চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্জিত ৩ হাজার ৪২৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের চেয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা ২৭৬ কোটি ডলার বা ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পোশাক খাতের হিস্যা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ। গত অর্থবছর ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
রাজধানীর সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে গত অর্থবছর ৩৫৩ কোটি ৩২ লাখ ইউনিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১৫৭ ইউনিটের চেয়ে ১২৪ শতাংশ বেশি। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ২০২১ সালের মধ্যে মোট ৬০ বিলিয়ন (৬ হাজার কোটি) ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য পূরণ হবে। পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হবে। ইউরো ও পাউন্ডের দরপতন না হলে গত অর্থবছরই ৪০ বিলিয়ন ডলার হতো।’ তিনি আরও বলেন, আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। দেশ ঐক্যবদ্ধ আছে, ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক আছে। আশা করা যায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা টিকিয়ে রাখতে পারবে। তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেটি অর্জন করতে সংগঠনটি একটি পথনকশা তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ১৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে হবে। তবে সরকার ঘোষিত পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ে এবারের লক্ষ্যমাত্রায় ১১৭ কোটি ডলার কম ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, লক্ষ্যমাত্রা একটু কমই ধরা হয়েছে সত্য। তবে তাতে বড় কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, সব ঠিকঠাক থাকলে পোশাকের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। গত অর্থবছর যেমন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭২ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে পোশাক খাতে। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার ও উদ্যোক্তাদের আরেকটু উচ্চাভিলাষী হওয়ার সুযোগ ছিল। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্ক বা ন্যূনতম ১০ শতাংশ ধরে এগোনো উচিত ছিল। কারণ এক. চলতি অর্থবছর পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ শেষ হলে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি ক্রয়াদেশ প্রত্যাশা করাই যায়। দুই. পোশাক খাতের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের চেয়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অনেক পেছনে। এভাবে ৫ হাজার কোটি ডলার অর্জন দুরূহ হবে। তিন. চলতি অর্থবছর কিছু অনিশ্চয়তার জায়গা থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে সেগুলো বড় দুশ্চিন্তার কারণ হওয়ার কথা নয়।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল ১০ শতাংশ। সেটি হিসাবে নিলেও এবারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ পেছনে আছে। পোশাকের পর চামড়া ও চামড়াজাত খাত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে। চলতি অর্থবছর এ খাতটির রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের ১১৬ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছর অর্জিত ৯১ কোটি ডলারের চেয়ে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।