ঢাকা থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফ্লাইট পরিচালনায় কড়াকড়ি আরোপের সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। গত এক মাস ধরে কেজিপ্রতি ৫ সেন্ট বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রফতানি বাজার জার্মানি। বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয় দেশটিতে। এর মধ্যে কমবেশি ৩০ হাজার টন পণ্য আকাশপথে রফতানি হয়। এর একটি বড় অংশই তৈরি পোশাক।
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফ্লাইট পরিচালনায় কড়াকড়ি আরোপ করে দেশটির সরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ফেডারেল সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ জুনের এ সিদ্ধান্তের তৃতীয় কোনো দেশে রিস্ক্রিনিং বা পুনরায় নিরাপত্তা যাচাইয়ের শর্তে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বিমান জার্মানিতে অবতরণ করতে পারছে। একই কারণে প্রথমে অস্ট্রেলিয়া এবং পরে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমান পরিবহনে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মিরান আলী সমকালকে বলেন, তৈরি পোশাকের রফতানি বাণিজ্যে মুনাফা এখন অনেক কম। আকাশপথে পরিবহন করতে হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুনাফা থাকে না। তার ওপর পরিবহন ব্যয় আরও বাড়ার কারণে অবশ্যই রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জার্মানিতে মোট ৪৯৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়, যা বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পোশাকের বাইরে বেশি রফতানি হয় হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত চিংড়ি ও বাইসাইকেল।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশেন (বিএএফএফএ) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বার্লিনে বিমান কার্গোতে পণ্য পরিবহনে কেজিপ্রতি ব্যয় ছিল ১ ডলার ৮৫ সেন্ট। এখন আদায় করা হচ্ছে ১ ডলার ৯০ সেন্ট। বাড়তি ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএএফএফএর সভাপতি মাহবুবুল আনাম সমকালকে বলেন, তৃতীয় দেশে রিস্ক্রিনিংয়ের শর্ত প্রতি পালনে অতিরিক্ত সেবা দিতে হচ্ছে। এ সেবার মূল্য হিসাবেই এক মাস ধরে কেজিপ্রতি ৫ সেন্ট পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, জার্মানি আসলে বিমান পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তাদের বিবেচনায়, আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সতর্কতা হিসেবে তৃতীয় দেশ থেকে রিস্ক্রিনিংয়ের শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে নিরাপত্তা উদ্যোগ নিতে পরামর্শও দিয়েছে তারা। তবে এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জার্মানির সিদ্ধান্তের পরই বিদেশি পরিবহন সংস্থাগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু করেনি। বরং বেশ কিছু দিন সময় দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এমিরেটস, ইত্তিহাদ, সৌদি ও কুয়েত এয়ার কার্গোগুলোই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রিস্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে জার্মানির বিভিন্ন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে।