Home Blog Page 41

বিদেশি চক্রান্তে গার্মেন্টসে অস্থিরতা!

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প এখন সংকটে। কথায় কথায় কারখানায় বিক্ষোভ, ধর্মঘট, আন্দোলন আর দাবিদাওয়ার কবলে পড়ে ক্রয়াদেশ ও উৎপাদন ঝুঁকিতে। নানা ছুতায় কর্মীরা অপ্রচলিত ইস্যু সামনে এনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে খারাপ বার্তা যাচ্ছে বহির্বিশ্বে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান এই খাত নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে ষড়যন্ত্রের।

উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের শত প্রচেষ্টার মধ্যেও শিল্পে স্থিতিশীলতা না ফেরায় তাঁরাও এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রের শিল্প ধ্বংসের ইন্ধন রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন। তাঁরা বলেন, আর্থিকভাবে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিদেশি অদৃশ্য শক্তি টাকা ছিটিয়ে দেশি এজেন্টদের দিয়ে শিল্পাঞ্চলগুলোকে অস্থিতিশীল করার জন্য পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে বলেও তাঁদের ধারণা।

এদিকে গতকালও অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কায় সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের অন্তত ৬০টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক করেন পোশাকশিল্প মালিকরা। অন্যদিকে শ্রমিকরাও অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে তাঁদের ১৮ দফা দাবি জমা দিয়েছেন।

জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই পুরো পোশাক খাত একটি খারাপ সময় পার করছে। কয়েক মাস আগে বেতনসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরও থেমে থেমে নানা দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামছে কর্মীদের একাংশ। শ্রমিকদের আগের সরকারের দলীয় একটি চক্রসহ আরো নতুন নতুন গোষ্ঠী প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সরকারের নানা প্রচেষ্টার পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। এমনকি সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার পরও থামছে না অস্থিরতা। এ জন্য নেপথ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পোশাক খাতে অস্থিরতার ফলে ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কেউ কেউ বলছেন, তাঁদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ কমে গেছে। বৈশ্বিক ক্রেতারা ভারতসহ অন্য দেশে তাদের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি যখন ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, তখন ভারতে পোশাকের ক্রয়াদেশ ১২ শতাংশ বেড়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে একটি চক্রের ইন্ধন দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদকের কাছে একটি ভিডিও এসেছে, যেখানে একজন নারী শ্রমিক নেত্রীকে আগের সরকারকে ফেলে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনে বর্তমান সরকারকেও ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতে শোনা যায়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো জানা যায়, আগের সরকারের দলীয় সুবিধাভোগীদের একটি অংশ এর সঙ্গে জড়িত। পালিয়ে যাওয়া অনেক নেতা আবারও পোশাক শিল্পাঞ্চলে ফিরতে শুরু করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পোশাকশিল্পের চলমান অস্থিরতার ফলে লাভবান হচ্ছে প্রতিযোগী দেশ ভারত। সম্প্রতি ভারতে রপ্তানি বেড়েছে, আর দেশের কর্মসংস্থান কমছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বড় বড় পোশাক ব্যবসায়ীর নজরদারিতে আনলেই এর প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। পরিস্থিতির অবনতিতে কার্যাদেশ এবং বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তা বলেন, দেশের পোশাকশিল্পে অস্থিরতায় ভারতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে তাদের রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। শুধু আগস্টেই তাদের আয় হয়েছে ১২৬ কোটি ডলার। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত রপ্তানি থেকে ভারতের আয় হয়েছে ৬৩৯ কোটি ডলার। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি লজিস্টিক খরচ ও মূল্যস্ফীতির মতো সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে ভারত।

বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি ও বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। এর মধ্যে রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে উল্লেখ করে নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামিম ইহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই শ্রমিক আন্দোলন কোনো সাধারণ আন্দোলন নয়। এখানে বিদেশি শক্তি ঢুকে পড়েছে। ফলে শ্রমিক আন্দোলনের নামে দেশের পোশাকশিল্পসহ সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বহিরাগতরা এসব করছে। এই আন্দোলনে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বেকার যুব সংগঠনের নামে কারখানা ভাঙচুর করছে। এটা কোনো শ্রমিকের কাজ নয়।’

দেশের পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতার পেছনে বিদেশি ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্য ছড়িয়ে একটি মহল শিল্প এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এ খাতে অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে যেতে পারে।’

এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে গতকাল গার্মেন্টসশিল্প সেক্টরের শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হয়। এ সময় শ্রমিক নেতারা ১৮ দফা দাবি জানান। এর মধ্যে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ অন্যতম। শ্রমসচিব জানিয়েছেন, চলমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আজ দুপুরে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে জানা যায়, মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে করা। ২৭ কারখানায় ন্যূনতম মজুরি দ্রুত বাস্তবায়ন করা, চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান করা, সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ১৭ ধারাসহ অন্যান্য ধারা সংশোধন করা, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ, শ্রমিকদের জন্য রেশনব্যবস্থা, বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক কালো তালিকা না করা, বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা, সব ধরনের হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে আইন করা, কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ প্রদান করা, জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণের জন্য তদন্ত করা,  শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা এবং মহিলা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করা।

গাজীপুরে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, ৬০ কারখানায় ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  জানান, গতকাল সোমবারও চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। অবরোধের কারণে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা, চৌধুরীবাড়ি, ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা হারিকেন, কাশিমপুর ও টঙ্গীতে বেশ কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করেন। বিক্ষোভ করেন সাইনবোর্ড, জিরানি বাজার, কোনাবাড়ী, বাসন, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গতকাল গাজীপুরে ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানান গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ।

গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আরমান হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশ বেকার সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার আমরা আলোচনা করেছি। গতকাল থেকে তাঁদের কোনো কর্মসূচি থাকার কথা ছিল না। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বেকারত্বের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার তাঁদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও সকালে কয়েক শ লোক ভোগড়া বাইপাসে একত্র হয়ে আন্দোলনে নামেন।’

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ বলেন, ‘বিক্ষোভ চলাকালে টঙ্গীতে ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, কাশিমপুরে গ্রামীণ টেক্স, ডরিন গার্মেন্টস ও নরভান গার্মেন্টস কারখানায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালান। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান।’

শ্রীপুরে সিরামিক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১১ দফা দাবিতে একটি সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দফায় দফায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ও শিল্প পুলিশ সেখানে পৌঁছে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার কথা বললে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা।

উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এই আন্দোলন করেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কারখানার কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতের নাগরিক রয়েছেন। তাঁদের অপসারণ করতে হবে। এ ছাড়া বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মজুরি ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধিসহ (ইনক্রিমেন্ট) তাঁদের ১১ দফা দাবি রয়েছে।

পোশাক খাতে অস্থিরতা চলছেই, আবার বসল বিজিএমইএ

গতকাল উত্তরায় সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে উদ্যোক্তাদের ‘জরুরি মতবিনিময়সভা’য় ডাকা হয়। বৈঠকে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি, সদস্য কারখানাগুলোর মালিক, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইসহ বিভিন্ন অংশীজন। এ সময় তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি করেন।

Govt, RMG factory owners accepting workers’ demands a welcoming development

The government and garment factory owners accepting the 18-point demand from garment workers is a welcoming development. I hope this will put an end to all the vandalism and unrest.

Factories need to run smoothly now and clear the backlog.

The damage done to the industry is evident as we have seen orders being diverted and placed in other competing countries.

Today we have seen in the news that we can expect elections to take place after 18 months. With the history of violence centring elections, we can assume that we will not see increasing orders coming in.

This unfortunate series of events will have a negative impact in the near future.

Also, investments which were in the pipeline are on hold or cancelled. So, double-stage transformation requirements and carbon reduction strategies will now take a backseat.

Most of the garments have because of the chain of events become financially affected.

So, in the coming days, there will be some tough challenges and in the near future, the industry will go through consolidation with many factory closures, especially with the current monetary policy.

Sincerely hope we will see all factories operating from tomorrow so we can create a new chapter and move forward.

55 factories in Ashulia still remain closed

At least 55 factories in Ashulia industrial area remain closed amid workers protest and dissatisfaction.

Among them, 46 are closed under section 13 (1) of Bangladesh Labor Act 2006 (no work-no pay) and 13 have announced general holidays.

Apart from this, normal operations are continuing in other factories in the industrial area including Dhaka EPZ.

Labour leaders say that many factory workers arrived at the factories in the morning, but returned after finding the factories to be closed.

According to Superintendent of Industrial Police Mohammad Sarwar Alam, the factories that have stopped production are mainly located on Bypail-Abdullahpur road in Ashulia.

However, even if 55 factories are closed, not all of them are due to their workers protesting. Workers of only 10/12 factories are protesting which is causing unrest in chaos in the neighbouring factories, said the SP.

It is also reported that among the factories which are open, workers have stopped work in some factories due to various demands.

However, there was no news of any roadblock or any untoward incident anywhere in the industrial area today, added the SP.

In order to strengthen security, patrolling activities are ongoing in the industrial areas with additional members of law enforcement forces deployed in front of various factories.

BGMEA says the number is 35

Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA) says production operations have been halted in 35 factories in Ashulia.

Among them, 29 factories are closed under Bangladesh Labour Act Section 13(1). The number of factories which were closed after opening in the morning or announced general holiday is six.

