হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন জার্মানির রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস সংস্থা লুফতানসার একজন নিরাপত্তা প্রতিনিধি। একই সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। মূলত ঢাকা থেকে সরাসরি জার্মানিতে কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার বিষয়টির পর্যবেক্ষণে তিনি ঢাকা সফরে আসেন।
জানা গেছে, গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএম মোসাদ্দিক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন লুফতানসার নিরাপত্তা প্রতিনিধি। এ সময় বিমানের কার্গো শাখার জেনারেল ম্যানেজার ও শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে বিমানবন্দরের কার্গো স্ক্যানিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাত থেকে হঠাত্ করেই ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে জার্মানির রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস লুফতানসা। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে অন্য দেশের মাধ্যমে রি-স্ক্যানিং করে জার্মানিতে কার্গো রফতানি অব্যাহত থাকবে। এর আগে গত মার্চে যুক্তরাজ্য এবং ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়াও একই কায়দায় ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো জার্মানিও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জনবলের অভাবকে দায়ী করেছে।
এদিকে রোববার রাতে হঠাত্ ঢাকা থেকে জার্মানিতে আকাশপথে সরাসরি কার্গো রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লুফতানসার একটি ফ্লাইট সোমবার সকালে কার্গো পণ্য ছাড়াই ফেরত গেছে। লুফতানসা কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইটে মালপত্র লোড করেও পরে নামিয়ে ফেলে। বিমানকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোনো কার্গো পণ্য তারা জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেবে না। এক্ষেত্রে সব পণ্য জার্মান সিভিল এভিয়েশন অনুমোদিত দ্বিতীয় কোনো দেশ থেকে রি-স্ক্যানিং করে নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রফতানির দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য হচ্ছে জার্মানি। জার্মানির এমন পদক্ষেপে ঝুঁকির মুখে পড়বে বাংলাদেশের রফতানি খাত।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে বছরে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের (৮৮ হাজার কোটি টাকা) পণ্য রফতানি হচ্ছে। যার বড় অংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। ফলে জার্মানির এ সিদ্ধান্তের কারণে রফতানি বাণিজ্য হুমকিতে পড়বে। পাশাপাশি এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে দুটি ফ্লাইটে সরাসরি কার্গো পণ্য যাচ্ছে জার্মানিতে। ওই ফ্লাইটে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টন পণ্য যায়। লুফতানসার একটি কার্গো ফ্লাইট এ পণ্য পরিবহন করছে। তবে লুফতানসা ছাড়াও অন্য দেশে রি-স্ক্যানিং করে জার্মানিতে মালপত্র পরিবহন করছে বড় কয়েকটি এয়ারলাইনস। এর মধ্যে এমিরেটস, কাতার, কুয়েত, ইতিহাদ, মালয়েশিয়া, সাউদিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, চায়না ও ওমান এয়ারলাইনস অন্যতম। লুফতানসার মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্গো সরাসরি বহন করা হতো, তা থেকে মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত বিমান। এখন এ আয় থেকে বঞ্চিত হবে বিমান।
কার্গো শাখা সূত্রে জানা গেছে, তারা ইউরোপে সরাসরি কার্গো রফতানি করতে প্রয়োজনীয় সনদ ‘রেগুলেশন এজেন্ট-৩ (আরএ)’ সনদ পেয়েছে। শিগগিরই তারা ‘এয়ার কার্গো সিকিউরিটি-৩ (এসিসি)’ সনদও পাবে।