতন বন্ধসহ যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে কারখানা মালিকদের একমত হতে হবে।

একই মত বাংলাদেশ অ্যাপারেল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমানেরও।

তার দাবি, সর্বশেষ অস্থিরতার সঙ্গে বহিরাগতরাও জড়িত। তবে অনেক কারখানা সময়মতো বেতন পরিশোধ করছে না বলেও জানান তিনি।

‘সাধারণত পোশাক শ্রমিকরা কম বেতন পান। যদি সময়মতো বেতন না পান তবে কীভাবে সংসার চালাবেন। বাড়ি ভাড়া ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ মেটাবেন?’

উদাহরণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটি কারখানা এখনো আগস্টের বেতন দেয়নি।’

গত সপ্তাহে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকটি কারখানায় চার শতাধিক শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’

বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে শ্রমিকদের উপস্থিতি নিবন্ধন করায় কালো তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা অন্য কারখানায় চাকরি পাবেন না।

আমিরুল হক আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মালিকদের উচিত ওই শ্রমিকদের নাম কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। তারা অসন্তোষে লিপ্ত হয়েছেন শুধুমাত্র যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য।’

বর্তমানে আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করায় পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে।

সেসব এলাকার প্রায় সব কারখানা গত রোববার খুলে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ায় উৎপাদন শুরু হয়।

পোশাক শিল্প

গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

শ্রমিক অশান্তির প্রভাব

দেশের কারখানাগুলো থেকে শুধু যে নির্দিষ্ট সংখ্যক কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে তাই নয়, সময়মতো পণ্য পাঠানো নিশ্চিত করার বিষয়েও উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা।

ফলে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে বড় ছাড় দিতে হবে অথবা উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর ব্যয়বহুল পথ বেছে নিতে হবে।

কিছু ক্ষেত্রে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে ব্যর্থতার কারণে কার্যাদেশ বাতিল হতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া সময় পূরণে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে বেশি অর্থ খরচ করে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হবেন।

তারা জানেন যে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো হলে লাভের পরিমাণ অনেক কমে পাবে।

ঢাকা থেকে ইউরোপের যেকোনো দেশে আকাশপথে পাঠাতে প্রতি কেজি কাপড়ের জন্য চার ডলারের বেশি খরচ করতে হয়।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে একই চালান ইউরোপে পাঠাতে খরচ হয় ১০ সেন্টেরও কম।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অব্যাহত মূল্যস্ফীতি ও লোহিত সাগর সংকটের মারাত্মক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে হিমশিম খাওয়া দেশের পোশাক শিল্পের জন্য দীর্ঘ সময় শ্রমিক অসন্তোষ হলো সর্বশেষ ধাক্কা।

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কার্যাদেশ ১০ শতাংশ কমে যাওয়া ছাড়াও প্রায় সমপরিমাণ কার্যাদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হারানো কার্যাদেশ পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে। এটি ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের ওপর নির্ভর করছে।’

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যায় থাকা কারখানাগুলোকে আগস্টের বেতন পরিশোধে সহায়তা দেয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা আগস্টের বেতন দিয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘আশা করছি, শ্রমিকরা আবার কাজে ফেরার পর কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।’

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ?

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব। অনেক সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চ্যানেলই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে।
এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে পোশাকশিল্পের বড় অবদান আছে। এই মহাদেশের দেশগুলো বিশ্ববাজারের জন্য টি-শার্ট ও ট্রাউজার উৎপাদন করে হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করেছে। এই শিল্প যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, বাংলাদেশের চেয়ে এত ভালো নজির আর হতে পারে না।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অস্থিরতার জন্য কিছু কাজ ভারতে চলে যাচ্ছে। যদিও এর পরিমাণ খুব উল্লেখযোগ্য নয় ।
১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ। এরপর পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশটির তৈরি পোশাক খাতে এখন ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ১০ শতাংশ। গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের পরেই তার অবস্থান।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অস্থিরতা চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন—এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে ওই সরকারের পতনের মাসাধিককাল পরেও অস্থিরতা থামেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বলীয়ান হয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী নতুন সরকারের কাছে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। চলতি বছর গ্যাস–সংকটের কারণে এমনিতেই শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমবে।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ভারতের কথা বলা হয়েছে। সুতা উৎপাদনে এই দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও তৈরি পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। অর্থমূল্যের দিক থেকে ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের তামিলনাড়ুর ত্রিপুর শহরভিত্তিক পোশাক উৎপাদনকারীরা ৫৪ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নতুন পোশাক উৎপাদনের কার্যাদেশ পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় এসব কাজ তাদের কাছে চলে এসেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার এক পোশাক উৎপাদনকারী গোষ্ঠী বলেছে, আগস্ট মাসে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড জারার কাছ থেকে তারা ১৫ শতাংশ বেশি কার্যাদেশ পেয়েছে।
পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রাধান্য গুরুতরভাবে খর্ব করা ভারতের পক্ষে কঠিন। বাংলাদেশের পোশাক খাত বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব ইকোনমিস্টকে বলেন, পোশাক খাতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সাময়িক। কারখানা খুলতে শুরু করেছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের বড় কিছু সুবিধা আছে। বাংলাদেশের শ্রম ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ এখনো অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পায়, ভারত যা পায় না।

সর্বোপরি বাংলাদেশের পোশাক খাতের যে পরিস্থিতি, তাতে বড় বড় কার্যাদেশ সামলানোর সক্ষমতা তার আছে। বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ‘সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী’।

22 factories still closed at Ashulia

Twenty-two readymade garment factories still remained closed yesterday in Dhaka’s Ashulia industrial belt amid the labour unrest going on for the past two weeks.

According to the Industrial Police, all other units, except for 22 factories, in the area are operational, and workers are actively working.

Since the beginning of the week, the situation in the industrial area has been gradually stabilising.

However, workers at several factories, including Medlar, Setara, and Bando Apparels, stayed away from work due to press home various demands.

Discussions were ongoing to resolve the issues, sources said.

The Industrial Police, industry insiders, and labour leaders have expressed hope that the current stable situation will continue and that the area will soon be buzzing with activity again.

At around 10:30am, Industrial Police-1 Superintendent Md Sarwar Alam told The Business Standard, “So far, the overall situation remains normal. Operations are ongoing in all factories, including Ha-Meem and Sharmin, and workers are working.”

He added, “In addition to this, under Section 13(1) of the Bangladesh Labour Act 2006, 16 factories are closed, and workers of 6 factories are on general leave,” he added.

However, according to sources at the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA), production activities remained suspended in 20 factories in Ashulia yesterday. Among them, 12 factories remained closed under Section 13(1) of the Bangladesh Labour Act 2006, while 8 factories remained shut down due to work abstention by workers or leaving the work stations by them.

The factories that remained closed under Section 13(1) of the Labour Act include Radiance Fashion, Radiance Jeans, Comfit Composite Limited, Tech Max, Shin Shin Apparels, Pearl Garments, Generation Next, and several others.

He also mentioned that members of law enforcement agencies are deployed in front of various factories to ensure security in the industrial zone, and joint forces are continuing patrols.

According to industrial police sources, discussions with factory owners and the BGMEA are ongoing to reopen the factories that are still closed in the region.

“Workers are eager to return to work, and the reason for the commotion in front of the closed factories is that workers want to resume their jobs. Once the factories reopen, the minor issues can also be resolved through discussions,” said an officer of the Industrial Police. 

He further said the labour leaders are also echoing similar sentiments. 

“They are saying that since the situation has improved, keeping a few factories closed will not solve the problems; rather, it may affect other factories where the situation is normal. Therefore, they are urging for the factories to be reopened and issues to be resolved through dialogue,” added the police officer. 

Khayrul Mamun Mintu, legal secretary of the Bangladesh Garments and Sweater Workers Trade Union, said that workers are eager to work, and since the situation has improved, most factories have reopened. 

