Home বাংলা নিউজ দেশে নিজস্ব ফ্যাশন ব্র্যান্ড গড়ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

দেশে নিজস্ব ফ্যাশন ব্র্যান্ড গড়ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

দেশে নিজস্ব ফ্যাশন ব্র্যান্ড গড়ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, জারা, নেক্সট, প্রাইমার্ক, সিঅ্যান্ডএর মতো বিশ্বখ্যাত অনেক ব্র্যান্ডের পোশাক সুনামের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুত করছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা। তাদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষের পোশাকের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে এসেছে, দাঁড় করিয়েছে নিজস্ব ফ্যাশন ব্র্যান্ড।

দেশের বাজারে প্রায় ১৮ বছর ধরে আছে পোশাকশিল্পের জায়ান্ট গ্রুপের দেশীয় ব্র্যান্ড টেক্সমার্ট। এক যুগ আগে বেক্সিমকো গ্রুপের ইওলোর যাত্রা শুরু হয়। সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকায় গত কয়েক বছরে এসেছে ব্যাবিলন গ্রুপের ‘ট্রেন্ডস’, ইপিলিয়ন গ্রুপের ‘সেইলর’, ইভিন্স গ্রুপের ‘নোয়া’ ও অ্যাম্বার গ্রুপের ‘অ্যাম্বার লাইফস্টাইল’।

ব্র্যান্ডগুলোর মালিকেরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। অর্থনীতি বড় হচ্ছে। ফলে দিন দিন পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। পোশাকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে নতুন একটি ধারা সংযোজন করতে পারায় ভোক্তাদের কাছে ভালো সাড়া পাচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো। বিক্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা বাড়াচ্ছে তারা।

বিদেশি ব্র্যান্ডের রপ্তানি আদেশের বিপরীতে পোশাক তৈরির পর কিছু রয়ে যেত জায়ান্ট গ্রুপের। সেই রয়ে যাওয়া পোশাক বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে টেক্সমার্ট ব্র্যান্ডের জন্ম হয়। তবে প্রতিযোগিতা ও দেশের চাহিদা মেটাতে কয়েক বছর পর ডিজাইনার নিয়োগ করে দেশের বাজারের জন্য আলাদা নকশা করা পোশাক তৈরি শুরু করে ব্র্যান্ডটি। বর্তমানে ১০টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে টেক্সমার্টের। এ ছাড়া শুধু তরুণদের জন্য অকাল্ড নামে ২০০৭ সালে আরেকটি আলাদা ব্র্যান্ড দাঁড় করায় তারা। এই ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৫।

এসব তথ্য জানিয়ে টেক্সমার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রেতাদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। বাজারে অনেক ব্র্যান্ড এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে আমাদের বিক্রি কমেনি।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাশন খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। এই বছর যে পোশাক চলছে সামনের বছর সেটি আর চলে না। আমরা এই প্রবণতার (ট্রেন্ডের) সঙ্গে মানাতে পেরেছি বলেই টিকে আছি।’

২০১৪ সালে নোয়া ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। এটি ইভিন্স গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের বস্ত্র ও পোশাকশিল্পে ১৯৮৩ সাল থেকে তাদের পদচারণা। গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তৈরি পোশাকশিেল্পর মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরীর স্ত্রী শবনম শেহনাজ চৌধুরী দুই ছেলেকে নিয়ে দেশের বাজারের জন্য ‘নোয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন।

বর্তমানে ঢাকায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে নোয়ার। ব্র্যান্ডটির পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী বললেন, ‘বৈশ্বিক ফ্যাশনের গতিধারা অনুযায়ী দেশের তরুণদের চাহিদা খুব কম ব্র্যান্ডই মেটাতে পারছে। এ ক্ষেত্রে একটি বড় শূন্যতা আছে। সে জন্যই আমরা খুচরা বিক্রির জন্য ব্র্যান্ড করার চিন্তাভাবনা করি। তা ছাড়া আমাদের বস্ত্র ও পোশাক তৈরির কারখানা আছে। দীর্ঘদিনের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল।’

