Home বাংলা নিউজ জাপানের সঙ্গে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ঋণ চুক্তি: ৬ প্রকল্পে ১২ হাজার ৮১৯...

জাপানের সঙ্গে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ঋণ চুক্তি: ৬ প্রকল্পে ১২ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার ঋণ

বাংলাদেশের মেগা ৬ প্রকল্পে প্রায় ১২ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে জাপান। তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে এ ঋণ দিচ্ছে দেশটি। আর এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে জাপানের সর্বোচ্চ ঋণ।

 

এ লক্ষ্যে জাইকার সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। সেই সঙ্গে একটি বিনিময় নোটও স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ভারপ্রাপ্ত সচিব) কাজী শফিকুল আযম এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাইকার প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হেতেদা। বিনিময় নোটে স্বাক্ষর করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে। এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।

 

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৬টি প্রকল্পে জাইকা ৩৭তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় মোট ১৭৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন দিচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ঋণ। জাপানের দেয়া এ ঋণের বার্ষিক সুদের হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ, যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

 

এমএ মান্নান বলেন, আমরা আগে খুববেশি পশ্চিম দিকে তাকাতাম। এখন পূর্বমুখী নীতিতে চলছি। সবাই আমাদের বন্ধু। এশিয়ার মানুষ হিসেবে এ মহাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি জাপান, চীন ও কোরিয়া সবাই আমাদের বন্ধু।

 

তিনি আরও বলেন, ১৭৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়েছে। জাপান এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১ লাখ কোটি ইয়েন ঋণ, ৫০ হাজার কোটি ইয়েন অনুদান এবং সাড়ে ৬ হাজার কোটি ইয়েন কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এ চুক্তি হয়েছে।

 

রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঋণের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেই আলোচনার অংশ হিসেবে জাপান সর্বোচ্চ অংকের এ ঋণ দিচ্ছে। তিনি বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ ঋণ ভূমিকা রাখবে।

 

মিকিও হেতেদা বলেন, প্রকল্পগুলো যাতে সময়মতো বাস্তবায়ন হয় সেদিকে সরকারেক বিশেষ নজর রাখতে হবে।

 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-২ (মেট্রোরেল ) প্রকল্পে ৭৫ হাজার ৫৭১ মিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করা হবে। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যমুনা রেলওয়ে ব্রিজ কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টে ২৪৬৪ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন ব্যয় হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সীমান্তক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে (বাংলাদেশ) ২৮ হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৭ হাজার ৮২১ মিলিয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টে ১৬ হাজার ৯৯৬ মিলিয়ন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের জ্বালানি সাশ্রয় ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১১ হাজার ৯৮৮ মিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করা হবে।

 

প্রকল্পের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে বক্তারা বলেছেন, ঢাকায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ কাজে জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি দেবে। এর একটি অংশের জন্য এ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

 

যমুনা নদীর ওপর প্রায় ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাইকা দেবে প্রায় ৮ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি ডুয়াল গেজ ডাবল লাইনের নির্মাণ করা হবে।

 

মাতারবাড়ী প্রকল্পের অধীনে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ৬০০ মেগাওয়াট করে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ হবে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।

 

ক্রয় বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২৪৭২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে ১ হাজার ৮৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। জ্বালানি সাশ্রয় ও উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৯১৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে জাইকা দেবে প্রায় ৮৮৬ কোটি টাকা। ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়ে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দেবে প্রায় ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।