Factories closed under Section 13(1) of the Labor Act include Hamim Group, Anant Group, Ducati Apparels, NASA Group, New Age Group, Bando Design, Yagi Bangladesh Limited, Envoy Group, Vintage Garments, Generation Next.

In addition, the factories that have announced paid holidays or work is halted include Sidko Group, The Rose Dresses ltd, FnF trend Fashion, Trousers Line Ltd, Wucho Fashion, Fashion Forum Ltd.

BGMEA said that today 407 factories are open in Savar, Ashulia, Jirani area, on the contrary 35 are closed and in Gazipur 876 factories are open whereas four are closed.

The number of factories that remain open in Narayanganj, Dhaka and Chattogram are 209, 302 and 350. No factories are closed in these areas.

According to BGMEA, 267 (98.16%) factories in Ashulia area have paid their salaries for the month of August, and 5 (1.83%) factories have not paid their salaries.

3 new RMG factories get Leed certification

Three more readymade garment (RMG) factory units in Bangladesh have obtained United States Green Building Council’s (USGBC) leadership in energy and environmental design (Leed) certificates recently, according to the BGMEA.

With this, Bangladesh has further solidified its position as a global leader in environmentally friendly apparel manufacturing.

It now boasts 226 Leed-certified factories, including 91 platinum-rated, 124 gold-rated, 10 silver-rated, and four certified factories.

In August, Unitex Spinning Ltd Unit-2, a factory unit based in Sitakunda, Chittagong, received a platinum certificate from the USGBC at Leed O+M: Existing Building v4.1 rating system with a score of 83.

Sepal Garments Ltd, a Gazipur-based factory unit, also obtained a platinum certificate from the USGBC at Leed O+M: Existing Building v4.1 rating system with a score of 85 in August.

Ananta Huaxiang Limited, a factory unit based in Narayanganj, also obtained a gold certificate from the USGBC at Leed O+M: Existing Building v4 rating system with a score of 63 in August.

Currently, 61 of the world’s top 100 Leed factories, including nine of the top 10 and 18 of the top 20, are in Bangladesh.

This achievement is poised to attract additional investment and partnerships, cementing Bangladesh’s reputation as a sustainable manufacturing hub.

Moreover, Bangladesh is also home to the highest and the second-highest-scoring green factories.

The rapid increase in Leed-certified green factories in Bangladesh is a clear and direct result of the garment industry’s unwavering commitment to environmental sustainability.

This dedication to sustainability is crucial for ensuring this industry’s long-term viability and success.

Another 550 factories are waiting to get the USGBC’s Leed certification.

The factory units of Bangladesh have been obtaining the Leed certificate since 2001.

USGBC honours factories based on several criteria: transformation performance, energy, water, and waste management. The best performers are rated platinum, followed by gold and silver.

According to industry insiders, these criteria help green factories significantly reduce operational costs over time, even though they may initially cost more to set up.

These factories also provide a safe working environment for employees.

BGMEA Director Mohiuddin Rubel told Dhaka Tribune that it was thrilling to see Bangladesh’s RMG industry’s incredible progress towards sustainability.

“The rise in Leed-certified factories is a true testament to our collective commitment to a greener future, this is a game-changer. It is imperative to understand the growing importance of sustainable practices,” he further said.

He also said that consumers worldwide increasingly demand eco-conscious clothing, and Bangladesh is stepping up by embracing Leed certification. Bangladesh is not just protecting the environment but also strengthening its position as a responsible global player.

“This translates into a stronger brand reputation for Bangladesh, attracting investment and ensuring long-term success for the RMG sector. It’s a win-win for everyone – the environment, our industry, and ultimately, the future of fashion,” he added.

According to apparel manufacturers, the move towards green factory buildings helped regain Bangladesh’s image after the Rana Plaza tragedy, which claimed 1,134 lives and left more than 2,000 injured.

আশুলিয়ায় ২৫টি ছাড়া সব কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক

ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় পুরোদমে চলছে উৎপাদন। ২৫টি ছাড়া বাকি সব কারখানায় শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন শ্রমিকরা। শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ২০টি ও পাঁচটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন চারটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বুধবার সকাল থেকে টঙ্গীর বিভিন্ন কারখানার সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনের পর থেকে বন্ধ আছে কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম। কারখানাগুলো হলো মেঘনা সড়ক এলাকার এমট্রানেট গ্রুপের গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ লিমিটেড ও ব্রাভো অ্যাপারেল লিমিটেড, টঙ্গীর পশ্চিম থানা এলাকার খাঁ পাড়ায় সিজন ড্রেসেস লিমিটেড ও টঙ্গী বিসিকের টসিনিট কারখানা।

শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, চলতি সপ্তাহে আশুলিয়ায় নতুন করে কোনো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা প্রবেশ করে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে তারা বিভিন্ন দাবি তুলে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়া ইউসুফ মার্কেট এলাকার জেনারেশন নেক্সট কারখানা ও পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছেন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে লুসাকা গ্রুপের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে কয়েকটি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দিতে আমরা মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএর কাছে অনুরোধ করেছি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান, শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বুধবার অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন কারখানার সামনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে বুধবার বিকালে গাজীপুরের টঙ্গীতে সরেজমিনে কারখানাগুলোতে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিজন ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন বকেয়া আছে। বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেন মালিকপক্ষ। বাকি অর্ধেক বেতনের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কারখানায় কাজ বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। আট দফা দাবি জানিয়ে কারখানার ভেতর কর্মবিরতি পালন ও স্লোগান দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার টসিনিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। অপরদিকে ঈদ বোনাস, কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তার পদত্যাগ ও পর্যাপ্ত ছুটিসহ ১৩ দফা দাবিতে গত কয়েক দিন কারখানার ভেতর কর্মবিরতি পালন করেন গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ ও ব্রাভো অ্যাপারেল কারখানার শ্রমিকরা। সকালে কারখানায় এসেই কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভে নামেন কিছু শ্রমিক। পরে শিল্প পুলিশের অনুরোধে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে চলে যান। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (টঙ্গী জোন) মো. মোশারফ হোসেন জানান, গত কয়েকদিন যাবত এই চারটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে। শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আন্দোলন থামছে না।

পোশাক খাতের মালিকেরা বদলাবেন কবে

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বয়স ৪৫ বছর। ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস এই পোশাক খাত। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা। একক দেশ হিসেবে রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এত কিছু হলেও কেবল একটি জিনিসই বদলায়নি। আর তা হলো পোশাক মালিকদের আচরণ ও মনোভাব। এখনো পোশাক খাত পরিচালিত হয় সনাতন কায়দায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমনই কেবল শিখেছে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিকভাবে পোশাক মালিকেরা এখন এতটাই প্রভাবশালী, যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেদের স্বপক্ষে আনতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি শেখেনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এই সময়ের উপযোগী হতে হলে পোশাক খাত পরিচালনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য দরকার সংস্কার। কাজটি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। কারণ পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

সবার আগে মালিকদের সংস্কার

পোশাক খাতের মালিক সংগঠন দুটি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদে ছিলেন টানা ১৪ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে একবার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছিলেন, বাকি পাঁচবার সভাপতি হন সমঝোতার মাধ্যমে, চাপ দিয়ে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতেন তিনি, তাঁর ভাই শামীম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সেলিম ওসমানের প্রধান কাজই ছিল সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখা। তাঁদের দাপটে বিকেএমইএ ছিল একটি নামসর্বস্ব সংগঠন, শিল্পের স্বার্থে কোনো ভূমিকা ছিল না।

অন্যদিকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট পদ মানেই হচ্ছে সংসদ সদস্য বা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রবেশ করা। ফলে তাদেরও মূল কাজ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া। এখানে কাজ করে কেবল সরকার স্বার্থ ও মালিক স্বার্থ।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৩ জন পোশাক মালিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিজিএমইএ সংবর্ধনা দিয়েছিল নির্বাচিতদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। প্রয়াত আনিসুল হক পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিজিএমইএর শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে যায়। আনিসুল হক প্রয়াত হলে নতুন মেয়র হন বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরাই এ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন, সবাই মেয়র, সংসদ সদস্য অথবা দলে বড় পদ পেয়েছেন। যেমন ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের সভাপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা থেকে ও এর পরের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরের সভাপতি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি এখন পলাতক। এরপরের টানা চার বছরের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৫-০৬ সময়ের সভাপতি টিপু মুনশিও প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আরও অনেক আগে দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রীও ছিলেন রেদোয়ান আহমেদ। তারা বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।

বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মান্নান কচি নামে পরিচিত বিজিএমইএর এই নেতা গত প্রায় এক যুগ ধরেই কমিটিতে থাকতেন। সক্রিয় রাজনীতি করা মান্নান কচিকে কমিটিতে রাখাই হতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য।

গত ৪৫ বছরে বিজিএমইএ একটি কাজই ভালোভাবে শিখেছে, আর তা হলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আন্দোলন দমন, মজুরির দাবি যতটা কম রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা এবং সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন কিছু শ্রমিকনেতাও। যারা অর্থের বিনিময়ে মালিকদের সমর্থন করেন। বিশেষ করে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটেছে।

আসলে বিজিএমইএ বা ব্যবসায়ীদের মূল সংগঠন এফবিসিসিআই মূলত ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী শাখা। চেম্বারগুলোও তা–ই। সুতরাং সংস্কার করতে হবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোরই। তাহলেই ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার কমে আসবে।