শাহ রাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিক ফ্যাশনের গতিধারার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে নোয়া পোশাক প্রস্তুত করে। আমরা এক নকশার পোশাক দ্বিতীয়বার করি না। তরুণেরাই আমাদের মূল টার্গেট। তবে ১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের জন্যও পোশাক তৈরি করছি আমরা।’ তিনি জানান, চলতি বছর ঢাকায় আরও দুটি বিক্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে নোয়ার।

এদিকে ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ইপিলিয়ন গ্রুপ পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। গত বছরের এপ্রিলে যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমন্ডিতে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র দিয়ে ইপিলিয়নের ব্র্যান্ড সেইলর যাত্রা করে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ব্র্যান্ডটির সাতটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। সেইলরের পোশাক তৈরি করার জন্য মহাখালীতে আলাদা একটি কারখানা করেছে গ্রুপটি।

ইপিলিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল-মামুন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করছি। আমাদের দেশের জনসংখ্যাও অনেক। অর্থনীতিও দিনকে দিন বড় হচ্ছে। সে জন্য দেশের জন্য কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকেই সেইলর প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত মানুষকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করছে সেইলর।’ এখন পর্যন্ত ক্রেতাসাধারণের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

দেশের বাজারের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন আল-মামুন বলেন, দেশের পোশাকের বাজার অনেক বড়। ফলে সম্ভাবনাও প্রচুর। তবে কেউ যদি এলাম দেখলাম আর জয় করলাম, এমন মানসিকতা নিয়ে আসে, তাহলে হবে না। তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে আমাদের ক্রেতার চাহিদা, রং ও আবহাওয়া সবই ভিন্ন। এসব বিষয় সবার আগে বুঝতে হবে। তবে বাজার ধরা যাবে।’ এ বিষয়ে নোয়ার পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ধারণা থাকতে হবে। যারা পোশাকে নতুনত্ব আনতে পারবে, তারা টিকে থাকতে পারবে। তা ছাড়া প্রতিটি ব্র্যান্ডের একটি নিজস্বতা থাকতে হবে। তারুণ্যের ফ্যাশন ও ট্রেন্ড ভালোভাবে বোঝার জন্য দলে তরুণদের নিতে হবে।’

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিকারকদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা পোশাকশিল্পের জন্য খুবই ভালো। কারণ, দেশের একটা শ্রেণি আমদানি করা পোশাক কিনতে ও পরতে পছন্দ করে। দেশি ব্র্যান্ডগুলোর উন্নত মানের পণ্য ও কম দামের কারণে পোশাক আমদানি অনেকটা বন্ধ হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশে নিজেদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পোশাকশিল্পের মূল্য সংযোজন বাড়বে। বিষয়টি কঠিন। তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, দেশের ব্র্যান্ড বিদেশে যাবে। এ ক্ষেত্রে দেশের বাজারে আমাদের একটা ভালো অনুশীলন হচ্ছে।’

টেক্সমার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিক হাসান বলেন, ‘দেশের ব্র্যান্ডগুলোকে বিদেশে নিতে ও প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। আশপাশের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের মতো বাজারে হয়তো সহজেই যাওয়া যায়। আশা করছি, আস্তে আস্তে এটি হয়ে যাবে।’

দেশীয় কিছু রপ্তানিকারক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোকে পোশাক সরবরাহের পাশাপাশি দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে দাঁড় করিয়েছে নিজস্ব ফ্যাশন ব্র্যান্ড। পাশ্চাত্যের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে নতুন একটি ধারা সংযোজন করায় ভালো সাড়া পাচ্ছে। সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকায় নতুন নতুন ব্র্যান্ডের আগমন ঘটছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা পোশাকশিল্পের জন্য খুবই ভালো। … দেশি ব্র্যান্ডগুলোর উন্নত মানের পণ্য ও কম দামের কারণে পোশাক আমদানি অনেকটা বন্ধ হবে।