fbpx
Home Blog Page 14

বকেয়া বেতনের দাবিতে আবারও পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, নারী শ্রমিক নিহত

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে গাজীপুর ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। একদিকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। অন্যদিকে আশুলিয়ায় দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন।

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আজ (মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক নামেন গাজীপুর এলাকার সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এর কিছুক্ষণ পর মহাসড়কের দু’পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষ তিন মা‌স ধরে তাদের বেতন ও ছু‌টির টাকা বকেয়া রেখেছেন। বেশ ক‌য়েকবার তা‌রিখ দিলেও পরিশোধ করা হয়নি। তাই বাধ্য হ‌য়ে মহাসড়ক অ‌বরোধ ক‌রেন তারা। দা‌বি মে‌নে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।

গাজীপুর শিল্প পু‌লি‌শের টঙ্গী জো‌নের সহকা‌রি পু‌লিশ সুপার মোশাররফ হো‌সেন ব‌লেন, ‘কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছে। তবে, শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার চেষ্টা চলছে।’

এদিকে যানচলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে কয়েকদিন শান্ত থাকার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। সকালে আশুলিয়ায় দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষে রোকেয়া বেগম নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।

এর আগে উপজেলার জিরাবো এলাকায় সকাল পৌনে ৯টায় ম্যাসকট ও রেডিয়েন্স গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। শিল্প পুলিশ জানায়, নিহত রোকেয়া বেগম মাস্কাট গার্মেন্টসের সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর ছিলেন।

Normalcy returns to Ashulia as workers unrest comes to halt, factories reopen

After experiencing a period of unrest due to labour dissatisfaction for over two weeks, the overall situation in Dhaka’s Ashulia industrial zone has been gradually returning to normal since the beginning of this week.

Aside from a few isolated incidents, the first two days of the week, Saturday and Sunday, saw a normal working environment, and as of today (16 September), the situation remains stable in the industrial zone.

However, as today is a public holiday, many factories across different sectors in this region are closed.

Md Sarwar Alam, superintendent of Industrial Police-1, said, “Normal environment has been restored in the industrial zone. Most of the garment factories in the region have been operating for the past two days, and workers have been working enthusiastically. Today is no exception, though some factories are closed due to the holiday.”

He mentioned that there are a total of 1,863 industrial factories under the jurisdiction of Industrial Police-1, of which 1,400 are operating normally, while the remaining are closed due to the public holiday.

According to Section 118(1) of the Bangladesh Labor Act 2006, each worker is entitled to 11 festival holidays per year.

A senior official from an industrial group in the garment sector told The Business Standard that all their factories in the Ashulia area are closed today due to the observance of Eid-e-Milad-un-Nabi.

The official added, “By law, workers are generally entitled to 11 festival holidays a year. However, it has been observed that factory owners often provide an extra one or two days of leave. Among these, the holiday given on the 15 August was imposed by the previous government, and in the list, the 15 August used to have a star mark next to it.”

However, labour leaders argue that no additional holidays are given beyond what is mandated by law. 

They claim that the extra leave days factory owners mention are adjusted by having workers work extra hours during other times or by deducting them from the workers’ accrued leave.

On the other hand, as of 12pm, 11 factories in the Ashulia industrial zone remain closed today under Section 13(1) of the Bangladesh Labor Act, based on the “No Work, No Pay” policy, as per BGMEA sources. 

Additionally, one factory remains open but has ceased operations.

Due to the observance of Eid-e-Milad-un-Nabi, 156 garment factories in this region under BGMEA are closed.

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানার কার্যক্রম

খুলতে শুরু করেছে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পঞ্চলের পোশাক কারখানা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। এতে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে উৎপাদন কার্যক্রম।

তবে বেশিরভাগ কারখানা খুললেও নতুন ক্রয়াদেশ ও নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানি নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।পাশাপাশি অনেক কারখানায় কমেছে স্বাভাবিক কাজের চাপও।

শিল্প এলাকার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর না থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশের একাধিক টিম।

এদিকে শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়ার বন্ধ থাকা ৪৯টির মধ্যে আরও ২৯টি কারখানা খুলেছে।

তবে দাবিদাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে আশুলিয়ার ২০টি কারখানা। সমস্যা সমাধানে গার্মেন্টস মালিকদের সাথে বৈঠক করেছে বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

বাংলাদেশের পোশাকের বাজার দখলের আশায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা 

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের রপ্তানিমুখী উৎপাদনের বড় একটি অংশ চলে যেতে পারে ভারতে। এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির অন্যতম পোশাক শিল্প গোষ্ঠী রেমন্ডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিএমডি) গৌতম সিংহানিয়া। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

গৌতম সিংহানিয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গার্মেন্টস উৎপাদনের বড় একটি অংশ ভারতে চলে যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর কোম্পানি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে প্রস্তুত এবং তাঁরা বৈশ্বিক ক্রেতাদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠতে চান। 

রেমন্ডের সিএমডি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে কাপড় বিক্রি করি, কিন্তু সংকটের কারণে এসব ব্যবসা এখন ফিরে আসছে আমাদের কাছে। একবার যেহেতু এই ব্যবসা আমাদের এখানে এসেছে, আমরা এটাকে আর ফিরে যেতে দিতে পারি না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (বাংলাদেশের) কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। আমাদের তৈরি পোশাক ও কাপড় তৈরির শিল্প আছে—আর আপনি যখন সমন্বিতভাবে এই খাতে কাজ করবেন, তখন আপনি সফল হবেন। বল ছোড়া হয়ে গেছে, এখন আমাদের দায়িত্ব হলো সেটা ধরা।’ 