He urged the owners of the closed factories to reopen them quickly, discuss with the workers, and resolve the issues through negotiation. “Keeping the factories closed is not a solution.”

He added, “If the owners fail to resolve the issues by discussing with the workers in the improved environment we have now, that will be a failure on their part.”

There are 1,863 factories under the jurisdiction of Ashulia Industrial Police-1, the majority of which are garment factories.

Bamboo fiber for sustainable growth and economic potential in Philippines

Cynthia Villar, the Chairperson of the Senate Committee on Agriculture said bamboo has the potential to support sustainability in economic growth as it grows very fast and can be grown easily in different climate conditions and altitudes.

Earlier this year, Cynthia Villar urged the public and concerned government agencies to continue propagating bamboo due to its many economic and ecological benefits.

Bamboo fiber for sustainable growth and economic potential in Philippines
Figure: Bamboo is expected to have a trade value of $88.43 billion and would contribute $3.5 billion to the Philippine economy. Courtesy: Colossostex. 

By 2030, bamboo is expected to have a trade value of $88.43 billion and would contribute $3.5 billion to the Philippine economy. 

September is recognized as Bamboo Month in the Philippines, and this year there will be a special exhibition on uses in clothing called Kawayarn, which is a combination of the words “yarn” and “kawayan,” the Tagalog term for bamboo.

The Bamboo Textiles Initiative, a research project, is also underway at the country’s textile research institute, Department of Science and Technology – Philippine Textile Research Institute (DOST-PTRI).

The program is investigating methods to extract fiber from bamboo stalks using chemical and mechanical processes. This yields a fiber having specific properties that are very different from the more common viscose-type processing of bamboo into manmade cellulosic yarns.

Notably, utilizing bamboo as a textile will help the local textile industry and spur development in the countryside, as it has at least 35 percent textile fiber recovery unlike other sources of fiber, which have only 2 percent.

Thus, a reliable source of sustainable textile fiber is available throughout the nation. Bamboo fibers may be used to make household textiles and clothes and can also be utilized to make nonwoven materials like bags and shoes.

For this reason, Bamboo fibre is now included in the Republic Act 9242, also known as the Philippine Tropical Fabrics Law, which prescribes the use of local fibers and fabrics for the uniforms of public officials and employees.

It thus joins the ranks of piña, abaca and banana fibres, as per the local newspaper Business World.

গ্যাস সংকটে ভুগছে পোশাক শিল্প কারখানা, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবি

গাজীপুরে গ্যাস সংকটে ভুগছে পোশাক শিল্প কারখানা। চাপ কম থাকায় অধিকাংশ কারখানায় সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদনে যেতে পারেনি। এমতাবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পোশাক শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি শিল্পোদ্যোক্তাদের।

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকা দেশের শিল্পের জন্য পুরানো সমস্যা। তবে, হালে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে শিল্পোদ্যোক্তাদের।

গাজীপুরে দুই হাজারের মতো শিল্প কারখানায় তিতাসের সংযোগ রয়েছে। এসব কারখানায় গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দৈনিক ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস না পেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে যেমন বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, তেমনি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এসব কারণ দেখিয়ে ঠিকভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন না।

অন্তর্বর্তী সরকারও শিল্পক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের এমন আশ্বাসে পোশাক শিল্প নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

বিজিএমইএ স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘উপদেষ্টা যে বলেছেন তিনি জ্বালানিতে প্রথম প্রায়োরিটি দেবেন, সেটা আমরা মনে করি যে টপ প্রায়োরিটি দিতে হবে। সেটা অতি শিগগিরই কীভাবে সংকটটা মোকাবিলা করা যায়। শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ এবং গ্যাস অত্যাবশ্যকীয়।’

এডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদরুল হাসান তসলিম বলেন, ‘আমরা রিজার্ভ ভরপুর করে দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের যদি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি যদি সরবরাহ করা হয়।’

অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে পোশাক শিল্পে টেকসই নীতিমালা প্রণয়নের জোরালো দাবি জানান শিল্প মালিকরা। এছাড়াও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের।

স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা চৌধুরী মিশা বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, আমি বায়ারের সাথে আজকে বসে যে প্রাইজটা নেগোসিয়েট করছি, ছয় মাস পরে ওই কাজটা এনে যখন প্রোডাকশনে দিচ্ছি, আমি দেখছি আমার কাছে কিছু নেই। দিন শেষে আমার লোন বাড়ছে। এজন্য সরকারের কাছে আমার জোড় দাবি, বাস্তবসম্মত সাস্টেইনেবল একটা পলিসি দিয়ে দেয়া।’

রাব্বানী ওয়াশিং লিমিটেডের কারখানা ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে যে অবৈধ গ্যাস লাইনগুলো আছে, সেগুলো যদি ডিসকানেক্ট করা যায়, তাহলে আমরা গ্যাসের প্রেসারগুলো খুব ভালো পাবো।’

গত কয়েক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, লাখ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানসহ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলা এ পোশাক শিল্প সচল রাখার স্বার্থে গ্যাস সংকটের সমাধান জরুরি বলে মনে করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ?

‘বাংলাদেশ’স লস মে বিকাম ইনডিয়া’স গেইন (বাংলাদেশের ক্ষতিতে হতে পারে ভারতের লাভ)’, সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন শুরু হয় এই লাইনটি দিয়েই। ভারতের বাণিজ্য বিষয়ক গণমাধ্যম ’দি সেক্রেটারিয়েট’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লেখিকা মহুয়া ভেঙ্কটেশ এই প্রতিবেদনে মূলত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং এই অস্থিরতার ফায়দা ভারত কীভাবে তুলতে পারে- সেই বিষয়টি।

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব।

শুধু এই গণমাধ্যমটিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের অস্থিরতার ফলে যে ভারতই সবচেয়ে বেশি ফায়দা তুলতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ’দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’, ’টাইমস অব ইন্ডিয়া’, ’ইকোনমিক টাইমস’ ও ’দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর মতো সুপরিচিত গণমাধ্যমগুলোতেও।

বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে শোরগোল ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব। অনেক সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চ্যানেলই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে। সেই রকমই একটি ইউটিউব চ্যানেল ‘স্টাডি আইকিউ আইএএস’, যার সাবস্ক্রাইবার ১ কোটি ৮০ লাখ।

এই চ্যানেলে প্রচারিত ’উইল ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বেনিফিট ফ্রম বাংলাদেশ ক্রাইসিস?’ শিরোনামের ভিডিওতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চলমান অস্থিরতার কারণে যদি বাংলাদেশ থেকে মাত্র দশ শতাংশ অর্ডারও ভারতে চলে আসে, তাহলেও বছরে ভারতের রফতানিতে যোগ হবে অতিরিক্ত আরও ৩ বিলিয়ন ডলার।

পাশাপাশি ভারতের খ্যাতনামা বাণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এস চন্দ্রসেকারানের উদ্ধৃতি দিয়ে ভিডিওতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান পোশাক কারখানাগুলোর চার ভাগের একভাগই ভারতীয় মালিকানার এবং এই ভারতীয় কারখানা মালিকরা বর্তমানে তাদের কারখানা ভারতে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও উল্লেখ করা হয় ভিডিওতে।

দেশের পোশাক শিল্পে অস্থিরতায়, ভারতের অতি উৎসাহ অশনি সংকেত!

