বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা উদ্বেগজনক। মন্থর প্রবৃদ্ধি ও দুর্বল বাণিজ্যের মতো যে সমস্যাগুলো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে পেছনে টেনে ধরছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে বড় দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। গ্রুপ অব টোয়েন্টিভুক্ত (জি২০) দেশগুলোর বাণিজ্যমন্ত্রীরা তাই বাণিজ্য ব্যয় হ্রাস, বিভিন্ন দেশের নীতিমালায় সমন্বয় জোরদার এবং অর্থায়ন বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন। খবর রয়টার্স।
সাংহাইয়ে শনিবার শুরু হওয়া জি২০ বাণিজ্যমন্ত্রীদের দুদিনের বৈঠক শেষে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেং গতকাল এ কথা জানান। বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যে জি২০ মন্ত্রীদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। জি২০ মন্ত্রীদের বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেং বলেন, বিশ্ববাণিজ্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এখনো বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পূর্ববর্তী স্তরে ফিরতে পারেনি। বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো তেজি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির ছন্দ খুঁজে পায়নি।
চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জি২০ ফোরামের কাছে নেতৃসুলভ ভূমিকা আশা করছে। আমরা যে বড় সমস্যাগুলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, সেগুলো কাটিয়ে উঠে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করতে জি২০ ফোরামকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) গত এপ্রিলে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৪ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ করেছে। এ নিয়ে এক বছরে চতুর্থবারের মতো প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ। বৈশ্বিক চাহিদার দুর্বলতা ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে আইএমএফ আগামীতেও পঞ্চমবারের মতো প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমাবে, এটা অনেকটা নিশ্চিত।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) মনে করছে, টানা পঞ্চম বছরের মতো ২০১৬ সালেও বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে থাকবে। ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো শুক্রবার বলেছেন, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঢিমেতালে চলবে।
সাংহাইয়ে বৈঠক শেষে জি২০ মন্ত্রীরা যৌথ ঘোষণায় বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান। তবে এ পুনরুদ্ধারের গতি সবখানে সমান নয়। তেজি, টেকসই ও সুষম প্রবৃদ্ধির যে উচ্চাশা আমরা পোষণ করি, চলমান পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। যৌথ ঘোষণায় আরো বলা হয়, আমরা একমত যে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির অভিন্ন লক্ষ্য পূরণে আমাদের আরো বেশি কিছু করতে হবে।
বৈশ্বিক বাণিজ্যের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশে বিরাজমান সংরক্ষণবাদী হুজুগ। চীন এ সংরক্ষণবাদের বড় শিকারে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি ইস্পাতসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের অতিরিক্ত উত্পাদনের পণ্য রফতানি করে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের বিরুদ্ধে বিদেশী প্রতিযোগীদের বাজার থেকে হটাতে অন্যায্য মূল্য নির্ধারণের অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ চীনের অতিরিক্ত উত্পাদনকে সব সমস্যার মূল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত উত্পাদনজনিত সমস্যার জন্য চীনকে বেছে নিয়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
জি২০ বাণিজ্যমন্ত্রীদের যৌথ ঘোষণায় চীনের এ উদ্বেগের প্রতিফলন দেখা গেছে। এতে বলা হয়, ইস্পাতসহ কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত উত্পাদনের বিষয়টি একটি বৈশ্বিক ইস্যু, যার সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বৈশ্বিক বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্যে জি২০ মন্ত্রীরা বাণিজ্য অর্থায়ন বৃদ্ধি, সেবা খাত চাঙ্গা করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার প্রশ্নে একমত হয়েছেন। জি২০ যৌথ ঘোষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির স্বার্থে বিভিন্ন দেশের সরকারকে বৈষম্যহীন, স্বচ্ছ ও আভাসযোগ্য বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়।