রেমন্ড গার্মেন্টস উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। কোম্পানিটি এরই মধ্যে বড় বড় কিছু ক্রেতাকে তৈরি পোশাক সরবরাহ করছে। এ বিষয়ে গৌতম সিংহানিয়া বলেন, ‘আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক। আমরা বছরে ১ কোটি পিস পোশাক তৈরি করি।’ 

এ সময় তিনি জানান, তাদের আগে থাকা দুই শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী কোম্পানি চীনের। এই কোম্পানি দুটি অনেক বেশি সস্তায় বিপুল পরিমাণ কাজ উৎপাদন করে। তবে সব মার্কিন গ্রাহক আমাদের সঙ্গে আছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হিউগো বস, সিকে, ম্যাকি’স, জেসিপেনির কথা বলতে পারি।’   

এর আগে, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব চন্দ্রিমা চ্যাটার্জি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, ‘পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ভারতকে একটি বিকল্প হিসেবে দেখছে। কিন্তু সরবরাহ করার ক্ষমতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এই মুহূর্তে ভারতীয় ও বাংলাদেশি পণ্যের অফারগুলোর মধ্যে গুণগত ও পরিমাণগত পার্থক্য আছে।’ 

চন্দ্রিমা চ্যাটার্জি জানান, ভারতেও কিছু ক্রয়াদেশ যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও ফুটওয়্যার শিল্পের জন্য কিছু কাঁচামাল রপ্তানি কমে যাওয়ায় পুরো বিষয়টির ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব নেতিবাচক হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় পোশাক খাতের এক নির্বাহী বলেন, বাংলাদেশে চলমান সংকটের আগে থেকেই পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ভারতের দিকে নজর রেখেছিল। ইউরোপীয়রা বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে ক্রমশ উদ্বিগ্ন, তাই ভারতের বাজারের দিকে তাকিয়ে আছে। 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অস্থিরতা কিছু সময় আগে শুরু হলেও ক্রয়াদেশ ভারতে সরানো হয়নি। সেগুলোর বেশির ভাগই যাচ্ছে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায়। ভারতে অনেক সুযোগ আছে, কিন্তু আমাদের পণ্যের গুণগত অবস্থান বদলাচ্ছে না এবং এর ফলে আমরা সুবিধাও হাসিল করতে পারছি না।’

গাজীপুরে খুলে দেওয়া হয়েছে ৯৫ ভাগ পোশাক কারখানা

গাজীপুরে ৯৫ ভাগ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা ও মহানগরেরর এসব কারখানায় রোবববার সকাল থেকে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছে। নতুন করে রোববার কোথাও শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, অর্থনৈতিক সংকটের কারণ দেখিয়ে কোনো কোনো কারখানা শ্রমিকদের বেতন দেয়নি, এজন্য তাদের কারখানা বন্ধ রাখা রয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ ২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খলিলুর রহমান জানান, গাজীপুরের টঙ্গী, মহানগর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর এলাকাকায় ৯৫ ভাগ কারখানাই রোববার খুলে দেওয়া হয়েছে।

এ দিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রমিকদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে। কারখানার নিরাপত্তা রক্ষায় নিজস্ব কর্মী ছাড়াও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। 

গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, বকেয়া বেতন পরিশোধসহ নানা দাবিতে শ্রমিকরা টানা বেশ কিছুদিন আন্দোলোন করেছেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয় জানায়, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে দুই হাজার ৬৩৩টি। এসব কারখানায় প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।

পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য তিন কারণ চিহ্নিত

ক্ষমতার পালা বদলের পর দেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করার পেছনে বকেয়া বেতনের সঙ্গে আরও দুটি বিষয় আলোচনায় আসছে। একটি হলো ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, অন্যটি বিদেশি শক্তির ইন্ধন।

এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কিছু কারখানা মালিকের অনুপস্থিতিও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা মনে করছেন।পোশাক শিল্পের এ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ সম্ভাব্য ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম উপদেষ্টা। কয়েকটি দেশ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্রেতাগোষ্ঠীকে টানার চেষ্টা করছে।

‘বিদেশি শক্তির’ ইন্ধনের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।অন্যদিকে শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নিচ্ছে; শ্রমিক সেজে হামলা করছে।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনের বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়।

তবে এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। প্রতিদিনই বহু কারখানা বন্ধ থাকছে।

৭৫ শতাংশ কারখানার বেতন পরিশোধ

ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস চালু, নতুন শ্রমিক নিয়োগের দাবি নিয়ে শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন তীব্র হয়েছে আগস্ট মাসের বেতন, নিয়মিত টিফিন বিল দেওয়ার দাবিতে।

শ্রমিকদের পুরানো দাবি পূরণ আলোচনার ভিত্তিতে হবে- মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএ নেতাদের এমন কথায় শ্রমিকরা কাজে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে বিলম্ব ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়েছে পোশাক শ্রমঘন এলাকা গাজীপুর ও সাভারের কারখানাগুলো।

বেতন সমস্যা কাটাতে জুলাই আন্দোলনে কারফিউ থাকায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে আগস্টের বেতন দিতে ‘সফট’ ঋণ চেয়েছিলেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

সরকারও সেই দাবি পূরণ করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৭৫ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধের কথা জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।

দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশের যোগানদতা এবং ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের এ খাতের আড়াই হাজার কারখানা বিজিএমইএর সদস্য। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নিটওয়্যার ও সোয়েটার এবং বাকি ৬০ শতাংশই ওভেন খাতের।

বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক হাজার ৫৯৫টি কারখানার বেতন হয়েছে। দুই হাজার ২৯টি কারখানা খোলা আছে। বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৭৫টি।

অন্যদিকে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেছেন, বৃহস্পতিবার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৮৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ১৩৩টি কারখানায়। বেতন বকেয়া থাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন শিল্প পুলিশ প্রধান কার্যালয়ের ডিআইজি সিবগাত উল্লাহ।

তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সব কাজ করছে। এখানে সেনাবাহিনীও আছে, আমরা পুরো এলাকা টহলের আওতায় রেখেছি। সমস্যা হচ্ছে বেতন নিয়ে। “(শ্রমিকরা) বেতন যদি না পায়, তাহলে এই সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে? আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেতন ক্লিয়ার হচ্ছে।”

হাতবদল হচ্ছে ঝুট ব্যবসা

ক্ষমতার পালাবদলে পোশাক খাতের ‘লোভনীয়’ ব্যবসা হিসেবে পরিচিত ঝুট ব্যবসারও হাতবদল হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাত থেকে ব্যবসা বিএনপি সমর্থক পরিচয়ে দখলের নেওয়ার চেষ্টা দেখছেন পোশাক মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। এমন অভিযোগ পেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও আছে।

যেসব এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বদল হয়নি, সেখানেই শ্রম অসন্তোষ বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেছেন, “হঠাৎ করে রাজনীতি বদলে গেছে। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগ নেতারা, এহন বিএনপি নেতারা নিতে চায়। হেতেরাই (তারাই) অভাবী শ্রমিকদের কাজে লাগায়ে বিশৃঙ্খলা করতেছে মনে হয়।”

সাভারের আশুলিয়া থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, “গামের্ন্টস শিল্পে অস্থিরতার পিছনে বহিরাগতদেরও হাত রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক সেজে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়েও আন্দোলনরত শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে।”

উদ্যোক্তারা আসছেন না কারখানায়

বেতনের দাবিতে শুরুর দিকে কোনো আন্দোলন না হলেও গত ১১ সেপ্টেম্বর কারখানার সামনে আন্দোলন করতে শুরু করেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মীরা।

সরকার পতনের পর গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জেলে যাওয়ায় বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন বেক্সিমকোর প্রায় ৭৫ হাজার কর্মী।

এমন অবস্থায় কর্মীদের বেতন দিতে গত বুধবারই ৭৯ কোটি টাকার ঋণ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। এতে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মীরা আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

উদ্যোক্তারা কারখানায় না যাওয়ায় শ্রম অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোনাবাড়ী জোন) সুবীর কুমার সাহা। তিনি বলেন, “বর্তমানে বকেয়া বেতন ভাতার জন্যই বেশি শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কারখানা মালিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে কিংবা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। ওইসব কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে।

“এজন্য আগের মতো কঠোরও হতে পারছে না পুলিশ। শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে কঠোর হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে কেউ মারা গেলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একটা লিমিটেশন তৈরি হয়ে গেছে।”

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী মনে করছেন, উদ্যোক্তাদের একটি অংশ কারখানা এলাকায় যাচ্ছেন না নিরাপত্তার অভাব ও ‘ভয়ের’ কারণে।

“পুলিশ না থাকায় উচ্ছৃঙ্খল যুবক, শ্রমিকরা ভাঙচুর করছে। তারা অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না, তারা জানে পুলিশ কম, কে গ্রেপ্তার করবে? নিরাপদ মনে করছেন না অনেক মালিক। তাই অফিস চালাচ্ছেন দূর থেকে। কিছু লোকের তো রাজনৈতিক সমস্যা আছে, সেটা আলাদা ইস্যু। দেখতে হবে তারা বেতন ঠিকমত দিচ্ছেন কি না।”

‘বিদেশি শক্তির’ ইন্ধন?

দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে ‘বিদেশি শক্তির’ ইন্ধনও দেখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারও।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেছেন, “পোশাক শিল্পে অসন্তোষের পেছনে এই শিল্পের ভিতরের কেউ খেলছে কী না, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ (বিদেশি) কাজ করছে কী না, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানতে কাজ করছে।”

যৌথ বাহিনীর অভিযানে থাকা বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গেও আমরা বসেছি। তারাও জানে কাজ না করলে বেতন পাবেন না। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আছে, সবই ঠিক আছে, তার মধ্যেও তারা কাজ করতে চায়। এর ভেতরে একটি থার্ডপার্টি এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিচ্ছে।

“তিনি বলেন, আমাদের যৌথ অভিযানও হয়েছে। তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। ‘হাফপ্যান্ট’ পার্টি বলে একটি গ্রুপ আছে, যৌথ অভিযানে তারা কিছুটা নিউট্রালাইজ হয়েছে। থার্ডপার্টি তারাতো সিনে আসছে না। তারা উসকানি দিয়ে কেটে পড়ে।”

শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে কী না প্রশ্ন করলে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যেটা ওই বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। এটা একটি সিজনাল বিজনেস। মার্কেটে যে প্রোডাক্টটা যাবে সেটা তিনমাস আগেই প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫-২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু নির্দিষ্ট দেশের বায়াররা অর্ডারটা নেওয়ার জন্য লবিং করছেন, উঠে পড়ে লেগেছে।”

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে শ্রমিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত কাজ করছে। এছাড়া সাবেক এক সংসদ সদস্য ও মুরাদ জং এর অনুসারীদের হাত আছে।”

কি করছে বিজিএমইএ?

