Home বাংলা নিউজ গ্যাসের দাম বাড়লে হুমকিতে পড়বে বস্ত্র খাত: ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা

গ্যাসের দাম বাড়লে হুমকিতে পড়বে বস্ত্র খাত: ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা

গ্যাসের দাম বাড়লে হুমকিতে পড়বে বস্ত্র খাত: ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা

ক্যাপটিভ জেনারেটরে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানের চেয়ে ১৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব জমা পড়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে এক কেজি সুতা উৎপাদনে ১৭ টাকার মতো খরচ বাড়বে।

বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হলে দেশের বস্ত্র খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। বিশেষ করে স্পিনিং বা সুতা তৈরির মিলগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। কারণ, সুতা উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল তুলার দাম গত এক মাসে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে আবার গ্যাসের দাম বাড়লে মিলগুলোর সুতা উৎপাদনের খরচ আরও বাড়বে। আর এমনটি হলে সুতা দাম বাড়বে। তখন কিন্তু দেশের বস্ত্রকলগুলো মুখ ফিরিয়ে নেবে। তখন ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুতা আমদানিতে উৎসাহিত হবেন বস্ত্রকলের মালিকেরা। তাহলে দেশের ৪৩০টি স্পিনিং মিল ক্ষতির মুখে পড়বে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গত ২৯ মার্চ বিইআরসিতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ক্যাপটিভ জেনারেটরে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৮ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা এবং প্রতি ঘনমিটার ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসের দাম ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ৮ আগস্ট বিইআরসিতে এ বিষয়ে গণশুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বিটিএমএ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলছে, গত বছরের আগস্টে ক্যাপটিভ জেনারেটরে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ছিল ৪ টাকা ১৮ পয়সা। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা করা হয়। এখন তিতাসের প্রস্তাব কার্যকর করা হলে গত এক বছরের ব্যবধানে ক্যাপটিভে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৪৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে। তাতে প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে গ্যাসের খরচ ১৩ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা ৩৩ পয়সায় দাঁড়াবে। বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি সুতার গড় বিক্রয়মূল্য ২ দশমিক ৮০ মার্কিন ডলার বা ২২৪ টাকা। অধিকাংশ বস্ত্রকলে ব্যবহৃত হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসলাইন। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে এক কেজি কাপড় উৎপাদনের খরচ ২২ টাকার মতো বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিটিএমএর সাবেক সভাপতি ও মালেক স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মতিন চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার বলেন, আমদানি করা সুতা এবং দেশে উৎপাদিত সুতা প্রায় একই মূল্যের। বস্ত্রকলের মালিকেরা দেশি স্পিনিং মিলের সুতা কেনেন, কারণ ক্রয়াদেশ দেওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যেই তা পেয়ে যান। সুতার উৎপাদন খরচ ও খুচরা মূল্য বাড়লে এই সুবিধা আর পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। মতিন চৌধুরী বলেন, ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুতা আমদানি করা যায়। তা ছাড়া বেনাপোল ও পেট্রাপোল সীমান্তে সম্প্রতি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট সুবিধা হচ্ছে। তখন ভারত থেকে কম সময়েই সুতা আসবে দেশে। এ বিষয়ে বিটিএমএর সভাপতি ও স্কয়ার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, ‘সরকার বলছে, গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমরাও বুঝতে পারছি। তবে ব্যবসায়ীরা চায়, গ্যাসের দাম ধাপে ধাপে বাড়ানো হোক। এ ক্ষেত্রে ৫-১০ বছরের একটি পরিকল্পনা থাকলে ভালো। এক বছরের ব্যবধানে ক্যাপটিভে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৪৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করলে কোনো শিল্প কারখানাই টিকিয়ে রাখা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, সরকারই একসময় ব্যবসায়ীদের ক্যাপটিভ নিতে উৎসাহিত করেছে। এখন আবার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

ভারত তিন বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। সে জন্য চলতি মাসে দেশটির সরকার ছয় হাজার কোটি রুপির বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া ভারতে প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপাদিত হয়, তাদের বস্ত্র খাত শক্তিশালী। বাংলাদেশের তুলার চাহিদার বড় অংশই বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসে। এসব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মতিন চৌধুরী বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বাড়ালে আমাদের স্পিনিং মিলের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। এই সুযোগে ভারতের ব্যবসায়ীরা হয়তো এখন কম দামেই সুতা দেবে। তবে পাঁচ বছর পর তারা সুতার দাম বাড়িয়ে দিলে আমাদের বস্ত্র ও পোশাক—দুটো গুরুত্বপূর্ণ খাতই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ দেশের সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি আয়ের উৎস পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্পকে শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, ‘এটি সত্য যে, সরকার দীর্ঘদিন আমাদের ভর্তুকি মূল্যে গ্যাস দিয়েছে। এ জন্য প্রতিযোগী সক্ষমতা অর্জন করা গেছে। তবে বর্তমানে গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ীই আছে। তা ছাড়া ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি, তুলার দাম বেড়ে যাওয়া, বিশ্ববাজারে পোশাকের মূল্য কমার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’