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এই মাতামাতিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। এমনকি বিষয়টি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ’দি ইকোনোমিস্ট’ এর প্রতিবেদনেও পোশাক খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি উঠে আসে। ‘ইন্ডিয়া ভার্সাস বাংলাদেশ: ক্যান ইন্ডিয়া’স গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বেনিফিট ফ্রম বাংলাদেশ’স টার্ময়েল?’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতার মধ্যে ভারতে বাড়ছে পশ্চিমা অর্ডারের সংখ্যা।

বিগত সরকারের ভুল নীতির শিকার পোশাক খাত

মূলত দেশের পোশাক খাতে এক ধরনের অস্থিরতার রেশ দেখা যায় গত বছর থেকেই। গত বছর থেকেই বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বৈশ্বিক রফতানি বাজারে কমতে শুরু করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। এজন্য অবশ্য দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা দায়ী করেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাকে। এরমধ্যে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি দায়ী করেন আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে সংঘটিত রিজার্ভ সংকটকে।

রিজার্ভ সংকটের কারণে সময়মতো ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে এলসি করাই কঠিন হয়ে পড়ে দেশের কারখানাগুলোর জন্য। অনেক প্রতিষ্ঠানই সময়মতো এলসি না করতে পেরে প্রতিশ্রুত লিড টাইমে তাদের রফতানি পণ্য শিপমেন্ট করতে ব্যর্থ হন। অনেককে আবার লিড টাইমের মধ্যে শিপমেন্ট করার জন্য এয়ার শিপমেন্টে বাধ্য হন। এতে রফতানি খরচ অনেকটাই বেড়ে যায় তাদের। মূলত গত বছর থেকে শুরু হওয়া এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় চলতি বছরে।

বিশেষ করে বিগত সরকারের দেয়া চলতি অর্থবছরের বাজেট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন উদ্যোক্তারা। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই হঠাৎ করেই জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হলে আরও টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। বিশেষ করে ছাত্রদের আন্দোলন দমানোর নামে জুলাই মাসে তৎকালীন সরকারের ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউ জারির প্রভাব সরাসরি আঘাত হানে দেশের পোশাক খাতকে।

প্রায় এক সপ্তাহ অচল থাকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর। বন্ধ থাকে দেশের পোশাক কারখানাগুলোও। বাংলাদেশে অবস্থিত সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক ইমেজ সংকটে পড়ে দেশের পোশাক খাত।

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ পোশাক খাতের শৃঙ্খলা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর হামলা ও ভাঙচুর হয় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায়। তবে সে সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেয়া তড়িৎ পদক্ষেপে দ্রুত শান্তি ফিরে আসে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরসহ তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। পরবর্তীতে কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হলেও আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী বন্যা।

এই বন্যায় অচল হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। মূলত এই বন্যার ধাক্কা দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর ছিলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। অপরদিকে সরকার পতনের পর টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ- এই তিন সংগঠনেই হয় নেতৃত্বের পরিবর্তন। সব মিলিয়ে টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে জুলাই ও আগস্ট- দুই মাসেই পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন এবং রফতানি পণ্য শিপমেন্ট ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায়, কারখানা মালিকরা তাদের শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও তৈরি হয় সংশয়।

এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাতকে রক্ষায় এগিয়ে আসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পোশাক খাতের কারখানাগুলোকে আগস্ট মাসের বেতন হিসেবে দেয়া হয় জরুরি প্রণোদনা।

পোশাক খাতের অস্থিরতার পেছনে অন্য দেশের ইন্ধন!

পোশাক কারখানার মালিকরা সরকারের প্রণোদনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়া ও কারখানা চালুর রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। সরকারের প্রণোদনা এবং মালিকদের কারখানা চালু রাখার প্রতিশ্রুতিতে আশার আলো দেখা দেয় দেশের তৈরি পোশাক খাতে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের তৈরি পোশাকের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। বিভিন্ন কারখানায় চালানো হয় ভাঙচুর।

বকেয়া বেতনের দাবিতে এসব আন্দোলনের দাবি করা হলেও দেখা যায়, যে সব কারখানায় কখনও বেতন বাকি রাখা হয় না সেসব কারখানাতেও চালানো হয় ভাঙচুর, লুটপাট। এসব ভাঙচুরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিকরা জড়িত থাকার বদলে বহিরাগত অচেনা দুষ্কৃতকারীরা জড়িত বলে দাবি করেন কারখানা মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে ফের সামনে আসে দেশের পোশাক খাত ঘিরে তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি।

বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে একটি প্রতিবেশী দেশ- এমন আলোচনাও জোরেশোরে হতে শুরু করে দেশের পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে। পোশাক কারখানার মালিকদের পাশাপাশি, শ্রমিক সংগঠনগুলো এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও উঠে আসে বিষয়টি।

বিদেশি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে যা বলছেন পোশাক মালিকরা

দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোর চলমান শ্রমিক অসন্তোষ ও পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ে পোশাক কারখানা মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর উত্তরার প্রধান কার্যালয় বিজিএমইএ’ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় এক উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত মতবিনিময় সভা। হাইপ্রোফাইল এই মতবিনিময়ে অংশ নেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা। আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ ছাড়াও পোশাক কারখানা মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএর শীর্ষ নেতারাসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বিজিএমইএর সাধারণ সদস্য কারখানা মালিকরা। সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় খোলামেলা আলোচনা হয় দেশের পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতা নিয়ে।

সেখানে পোশাক মালিকদের তরফে দেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানিকারক হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘পোশাক কারখানাগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের অর্ডারগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারছেন না। বহিরাগতরা কারখানাগুলোতে অশান্তির চেষ্টা চালাচ্ছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মধ্যে তেমন কোনো অসন্তোষ নেই। কিছুদিন আগেই প্রায় অর্ধেক বেতন বাড়ানো হয়েছে। মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছেন।’

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে কিংবা অন্য দেশে এই দেশের ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে, অপরদিকে যদি বাংলাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা যায়, তাহলে লাভটা কার, তা বুঝতে হয়তো আপনাদের কারোই বাকি নেই। এ অবস্থায় অন্য দেশের যেন লাভ না হয়, সে বিষয়টিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের টেক্সটাইল কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে দেশের পোশাক খাতের অস্থিরতার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমাদের টেক্সটাইল মিলের মালিকরা শত অসুবিধা সত্ত্বেও সময়মতোই সব বেতন ভাতা পরিশোধ করছেন। কিন্তু আমরা এখন ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে গেছি।’

বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্টরা কারখানাগুলোতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আগুন লাগানোর পেছনে জড়িত উল্লেখ করে বিটিএমএ নেতারা আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কোন কোন আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিল্পাঞ্চলগুলোতে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে ভাঙচুর শুরু করা হয়। একই ধরনের লাঠি ও হ্যামার হাতে একটি গ্রুপ কারখানাগুলোতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কাউকেই স্থানীয়রা এবং কারখানার শ্রমিকরা চেনেন না। এরাই হলো বিদেশি এজেন্টদের লোক। যাদের কেউ চেনে না। কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলেও শ্রমিকরা কখনই কারখানার মেশিন ভাঙচুর করে না। কিন্তু এই অচেনা দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারীদের উদ্দেশ্যই থাকে কারখানার মেশিন ভাঙচুর।

পোশাক খাতে ষড়যন্ত্র, যা বলছেন নীতিনির্ধারকরা

বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ সেপ্টেম্বরের মতবিনিময় সভায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার মধ্যে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তিনি বলেন, দেশের পোশাক খাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যার সুযোগ নেবে প্রতিবেশী দেশ।

উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের পোশাক খাতের অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে প্রতিবেশী দেশ। এরমধ্যেই ভারতের কোনো কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিভিন্ন ভিডিওতে বলছেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের এই অস্থিরতার সুযোগ নিতে হবে ভারতকে।’ প্রতিবেশী কোন দেশ যেন এই পরিস্থিতি থেকে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে স্থানীয় চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত রয়েছে।