আন্দোলন বনাম আলোচনা

মালিকপক্ষের অভিযোগ, যখনই পোশাক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয় না। অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়মতান্ত্রিক দর-কষাকষির ব্যবস্থা পোশাক খাতে নেই। ফলে আন্দোলনও আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘটে না।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পরে আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক খাতে শ্রমিক ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু রাখতে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শিথিল করা হয়। এখন পর্যন্ত এই শিল্পে নিবন্ধিত আছে ১৩০০ শ্রমিক ইউনিয়ন। বাকি ৭০ শতাংশ কারখানায় আছে অংশগ্রহণ কমিটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব ইউনিয়ন বা কমিটির নেতৃত্বে আছেন মালিকপক্ষের অনুগতরা। আর যাঁরা অনুগত নন, প্রতিটি আন্দোলনের পরে তাঁরা নানা হয়রানির মুখে পড়েন।

শেখ হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে দাবি আদায়ে আরও অনেকের মতো আন্দোলনে নেমেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। তবে অন্য সবাই কাজে ফিরে গেলেও অস্থিরতা রয়ে গেছে পোশাক খাতে। কারণ, এখন আর গোয়েন্দা সংস্থা বা শিল্প পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থামাতে পারছে না মালিকপক্ষ। এ অবস্থায় দাবি দাওয়া জানানোর জন্য যেমন একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায় বের করতে হবে, তেমনি তৈরি করতে হবে দাবি পূরণের আলোচনার পথ। আর যেকোনো আন্দোলন হলেই বাইরের ষড়যন্ত্র, বিদেশি ইন্ধন-এসব বলাও বন্ধ করা প্রয়োজন।

এবারের যত দাবি দাওয়া

এবারে শ্রমিকদের দাবি অন্তত ২০ ধরনের। একাধিক কারখানার লিখিত দাবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, বার্ষিক প্রণোদনা ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো, প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু, ১৫ দিন পিতৃত্বকালীন ছুটি, টিফিন বিল ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা, মোট বেতনের সমান ঈদ বোনাস দেওয়া, শুক্রবার কাজ করলে দুপুরের খাবারের বিল বৃদ্ধি, উৎসব ছুটি ২০ দিন, অর্জিত ছুটি ৩০ দিন, চিকিৎসাকালীন ছুটি ২০ দিন করা এবং বেতন দিতে হবে মাস শেষে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে।

শ্রমিকদের বাকি দাবি হচ্ছে, একবার বিনা মূল্যে আল্ট্রাসনোগ্রামের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া, ডে কেয়ার সুবিধা বৃদ্ধি, মাসিককালীন সময়ে দুই দিন ছুটি মঞ্জুর, এটিএম বুথ স্থাপন, গর্ভকালীন সময়ে ভিটামিন সি প্রদান এবং চক্ষু পরীক্ষা ও সানগ্লাস প্রদান ইত্যাদি।

পোশাক খাতে ২০২৩ সালে ঘোষিত সর্বশেষ নিম্নতম মজুরির ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল২০ হাজার ৩৯৩ টাকা, আর মালিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল ১০ হাজার ৪০০ টাকা। মালিকদের প্রস্তাবে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামলে চার পোশাকশ্রমিক মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মালিকপক্ষ নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরির প্রস্তাব দিলে পরে সেটিই চূড়ান্ত হয়। তারপরেও আন্দোলন চললে তা দমন করতে ৪৩টি মামলা এবং ১১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মজুরি নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এবার সরকার পতনের পরে মজুরি বাড়ানোর দাবি করছে না শ্রমিকপক্ষ। বরং তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছে।

মালিকেরা পেয়েছেন সবই

দেশে পোশাক খাতের জন্য প্রথম মজুরি বোর্ড হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, আর নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ৩০ বছর পরে সেই মজুরি বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। আর ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ছিল ২২৩ কোটি ডলার। সেই আয় এখন ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই আয় বৃদ্ধির পেছনে সরকার ও আন্তর্জাতিক নীতি সহায়তার একটি বড় ভূমিকা আছে।

যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠার আগে গ্যাট আলোচনার সময় থেকেই মাল্টি ফাইবার অ্যাগ্রিমেন্টের (এমএফএন) আওতায় বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে কোটাসুবিধা পেয়েছে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে কোটা ব্যবস্থা উঠে গেলেও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েনি বাংলাদেশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতেও একাধিক দেশ এখনো শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে।

অন্যদিকে ১৯৮২ সালের শিল্পনীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তখন রপ্তানিতে ডেডো বা ডিউটি ড্র ব্যাক ব্যবস্থা ছিল। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির সময় শুল্ক দিলেও রপ্তানি করার পর তা ফেরত পেতেন। বিলম্ব, দুর্নীতি ও প্রক্রিয়াগত সমস্যা হওয়ায় এর পরিবর্তে বন্ড-সুবিধা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে পোশাকমালিকেরা বিনা শুল্কে পোশাক তৈরির সব ধরনের কাঁচামাল আমদানি করতে পারতেন।