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে আসা খন্দকার রফিকুল ইসলাম শ্রম অসন্তোষ চলার মধ্যেই পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিজিএমইএ নেতারা বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ, সেনাবাহিনী, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে উত্তরা কার্যালয়ে উন্মুক্ত বৈঠক করেছেন বিজিএমইএ নেতারা।

তারপর নিরাপত্তার পরিধি বাড়িয়ে কারখানা খোলা হলেও অস্থিরতা কাটেনি বেতন নিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ফের বৈঠক ডেকেছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রম অসন্তোষ ফের বাড়ার কারণ জানতে দুইদিন ধরে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি (প্রথম) সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লা হিল রাকিব ও সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দিপুর সঙ্গে। তাদের সবার ফোনই বন্ধ পাওয়া গেছে।

শ্রম অসন্তোষ কমানো ও কারখানার উৎপাদন পরিবেশ ফেরাতে সরকারের আরও সহযোগিতা চেয়েছেন বর্তমান পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরী। “আমরা সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই সহযোগিতা চাই। তাদেরও আমাদের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। গার্মেন্টস টিকে থাকলে সবাই ব্যবসা করতে পারেবেন।”

সমাধান কী

অসন্তোষ থামিয়ে কারখানা খোলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোক্তাদের কারখানায় যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন গাজীপুর জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাইফুল আলম।

তিনি বলেন, “মালিকরা যদি নিয়মিত ফ্যাক্টরি ভিজিটে যান, বেতন-ভাতা-বোনাস পরিশোধ করেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে তবে অনেকাংশে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করা যায়।

“তিনি বলেন, শিল্পক্ষেত্রে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা নিরসনে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মালিকপক্ষের ফলপ্রসূ আলোচনা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে তা থামানো যাবে না।” আর গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু মনে করেন, একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যেখানে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ থাকবে।

তিনি বলেন, “শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ বা অস্তিরতা নিরসনে বিচ্ছিন্নভাবে একদিন এক শ্রমিক নেতাকে দিয়ে কিছু বলানো, আরেকদিন আরেকজনকে দিয়ে কিছু বলানো হচ্ছে, এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ত্রিপক্ষীয় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।”

শনিবারের পরিস্থিতি

এদিকে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শনিবার সকাল থেকে অধিকাংশ কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে এদিন ৪৯টি কারখানা বন্ধ রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শ্রম আইনে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৩৬টি। বাকিগুলো উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বন্ধ রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক ওই শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন এবং এমন বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ জানায়, বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। তবে ওষুধ, চামড়াজাতপণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের কিছু কারখানাও আছে।

শনিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে সাভার, আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। সকাল থেকেই সড়কে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা টহল দেন। বিভিন্ন কারখানার সামনে দায়িত্বপালন করছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, কিছু কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে দাবি নিয়ে আলোচনা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার মূল ফটকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সংক্রান্ত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়ায় কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, শনিবার সকালে বন্ধ থাকা অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেক কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী মালিকপক্ষ নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে। দুই-একটি কারখানার শ্রমিকেরা তাদের দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। যেসব কারখানা বন্ধ আছে, সেগুলোর মালিকপক্ষ আন্তরিক হলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারায় ৮৬টি কারখানা বন্ধ ছিল। আজ একই ধারায় বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৩৬টি। এর বাইরে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাতপণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে। খবর বিডি নিউজ

কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত, অস্থিরতা হলে ব্যবস্থা

ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে আগামীকাল রোববার সব তৈরি পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে মালিক চাইলে আইন অনুযায়ী শুধু সেই কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।

আজ শনিবার তৈরি পোশাক খাতে চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত বিজিএমইএ কার্যালয়ে তৈরি পোশাক কারখানার মালিক, শ্রমিকনেতা, সরকারের তিন উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বেশ কিছুদিন ধরে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানা বন্ধের ঘটনা ঘটছে। আজও আশুলিয়া এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে অর্ধশত কারখানা বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে সংকট সমাধানে পথ খুঁজতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিজিএমইএ।

মতবিনিময় সভার শুরুতে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, বর্তমান অবস্থায় সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে তাঁরা কারখানা চালাবেন, না হলে বন্ধ রাখবেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ অর্থায়নের ব্যবস্থা না করলে আমরা বেতন দিতে পারব না। আজকে এ বৈঠকে সকলে মিলে সমাধান দেবেন, যেন আগামীকাল (রোববার) থেকে নির্বিঘ্নে কারখানা চালাতে পারি।’

তদন্তের দাবি

সভায় বেশ কয়েকজন কারখানামালিক বক্তব্য দেন। টানা ১৩ দিন বন্ধ থাকার পরে আজ কাজ শুরু হয় আশুলিয়ার অনন্ত গার্মেন্টসে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি এনামুল হক খান সভায় বলেন, আমার কারখানায় শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরেও আন্দোলন অব্যাহত ছিল। অনেক কারখানায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিশদ তদন্ত করা প্রয়োজন।

ডেকো লিগেসি গ্রুপের এমডি কল্পন হোসেন বলেন, আন্দোলন শুরুর চার দিন পরে শ্রমিকেরা তাঁদের দাবি জানিয়েছেন। এতে বোঝাই যাচ্ছে, কারও উসকানিতে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। রাইজিং গ্রুপের এমডি মাহমুদ হাসান খান বলেন, যে কেউ আইন অমান্য করলে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা নিশ্চিত হলে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে।

পোশাকশিল্পের মালিকেরা জানান, এরই মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে ক্রয়াদেশ (অর্ডার) চলে যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশ।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের যেকোনো ন্যায্য দাবি কারখানায় বসেই সমাধান করা সম্ভব। এ নিয়ে সবাইকে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে।

