তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকেরা উৎসব ভাতা পেয়েছেন। তবে শ্রমিকনেতাদের দাবি, ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কারখানার মালিক শ্রমিকের উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছেন।
সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা উৎসব ভাতা পেলেন না। তবে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকেরা উৎসব ভাতা পেয়েছেন। অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের দাবি, ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কারখানার মালিক শ্রমিকের উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছেন।
গত মাসে পোশাকসহ অন্য শিল্পকারখানা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট-বিষয়ক কোর কমিটির সভায় ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকদের উৎসব ভাতা দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সেদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ থেকে ২১ রমজানের মধ্যে উৎসব ভাতা দিতে হবে মালিকদের। তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ২০ রমজানের মধ্যে বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবি করে আসছে।
অবশ্য গতকাল রোববার একাধিক শ্রমিক সংগঠন ও বিজিএমইএর নেতারা জানান, ওই সভায় ২০ রমজানের মধ্যে উৎসব ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক গত রাতে প্রথম আলোকে একই কথা বলেন।
গতকাল ছিল ২০ রমজান। মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কতটি কারখানার শ্রমিক ভাতা পেয়েছেন কিংবা পাননি, সে বিষয়ে সরকার, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন—কোনো পক্ষই সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেনি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৪ হাজার ৮০৯টি পোশাক কারখানা আছে।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুস সালাম গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের সময়সীমা আজ (কাল) রাত ১২টায় শেষ হবে। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না, কত কারখানা উৎসব ভাতা দিয়েছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘বড় বড় কারখানা উৎসব ভাতা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ (গতকাল) পর্যন্ত ৫০ শতাংশের কাছাকাছি কারখানা ভাতা দিয়েছে।’
জানা যায়, ১৮ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ৪৪৫টি কারখানা পরিদর্শন করেন বিজিএমইএর কর্মকর্তারা। এসব কারখানার ৪৪৩টি চলতি জুন মাসের বেতন ও ৪৪৪টি কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একটি কারখানা উৎসব ভাতা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘৭০ শতাংশ কারখানা উৎসব ভাতা দিয়ে দিয়েছে। বাকিরাও দিয়ে দেবে। ঢাকায় ছয়টি কারখানায় উৎসব ভাতা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে সেগুলো মিটমাট হয়েছে।’ জুন মাসের বেতন পরিশোধ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৮-১০টি কারখানায় সমস্যা হতে পারে। সেগুলো আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
অবশ্য পরে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। তাই কতটি কারখানা ভাতা দিয়েছে, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে অধিকাংশ কারখানাই দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিকেএমইএর সদস্য কারখানার শ্রমিকদের ভাতা পরিশোধের বিষয়ে একই কথা বলেন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
উৎসব ভাতার বিষয়ে গতকাল জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে উৎসব ভাতা পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গতকাল পর্যন্ত ২৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিক উৎসব ভাতা পেয়েছেন দাবি করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার সময়সীমা ঘোষণা করে। তবে তদারকি ও ব্যর্থদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় মালিকেরা ইচ্ছামতো উৎসব ভাতা পরিশোধ করেন।’ মালিকেরা কেন ব্যর্থ হন, সেটি খুঁজে বের করে আইনি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘সময়সীমার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে শ্রমিকেরা উৎসব ভাতা পাচ্ছেন কি না। সে বিষয়ে আমি বলব এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সমস্যা হলেও সেটি ঠিক করে ফেলেছি।’
শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করেন, শ্রম বিধিতে বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেওয়ার কথা বলা আছে। তবে সর্বনিম্ন ভাতা কত হবে, সে বিষয়ে বিধিতে কিছু নেই। ফলে কারখানাগুলো শ্রমিকদের মূল বেতনের ৮০, ৬০, ৫০ এমনকি ৪০ শতাংশ ভাতা হিসেবে দিচ্ছে। সে জন্য তারা পোশাকশ্রমিকদের মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা দেওয়া ও বিষয়টি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দাবি করেন। এ বিষয়ে মাহমুদ হাসান ও মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানার মালিকেরা তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিচ্ছেন।