অস্থিরতা সত্ত্বেও ভারতের পক্ষে কঠিন বাংলাদেশকে পেছনে ফেলা

তবে ইকোনোমিস্টের ঐ প্রতিবেদনে উঠে আসে বাংলাদেশের পোশাক খাতের শক্তিশালী ভিত্তির কথা, যার জেরে সাময়িক এই অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাজার দখল করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে এই প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন হবে। বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদি। কারখানাগুলো এরমধ্যেই আবার চালু হয়েছে এবং পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ এখনো তার প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় সুবিধা ভোগ করছে। শ্রমিকদের মজুরি এখনও অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কম।

এমনকি ইউরোপীয় বাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার ভোগ করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বস্ত্র উৎপাদনের দীর্ঘ ইতিহাস থাকার কারণে দেশটি বড় অর্ডার সামলাতে দক্ষ। গ্যাপের সাপ্লাই চেইনপ্রধান জানান, আমেরিকান ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশকে নিয়ে ’সতর্ক কিন্তু আশাবাদী’।

প্রতিবেদনে একজন শিল্প বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, এ মুহূর্তে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা নেই। ভারতের মনোযোগ এখন পুঁজিনির্ভর খাত, যেমন বৈদ্যুতিক পণ্যের সম্প্রসারণের দিকে, শ্রমনির্ভর বস্ত্রশিল্পের দিকে নয়। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রফতানির আয় ১৫ শতাংশ কমেছে, যেখানে বাংলাদেশের রফতানি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এরজন্য বিশ্বব্যাংক তাদের একটি প্রতিবেদনে ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতিগুলোকেই দায়ী করেছে। ২০১৭ সাল থেকে বস্ত্র ও পোশাকের ওপর গড় আমদানিশুল্ক ১৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, যার ফলে উৎপাদকদের জন্য দাম বেড়ে গেছে।

তবে চীনের কম মূল্যের পোশাক উৎপাদন ব্যবস্থার পতন হলে ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু এ খাতে বাংলাদেশ থাকায় ভারতকে এখানেও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।

Most factories in Ashulia operational; 27 still closed

Most garment factories in the Ashulia industrial area of Dhaka have resumed operations this week following the end of worker protests. 

The majority of factories are now functioning normally, with workers returning to their jobs peacefully.

However, a few factories are experiencing disruptions, as some workers have returned but are refusing to work until their demands are addressed by the management. There have been no new factory closures reported this week.

According to the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA), of its 2,144 member RMG factories across the country, 2,114 were operational as of Wednesday. 

Meanwhile, 30 factories suspended production during the day, and three were closed due to internal issues.

In the Ashulia-Savar area, 27 factories suspended operations due to ongoing worker unrest. Among these, 16 factories implemented a ‘no work, no pay’ policy under Section 13(1) of the Labour Act, while 11 others closed with pay despite workers’ refusal to continue production.

“Twenty factories have been closed under Section 13(1) of the Labour Act since last week, and five have announced general holidays,” said Superintendent of Industrial Police-1 Sarwar Alam. 

“Overall, the situation in the industrial sector is returning to normal. Law enforcement officers are stationed outside various factories, and joint force patrols continue.”

He added, “Workers from the closed factories are protesting outside, demanding their reopening. We are negotiating with BGMEA and factory owners to facilitate the reopening of these facilities.”

Khairul Mamun Mintu, legal affairs secretary of the Bangladesh Garment Workers Trade Union Centre, said, “Unrest could resume if all factories are not reopened. A worker from Mascot Garments Ltd died during clashes on Tuesday.” 

“Closing factories is not a solution; owners should address worker grievances to resolve the issue,” he added.

BGMEA President Khandaker Rafiqul Islam said, “We have always valued workers’ humanity and hope they will cooperate. A government committee has been formed to address the crisis, and we are hopeful their legitimate demands will be met.” 

“However, if workers do not return, the industry may suffer, potentially losing work orders to competitors, which would impact everyone.”

“The situation would be controlled soon with the involvement of the army, which has been granted magistracy powers. We believe the industry will recover its previous standing within the week,” said BGMEA Director Mohiuddin Rubel.

RMG BANGLADESH NEWS