সমাধান চান শ্রমিকনেতারাও

সভায় চারজন শ্রমিক নেতা বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, পোশাক কারখানায় মধ্যম স্তরের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েও ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে যখন শ্রমিকেরা মাঠে নেমেছেন, তখন আন্দোলনকে বহিরাগত ও পাশের দেশের ষড়যন্ত্র বলা হচ্ছে।

পোশাক কারখানায় বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কার্যকর নেই বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে শ্রমিকনেতারা কথা বলতে পারেন না। চার শতাধিক শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছে। এসবের সমাধান প্রয়োজন।

পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুত সমস্যার সমাধানের জন্য তাগাদা দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ। একই সঙ্গে তিনি শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না, সে আহ্বানও জানান।

পরে বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, আনিসুর রহমান সিনহা, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, সাভার-আশুলিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

অস্থিরতার তিন কারণ

সভার একপর্যায়ে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয় বক্তব্য উঠে আসে। তিনটি প্রধান কারণে তৈরি পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান। তিনি বলেন, কিছু বহিরাগত ব্যক্তি কারখানা আক্রমণ করেছিল। সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়। বিষয়টির সাময়িক সমাধান হয়েছে; কিন্তু টেকসই সমাধান আসবে রাজনৈতিকভাবে। তবে অস্থিরতার তৃতীয় কারণ হচ্ছে কারখানার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নয়; বরং মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ না হয়, সেটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান শিল্প পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিবগাত উল্লাহ।

কারখানা খোলা থাকবে

সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে চলমান সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, প্রতিযোগী অন্য দেশগুলো আমাদের পোশাকের ক্রয়াদেশ নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা যেন সে সুযোগ না দিই। দেশকে বাঁচাতে হলে পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে হবে।

সভার শেষ পর্যায়ে আগামীকাল (রোববার) শিল্পকারখানা খোলা রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চান কারখানার মালিকেরা। তখন উপস্থিত উপদেষ্টা, পোশাক কারখানার মালিক, শ্রমিকনেতারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন।

পরে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল (রোববার) সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা হলে সোমবার থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩ এর ১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। যদিও পরে বিজিএমইএ এক বিবৃতিতে ‘আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধের’ কথা জানায়।

আগামীকাল দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা চলবে উল্লেখ করে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, কোনো কারখানায় যদি অস্থিরতা তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। তবে দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করে, তাহলে সেটিও মনে রাখা হবে।

এর আগে সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, শ্রমিকদের অভিযোগগুলো সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটি শ্রমিকদের অভিযোগ ও দাবি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর হবে সরকার।

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় বাকি সবার মতো শ্রমিকেরাও তাঁদের কথা বলছেন। শিল্পমালিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনে বহিরাগত ব্যক্তিদের যুক্ত থাকার কথা বলা হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত (জেনুইন) সমস্যা রয়েছে। অনেক কারখানায় বেতন আটকে আছে। এসব সমাধান করতে হবে। মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাব, শ্রমিকদের মধ্যে যেন পুঞ্জীভূত ক্ষোভ তৈরি না হয়, সে জন্য নিয়মিত শ্রমিকদের সঙ্গে বসুন।’

বড় অনিশ্চয়তায় বস্ত্র খাত

রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। হোমটেক্সটাইলসহ অন্যান্য সমজাতীয় পণ্য হিসাবে নিলে পোশাক থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৭ শতাংশ। রপ্তানি পণ্যের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সুতা ও কাপড়ের উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দিয়ে থাকে দেশের বস্ত্রকলগুলো। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে জোগান দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে আসছে এসব কারখানা। 

স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী পোশাকের কাঁচামালের দেশীয় জোগান এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের চেয়ে আমদানিতে দাম কম পড়ছে। এ কারণে তৈরি পোশাক উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন রপ্তানিকারকরা। এতে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে দর প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না দেশীয় বস্ত্রকল। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৩৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। ক্রমাগত আর্থিক লোকসানে অন্তত ৫০টি বড় বস্ত্রকল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কলের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ বিকল্প পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে বেকার। 

বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শিল্পে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব এবং দুই বছর আগের তুলনায় উপকরণের তিন গুণ দামের কারণে স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কেজিতে ২৪ টাকা। গত জুলাই থেকে মজুরি বেড়েছে বস্ত্র খাতে। এ বাবদ কেজিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে আরও ২৫ টাকা। এই দুই বাড়তি ব্যয়ের কারণে এক কেজি সুতা উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে ৪৯ টাকা। কাপড়ের ক্ষেত্রেও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ চিত্রের বিপরীতে সুতা ও কাপড় আমদানির উৎস দেশগুলোর চিত্র একেবারেই বিপরীত। নিজস্ব তুলা, গ্যাস-বিদ্যুতের সহনীয় দামের কারণে চীন ও ভারতে ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এর ওপর এসব দেশ বিভিন্ন কায়দায় প্রণোদনা দিচ্ছে, গড়ে যার হার ২০ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই দফায় বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। 

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২ থেকে ৩ সেন্ট কম পেলেই বিদেশি ব্র্যান্ড-ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়। পোশাকের রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তুমুল এ দর প্রতিযোগিতার কারণে বাধ্য হয়ে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন। 

নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত এমবি নিট কারখানা একসময় স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল ছিল। এখন কারখানাটি প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। সম্প্রতি কোম্পানিটি প্যারিসভিত্তিক একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ পিস জার্সি সরবরাহের জন্য ভারত থেকে ১৭৫ টন সুতা আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। সুতার কেজিপ্রতি দর পড়েছে ২ ডলার ১৭ সেন্ট। দেশে একই মানের এক কেজি সুতার দর এখন ২ ডলার ৬০ সেন্ট। অর্থাৎ আমদানিতে কেজিতে সাশ্রয় হয়েছে ৪৩ সেন্ট। এমবি নিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, স্থানীয় সুতা ব্যবহার করলে যে বিকল্প নগদ সহায়তা পাবেন, তা বাদ দেওয়ার পরও ভারত থেকে আমদানিতে তাঁর সাশ্রয় হয়। 

বুনবক্স অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা

পরিচালক আক্তার হোসেন সমকালকে বলেন, স্থানীয় বস্ত্র কারখানা থেকে সুতা ও কাপড় কিনলে এক ঘণ্টার নোটিশেই কারখানায় চলে আসে। এতে লিড টাইমের সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশের টাকা দেশে থাকে। যেখানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকটকালে অর্থনীতি চাপে পড়ছে। 

৬ মাসে সুতা আমদানি বেড়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৫ টন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন–এই ছয় মাসে আগের একই সময়ের চেয়ে সুতা আমদানি বেশি হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৫ টন। এ সময়ে সুতা ও কাপড়ের কাঁচামালের মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৯ টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৪ টন। বাড়তি আমদানিতে ৫ হাজার ৫৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ টাকা ব্যয় হয়েছে। বস্ত্র খাতের লিটিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলমের মতে, এনবিআরের তথ্য প্রকৃত আমদানির এক-তৃতীয়াংশেরও কম। সমকালকে তিনি বলেন, অসত্য তথ্য দিয়ে অনেক সুতা ও কাপড় দেশে আসছে। চোরাই পথে আসে তার চেয়েও বেশি।

ভারতীয় বস্ত্র খাত ২০ শতাংশ প্রণোদনা ভোগ করছে

বস্ত্র খাতের প্রধান প্রতিযোগী ভারত দেশটির বস্ত্র ও পোশাক খাতকে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে। বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে প্রায় সব খাতে। জমির দাম, ব্যাংক সুদ, বিদ্যুৎ, শ্রমিক মজুরি, শ্রমিকদের বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্পের মূলধন–এসব খাতে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ ছাড়া স্ট্যাম্প ডিউটিসহ সরকারি বিভিন্ন ফি মওকুফ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটক, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার–সব প্রদেশের বস্ত্র খাত বিভিন্ন হারে প্রণোদনা ভোগ করছে। বিহারে কারখানা স্থাপনের উপযোগী জমি তৈরি করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলধনি যন্ত্রের মোট মূল্যের ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। 

প্রতিযোগী দেশে যখন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তখন দেশে বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। জাহাজীকৃত রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দু’দফায় ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে রপ্তানিতে দেশীয় বস্ত্রের ওপর ২ শতাংশ নগদ সহায়তা ছিল, যা আধা শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত নগদ সহায়তা ৪ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা হয়। 

আউটপ্যাচ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার জানান, নানামুখী খরচের মুখে এতদিন বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে নগদ সহায়তা ছিল উদ্যোক্তাদের কিছুটা ভরসার উৎস। একে তো গ্যাসের সংকট, অন্যদিকে দাম বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। গ্যাসের এ পরিস্থিতির বাইরে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ডলার সংকটে তুলা আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংক সুদের হারও অনেকে বেড়েছে। অন্যান্য কারণের সঙ্গে এসব কারণেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশের বস্ত্র খাত পিছিয়ে পড়ছে। বেশির ভাগ কারখানাই চলছে দায়-দেনায়। 

ইউরোপে জিএসপি প্লাস নিয়ে শঙ্কা

দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি হিসেবে জোটে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি কাতার থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। অবশ্য উত্তরণের পর অতিরিক্ত তিন বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২০২৯ সালের পর নতুন স্কিম জিএসপি প্লাস সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে ইইউর নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে উৎস বিধির শর্তে স্থানীয় বস্ত্র ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা থাকবে। কিন্তু আমদানি নির্ভরতায় দেশীয় বস্ত্র খাত দুর্বল কিংবা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে ইইউ জোটে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া যাবে না। পোশাকে মূল্য সংযোজন আরও কমবে। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের দীর্ঘমেয়াদি সংকট পোশাক রপ্তানিতে বাজে পরিণতি ডেকে আনতে পারে। 

স্থানীয় বাজারও এখন আমদানিনির্ভর

বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, বস্ত্র ও পোশাকের স্থানীয় বাজারের আকার ১৪ হাজার কোটি টাকা। কাপড়ের চাহিদা বছরে ৮ বিলিয়ন মিটার। রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড়ের পাশাপাশি স্থানীয় বস্ত্রের শতভাগ চাহিদা দেশীয় বস্ত্রকল মেটাতে সক্ষম। বিটিএমএর সদস্য কারখানা ৫১৯টি। এর মধ্যে শতভাগ স্থানীয় বাজারের জন্য সুতা তৈরি করে ২০০ কারখানা স্থানীয় বস্ত্রের জোগান দিয়ে থাকে। বিদেশি বস্ত্রের অসম দর এবং অবৈধ প্রবেশে স্থানীয় বস্ত্র খাত সংকটে পড়েছে।

লিটিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, আমদানি চালানে উল্লিখিত ঘোষণার তুলনায় পরিমাণে বেশি সুতা ও কাপড় আনা হচ্ছে অসত্য ঘোষণার মাধ্যমে। এর বাইরে চোরাচালানের মাধ্যমেও একটা বড় পরিমাণ সুতা ও কাপড় ঢুকছে দেশের বাজারে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আসা এসব সুতা ও কাপড়ের দর স্থানীয় পণ্যের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। কিছু পোশাক কারখানা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সুতা ও কাপড় অবৈধভাবে স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। সুতা ও কাপড়ের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান এবং চীন থেকে অবৈধ পোশাক প্রবেশ করছে দেশে। অনলাইন মাধ্যমে পাকিস্তানের ড্রেস ও ড্রেসের সরঞ্জাম আসছে অবাধে, যা স্থানীয় বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে।

‘Neighbour country, Awami League inciting anarchy thru protests in RMG sector’

The fallen Awami League (AL) party and the apparently-friendly neighbouring nation India, are allegedly instigating unrest among workers in Bangladesh’s readymade garment industry, with claims suggesting a plot to destabilise the country’s economic backbone.

Industry insiders and government officials assert that the unrest is part of a broader effort to create chaos and potentially relocate the vital sector to India. The accusations, they said, are fuelled as the ongoing protests’ patterns are different from the last one and a half decades of unrest.

They further claimed that same evil design was applied during the labour unrests of 2005-06. This time, however, the rationale behind the demands appears weaker, with only a small faction inciting chaos in the Ashulia and Savar industrial zones.

On Wednesday, a group of miscreants set fire to a factory, Big Boss, in the Bhabanipur area of Gazipur, confirmed Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA) Director Mohiuddin Rubel.

In response to the unrest, 116 factories announced closures on Thursday, with 75 implementing the “no work, no pay” policy under section 13/1 of the Labour Act.

‘Seizing relocated orders’

Commenting on the issue, Little Star Spinning Mills Chairman Mohd Khorshed Alam told The Business Post, “The neighbouring country is behind the ongoing unrest. Their aim is to tarnish Bangladesh’s reputation by inciting chaos, and then capitalise by seizing relocated orders.”

“If challenged, I am ready to prove this. The workers themselves are not involved—it’s a small group of 30-40 individuals who gathered at the factory gates to incite protests. Factory owners have been forced to shut down operations to safeguard their facilities,” he asserted.

The RMG company chairman confirmed that “this is the true situation behind the current unrest.”

Meanwhile, Asif Mahmud Shojib Bhuiyan, adviser to the Ministry of Labour and Employment said that following the labour unrest, the interim government has decided to review the RMG workers’ minimum wages.

Segueing to the protest situation, the Labour Grievance Monitoring Committee, constituted by the Ministry of Labour and Employment, had their first meeting on Thursday in Dhaka and decided to visit the industry zones of Ashulia and Savar areas on Sunday.

The committee also believes that the Awami League and India are fuelling the ongoing protests, although some of the workers’ demands are reasonable and should be addressed by factory owners in the interest of the sector and the country.

During the meeting, the members of the Labour Grievance Monitoring Committee discussed the presence of a significant number of Indian nationals working in the RMG industry as officials, with some possibly playing a role in the unrest. Video evidences were reportedly addressed showing ousted AL members and their affiliated wings directly involved in acts of vandalism and inciting workers to create chaos.

Committee member Advocate Atiqur Rahman said, “We have put forward several immediate recommendations for the interim government to address the unrest. The committee strongly believes that the Awami League and external forces, particularly India, are contributing to the ongoing disruption.

“We see this as an attempt to destabilise the incumbent interim government. We urge workers, factory owners, law enforcement agencies, and citizens—especially students—to stand united with the RMG sector and uphold the spirit of the revolution,” he urged.

According to the BGMEA, the ongoing protests began on August 19 at the Dhaka EPZ gate, where a vested group started demonstrating which then spread to nearby factories. Although the initial impact was minimal, claimed the trade body, the impact as of now has spiralled.

Close ties with Hasina

Industry insiders, workers and law enforcement sources reported that on August 31, some 10,000 workers of the Nassa Group began vandalising factories. They forced other factory owners, including Al-Muslim Group, to shut down and instigated the workers there to join the protests.

The Nassa Group workers also vandalised several factories as owners and workers refused to halt production. Since then, these areas have seen ongoing labour unrest and frequent factory closures.

Fuelling the implications of inciting anarchy, it is worth noting that Nassa Group Chairman Nazrul Islam Mazumder is closely tied with the former ousted prime minister Sheikh Hasina. Recently, Bangladesh Bank dissolved the EXIM Bank board, in which Mazumder served as chairman as well, citing financial irregularities.

Law enforcement agencies explained that the jhut business was previously controlled by local Awami League leaders. After the authoritarian Awami League regime was overthrown by a student-led revolution on August 5, local BNP-backed leaders tried to take control of the business.

Meanwhile, fallen AL is attempting a political comeback, with significant support within the RMG sector, they claimed.

“As the RMG sector is the backbone of Bangladesh’s economy, Awami League has chosen this sector, and in cohorts with India, are trying to take control of this sector, creating instability in this export-driven industry,” a Law enforcement agencies’ meeting insider told The Business Post, citing reports from law enforcement agencies.

In the meantime, BGMEA Director Md Ashikur Rahman Tuhin said, “It is clear that a vested group is trying to create instability within the RMG sector. Previously, workers demonstrated with some concrete demands. However, the ongoing protestors do not have any logical demands.

“Even, though workers regularly come to the factories, we have been forced to close operations due to the outsiders’ violence.”

পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ আগেই নেওয়া হচ্ছে

পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা সাধারণত পাঁচ বছর পরপর করা হলেও এবার তা আগেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।

আন্তমন্ত্রণালয় সভায় একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। ১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ছয়টি জেলার কারখানায় অসন্তোষ হয়েছে বলে উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়। সবচেয়ে বেশি অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর জেলায় অবস্থিত ২৩৪টি কারখানায়। আর ঢাকা জেলার ১৬৮টি কারখানা অসন্তোষের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ৩৯টি, ময়মনসিংহে ২১টি, চট্টগ্রামে ১৯টি, পাবনায় ২টি ও নরসিংদীতে ১টি কারখানায় অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, বৈঠকে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার কাজ শুরু করাসহ মোট আটটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ কোনো বক্তব্য তুলে ধরা হয়নি।

১০ মাস আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে গ্রেড ভেদে শ্রমিকদের মজুরি আগের তুলনায় সর্বনিম্ন ৫৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পোশাকশ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। মজুরিকাঠামোয় ১ নম্বর গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের সর্বোচ্চ মোট মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। সেই হিসাবে ৫ বছরের ব্যবধানে এ গ্রেডে মোট মজুরি বেড়েছে ৫ হাজার ১৬০ টাকা।

পাঁচ বছরের আগেই পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন? এ নিয়ে ব্রিফিংয়ের পর বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের কথা শুনব। প্রয়োজনে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা করতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।’

আরও যেসব সিদ্ধান্ত এল

আজ নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের ব্যবস্থা করা, শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা, বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে ঋণ বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

এ ছাড়া প্রতিদিনের মাঠপর্যায়ের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, স্থানীয় পর্যায়ে শ্রম অসন্তোষ নিরসন কমিটি করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদসহ বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন করা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও যথাসম্ভব মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মানুষের মধ্য থেকে এসেছি। এসেছি মিছিল থেকে। আমরা মাঠপর্যায়ে (কারখানা) যাব। শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।’ আগের সরকারের আমলে শ্রম আদালতের প্রতি শ্রমিকেরা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তাঁরা কাজ করছেন।

শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পোশাক খাতে কিছুটা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। যদিও তা সারা দেশে নয়, একটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতে। শ্রমিকদের অনেক দাবিই যৌক্তিক। আবার এর মধ্যে অনেক গোষ্ঠীও ঢুকে গেছে। অসন্তোষ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে না পারলে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।

ব্রিফিংয়ের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের মাজার রোডে শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনে মতবিনিময় সভা করবেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এরপর তিনি জাবের অ্যান্ড জোবায়ের গার্মেন্টস কারখানা, টঙ্গী বিসিকে এভার ফ্যাশন ও টঙ্গী স্টেশন রোডে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ পরিদর্শন করবেন।

শ্রমিকদের দাবি কী কী

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় শ্রমিকদের ২৫টি দাবি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, শ্রমিকেরা প্রতি মাসের ৭ তারিখে মজুরি চান। পাশাপাশি বার্ষিক ১০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এবং অর্জিত ছুটির টাকা মাসের ১৮ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে পরিশোধ চান তাঁরা।

দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বর থেকে টিফিন বিল ৫০ টাকা, বি শিফটের জন্য নাইট বিল ১৫০ টাকা ও দুপুরের খাবার বিল টাকা ৪০ টাকা করা; রোজার সময় ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হলে ৫০ টাকা ইফতার বিল দেওয়া; পরবর্তী বছর থেকে পয়লা বৈশাখের ছুটি দেওয়া; বার্ষিক উৎসব ছুটি ১৪ দিন করা; বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতের দিন ছুটি দেওয়া; ঈদের ছুটি ১১ দিন করা; কারখানায় কাজ শুরুর সময় সকাল আটটা করা; কারখানাগুলোয় ৭০ শতাংশ পুরুষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া; কেউ অনুপস্থিত থাকলে চাকরি থেকে বাদ না দেওয়া।

এ ছাড়া ছুটি পাস হলে হাজিরা বোনাস পুরোপুরি এক হাজার টাকা করে দেওয়া; শ্রমিকদের গালাগালি না করা; নামাজের জন্য সময় দেওয়া; মাতৃত্বকালীন ছুটির সম্পূর্ণ টাকা ছুটি শুরুর আগেই পরিশোধ করা; শুক্রবার বা কোনো বন্ধের দিন কাজ করলে ওভারটাইমের দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করা; কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই না করা; পাঁচ বছরের বেশি চাকরি করে কেউ পদত্যাগ করলে প্রতিবছরের জন্য এক মাসের মূল বেতন দেওয়া; ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে টিফিন বিল দেওয়া; শ্রমিকদের দাবি আদায়ে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের বহিষ্কার না করা এবং বার্ষিক বনভোজন বাধ্যতামূলক করা—শ্রমিকদের পক্ষে থেকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, আগে যতবারই মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে এ মজুরি যা হওয়া উচিত, তার ধারেকাছেও যায়নি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে শ্রমিকেরা কষ্টে আছেন। আবার এ–ও ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শ্লথ। কারখানাগুলোকেও টিকে থাকতে হবে। মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিকেও বিবেচনায় রাখতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মজুরি বৃদ্ধির সময়সীমা পাঁচ বছরের পরিবর্তে দুই থেকে তিন বছরে নামিয়ে আনা যেতে পারে। আর মজুরির পুরো দায় কারখানামালিকের ওপর না চাপিয়ে বিদেশি ক্রেতাদেরও নিতে হবে। ক্রেতারা পণ্যমূল্য ৫ থেকে ১০ সেন্ট বাড়ালেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের একটু ভালো মজুরি দেওয়া সম্ভব। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে এ ব্যাপারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

RMG BANGLADESH NEWS