১৯৮৬-৮৭ সময়ে সরকার চালু করে স্থানীয় ঋণপত্র বা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে রপ্তানি আয় আসার পরেই ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে হতো। পোশাক খাতের অগ্রগতির পেছনে এই দুই নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন গবেষকেরা। এরপরেও সরকার বিভিন্ন সময় নগদ সুবিধাসহ নানা ধরনের কর ছাড় দিয়েছে। আবার যেকোনো সংকটে পোশাকমালিকেরা সরকারের কাছে হাত পেতেছেন, সরকারও সব দাবি পূরণ করেছে।

শুধু নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও করতে হবে

পোশাকমালিকেরা কখনোই মানতে চান না যে ব্যবসা ভালো চলছে। পোশাকমালিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলেই তাঁরা বলেন, ব্যবসার অবস্থা খারাপ, অর্ডার কমে যাচ্ছে, ক্রেতারা কম দামে পোশাক কেনেন, উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে এবং এখানে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কম।

অন্যদিকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন এমন নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, পোশাক মালিকদের বিত্ত আর জীবনযাপন দেখলে মনে হয় না যে ব্যবসা খারাপ। ২০২২ সালেও ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা। সেই ডলারের দর এখন ১২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলার রপ্তানি আয়ে আগের চেয়ে তাঁরা বেশি পেয়েছেন ৩৬ টাকা। তা ছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়াও দরকার। সর্বনিম্ন মজুরি দিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে না। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে।

পোশাক খাতের জন্য আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ঝুট ব্যবসা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। পোশাকমালিকেরা অনেক কম দামে ঝুট কাপড় রাজনৈতিক মাস্তানদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সরকার বদল হলে কেবল নিয়ন্ত্রক বদল হয়। যেমন এত দিন এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগের লোকজন, এখন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে বিএনপির লোকজন।

বর্তমান আন্দোলনে পেছনে তাদেরও ইন্ধন আছে। পোশাক মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে ঝুট কাপড়ের ন্যায্য দাম পেলে সেই অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা যেত। তাঁরা তা করতেন কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন। তবে অবশ্যই এর সমাধান দরকার। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের শাসন; যা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়মিত বেতন–ভাতা না দিলে কেউ না কেউ রাস্তায় নামবেই। বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো আন্দোলন থামাতে হলে পোশাক খাত ব্যবস্থাপনায়ই সংস্কার দরকার। এ জন্য মালিকদের মনোভাব ও আচরণের সংস্কার সবচেয়ে জরুরি। খালি নেওয়া নয়, দেওয়ার অভ্যাসও গড়তে হবে।

RMG workers to get food ration in future

Secretary of the Ministry of Labor and Employment, AHM Shafiquzzaman, said that they are thinking about the system of giving ration to the workers after talking to the owners of the garment factories.

RMG workers to get food ration in future
Figure: File Photo

He said these things while talking to the media on Saturday

The labor secretary said, the issue of ration is a long-term process. However, for the time being, an initiative has been taken to provide products at an affordable price to the workers through the Trading Corporation of Bangladesh (TCB).

He also said that the labor intensive areas of the country such as Savar, Ashulia, Gazipur, Tongi and Narayanganj are working on how to increase the supply of goods by trucks at a fair price beyond the TCB card. In the meantime, we have discussed to the Commerce Ministry and I have sent a DO to the Commerce Secretary.

AHM Shafiiquzzaman said, we are trying to sell TCB products at affordable prices through Truck-sale in those areas, so that the workers benefitted. Meanwhile, the Labor Secretary also talked about providing low-cost and easy health care to the workers.

He said that the cost of treatment in government hospitals is already low. However, separate desks can be set up in government hospitals in labor-intensive areas, on the other hand, low-cost medical facilities can be arranged for workers through Memorandum of Understanding (MOU) with private hospitals or clinics in those areas.

গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কারখানার শ্রমিকরা। আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার পলমল গ্রুপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি দাবি জানিয়ে আসছিল। সকালে তারা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বাঘের বাজার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী উভয় লেন দখল করে রাখে। এতে মহাসড়কের ওই অংশ ব্যাপক যানজটের তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে।

অপরদিকে সকাল থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এ্যাসরোটেক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা ন্যূনতম হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা ও টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ গ্রেড অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে।

শিল্প পুলিশের শ্রীপুর ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার এস এম আজিজুল হক বলেন, ‘দুটি কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা দুটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

পোশাক শিল্পে নতুন হুমকি অস্থিরতা

দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ও গত আড়াই মাস ধরে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলতি শরৎ ও শীতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাদেশ প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

গত জুলাই থেকে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক্রেতারা সফর পিছিয়ে দিয়েছেন। অনেকে কারখানা পরিদর্শন বাতিল করেছেন। ফলে আসন্ন মৌসুমে কার্যাদেশ কমেছে।

গত জুলাই ও আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বরে ক্রিসমাসের সময় পশ্চিমের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির সেরা মৌসুমই নয়, আগামী শরৎ ও শীতের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার ব্যস্ততম মাস।

দুর্ভাগ্যবশত এমন সময়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতির হয়।

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করলে পোশাক তৈরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান।

নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কয়েকটি খাতের শ্রমিকদের কাছ থেকে নানা দাবি উঠতে শুরু করে।

এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় প্রায় ১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকে।

আশুলিয়া, জিরানী, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নামেন। কারো কারো বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও আগুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

এরপর মালিকরা অস্থিরতা এড়াতে ও সম্পত্তি রক্ষায় একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেন।

ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের ওপর হামলার কারণে শিল্প পুলিশের সদস্যরা শিল্প এলাকায় টহল দেওয়া বন্ধ রাখে।

এ ছাড়াও, সে সময় সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসনে রদবদল হচ্ছিল। প্রায় সব থানা অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

ফলে মালিকরা কারখানা চালাতে সাহস পাননি।

পোশাক শিল্প

শ্রমিক অসন্তোষের ফলে অনেক মালিক কারখানা খুলেননি। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায়ও কারখানা চালানো যায়নি।

তাই আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবোর অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ছিল। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা ভাঙচুর করেছিলেন।

মালিকরা শেষমেশ বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুসারে কারখানা বন্ধ করে দেন। এই আইনটি ‘কাজ নেই, বেতন নেই’ শর্তের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এই সময় কেন অশান্তি?

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে জাতি যখন নাজুক পরিস্থিতিতে, তখন কেন এই অস্থিরতা? বিশেষ করে, যখন গত বছরের ডিসেম্বরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হয়।

ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে বেতন বাড়লেও শ্রমিকদের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।

সাধারণ শ্রমিক, ইউনিয়ন নেতা, শ্রম বিশেষজ্ঞ ও কারখানা মালিকদের মতে, শ্রমিক আন্দোলনের পিছনে আরও কিছু কারণ ছিল।

সর্বশেষ অসন্তোষের সময় শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে টিফিন ও উপস্থিতি ভাতা মানসম্মত করার দাবি তুলেছিলেন। কারণ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তা দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের অপর দাবি ‘বৈষম্য’ দূর করতে নারী-পুরুষকে সমান অনুপাতে নিয়োগ দিতে হবে।

রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইনশৃঙ্খলার অভাবকে কাজে লাগাতে শ্রমিকদের প্রভাবিত করেছিল।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ ও ‘ঝুট’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল মুহাম্মদ মো. মঈন খান অস্থিরতার তিন কারণ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: বহিরাগতদের উসকানি, শ্রমিকদের দাবি ও ঝুট বাণিজ্য দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব।

অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, তারা মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে পারে।

তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা এবার তাদের প্রধান দাবি নয়।

পোশাক শিল্প

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের দাবি কার্যাদেশ ১০ শতাংশ কমে যাওয়া ছাড়াও প্রায় সমপরিমাণ কার্যাদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর পর অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে।’ শ্রমিকদের দাবির বৈধতা দিয়ে তিনি বলেন যে তাদের জীবন মানসম্মত নয়।

নাজমা আক্তার মনে করেন, পোশাক ব্যবসার বৃহত্তর স্বার্থে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বাস্তবায়ন ও নারী শ্রমিকের নির্যাতন বন্ধসহ যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে কারখানা মালিকদের একমত হতে হবে।

একই মত বাংলাদেশ অ্যাপারেল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমানেরও।

তার দাবি, সর্বশেষ অস্থিরতার সঙ্গে বহিরাগতরাও জড়িত। তবে অনেক কারখানা সময়মতো বেতন পরিশোধ করছে না বলেও জানান তিনি।

‘সাধারণত পোশাক শ্রমিকরা কম বেতন পান। যদি সময়মতো বেতন না পান তবে কীভাবে সংসার চালাবেন। বাড়ি ভাড়া ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ মেটাবেন?’

উদাহরণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটি কারখানা এখনো আগস্টের বেতন দেয়নি।’

গত সপ্তাহে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকটি কারখানায় চার শতাধিক শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’

বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে শ্রমিকদের উপস্থিতি নিবন্ধন করায় কালো তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা অন্য কারখানায় চাকরি পাবেন না।

আমিরুল হক আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মালিকদের উচিত ওই শ্রমিকদের নাম কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। তারা অসন্তোষে লিপ্ত হয়েছেন শুধুমাত্র যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য।’

বর্তমানে আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করায় পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে।

সেসব এলাকার প্রায় সব কারখানা গত রোববার খুলে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ায় উৎপাদন শুরু হয়।

পোশাক শিল্প

গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

শ্রমিক অশান্তির প্রভাব

দেশের কারখানাগুলো থেকে শুধু যে নির্দিষ্ট সংখ্যক কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে তাই নয়, সময়মতো পণ্য পাঠানো নিশ্চিত করার বিষয়েও উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা।

ফলে দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে বড় ছাড় দিতে হবে অথবা উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর ব্যয়বহুল পথ বেছে নিতে হবে।

কিছু ক্ষেত্রে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে ব্যর্থতার কারণে কার্যাদেশ বাতিল হতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া সময় পূরণে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে বেশি অর্থ খরচ করে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হবেন।

তারা জানেন যে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো হলে লাভের পরিমাণ অনেক কমে পাবে।

ঢাকা থেকে ইউরোপের যেকোনো দেশে আকাশপথে পাঠাতে প্রতি কেজি কাপড়ের জন্য চার ডলারের বেশি খরচ করতে হয়।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে একই চালান ইউরোপে পাঠাতে খরচ হয় ১০ সেন্টেরও কম।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অব্যাহত মূল্যস্ফীতি ও লোহিত সাগর সংকটের মারাত্মক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে হিমশিম খাওয়া দেশের পোশাক শিল্পের জন্য দীর্ঘ সময় শ্রমিক অসন্তোষ হলো সর্বশেষ ধাক্কা।

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কার্যাদেশ ১০ শতাংশ কমে যাওয়া ছাড়াও প্রায় সমপরিমাণ কার্যাদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হারানো কার্যাদেশ পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে। এটি ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের ওপর নির্ভর করছে।’

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যায় থাকা কারখানাগুলোকে আগস্টের বেতন পরিশোধে সহায়তা দেয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা আগস্টের বেতন দিয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘আশা করছি, শ্রমিকরা আবার কাজে ফেরার পর কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।’

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ?

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব। অনেক সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চ্যানেলই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে।
এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে পোশাকশিল্পের বড় অবদান আছে। এই মহাদেশের দেশগুলো বিশ্ববাজারের জন্য টি-শার্ট ও ট্রাউজার উৎপাদন করে হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করেছে। এই শিল্প যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, বাংলাদেশের চেয়ে এত ভালো নজির আর হতে পারে না।
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অস্থিরতার জন্য কিছু কাজ ভারতে চলে যাচ্ছে। যদিও এর পরিমাণ খুব উল্লেখযোগ্য নয় ।
১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ। এরপর পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশটির তৈরি পোশাক খাতে এখন ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ১০ শতাংশ। গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে চীনের পরেই তার অবস্থান।
কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অস্থিরতা চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন—এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে ওই সরকারের পতনের মাসাধিককাল পরেও অস্থিরতা থামেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বলীয়ান হয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী নতুন সরকারের কাছে দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে। সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। চলতি বছর গ্যাস–সংকটের কারণে এমনিতেই শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে চলতি বছর পোশাক রপ্তানি ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমবে।
এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ভারতের কথা বলা হয়েছে। সুতা উৎপাদনে এই দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও তৈরি পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে। অর্থমূল্যের দিক থেকে ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের তামিলনাড়ুর ত্রিপুর শহরভিত্তিক পোশাক উৎপাদনকারীরা ৫৪ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নতুন পোশাক উৎপাদনের কার্যাদেশ পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় এসব কাজ তাদের কাছে চলে এসেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার এক পোশাক উৎপাদনকারী গোষ্ঠী বলেছে, আগস্ট মাসে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড জারার কাছ থেকে তারা ১৫ শতাংশ বেশি কার্যাদেশ পেয়েছে।
পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রাধান্য গুরুতরভাবে খর্ব করা ভারতের পক্ষে কঠিন। বাংলাদেশের পোশাক খাত বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব ইকোনমিস্টকে বলেন, পোশাক খাতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সাময়িক। কারখানা খুলতে শুরু করেছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের বড় কিছু সুবিধা আছে। বাংলাদেশের শ্রম ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ এখনো অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পায়, ভারত যা পায় না।

সর্বোপরি বাংলাদেশের পোশাক খাতের যে পরিস্থিতি, তাতে বড় বড় কার্যাদেশ সামলানোর সক্ষমতা তার আছে। বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ‘সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী’।

RMG BANGLADESH NEWS