Home বাংলা নিউজ আয়কর দেওয়ার প্রস্তুতি নিন: রিটার্ন ২০১৫-১৬ আয়বর্ষের

আয়কর দেওয়ার প্রস্তুতি নিন: রিটার্ন ২০১৫-১৬ আয়বর্ষের

আয়কর দেওয়ার প্রস্তুতি নিন: রিটার্ন ২০১৫-১৬ আয়বর্ষের

করযোগ্য আয় থাকলে সরকারকে সেই আয়ের একটি অংশ আয়কর হিসেবে দিতে হয়। এ জন্য প্রতিবছর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়ে এ কর দিতে হয়। চাকরিজীবী, ছোট-বড় ব্যবসায়ী—সবাইকে এ কর দিতে হবে। ১ জুলাই থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমার সময় শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছর থেকে এ সময়সীমা শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। এ দিন কর দিবস ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এবার আপনি রিটার্ন জমা দেবেন ২০১৫-১৬ আয়বর্ষের। করযোগ্য আয় থাকলে টাকা দিতে হবে। বছরের মাঝপথেই কিছু ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কেটে রাখা হয়। কেটে রাখা টাকা বছর শেষে রিটার্ন জমার সময় মোট করের সঙ্গে সমন্বয় করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, অগ্রিম কর কেটে রাখার বিষয়টি প্রমাণ করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

কর হার: আগেরবারের মতো এবারও কোনো করদাতার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে। আর নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। করদাতা প্রতিবন্ধী হলে তাঁকে পৌনে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা সোয়া চার লাখ টাকা। এ ছাড়া সন্তান প্রতিবন্ধী হলে পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবক করদাতা হলে বার্ষিক আয়ে আরও ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত সুবিধা পাবেন। করমুক্ত সীমার বেশি আয় হলে বিভিন্ন হারে কর দিতে হবে। করমুক্ত আয়সীমার পর প্রথম ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে; পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ; পরবর্তী ৬ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ; পরবর্তী ৩০ লাখ টাকার জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তির মোট আয় যদি সাড়ে ৪৭ লাখ টাকার বেশি হয়; তবে বাকি টাকার জন্য ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে। এ ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্য সিটি এলাকার জন্য ৪ হাজার টাকা। আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা। এর মানে হলো, আয়-ব্যয় হিসাব করে যদি দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার করদাতাদের করের পরিমাণ ন্যূনতম করের চেয়ে কম হয়, তবে তাঁকে এলাকাভেদে ওই নির্দিষ্ট ন্যূনতম কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বার্ষিক আয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে, তাঁদেরই ন্যূনতম কর দিতে হবে।

অগ্রিম কর: অনেক করদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) কিংবা সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা রাখেন। এ জন্য তাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ পান। কিন্তু সুদের অর্থ তোলার সময় কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলে ১০ শতাংশ করে অর্থ কেটে রাখে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি কিন্তু অগ্রিম কর হিসেবে দিচ্ছেন ওই করদাতা। বছর শেষে সেই অগ্রিম কর বাদ দিয়ে করের টাকা জমা করবেন।

গাড়ির মালিকেরা গাড়ি নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় বিভিন্ন হারে অগ্রিম কর দিয়ে থাকেন, যা বছর শেষে সমন্বয় করা যায়। এ অগ্রিম কর কাটা হয় মোটর গাড়ির সিসিভেদে। এ অগ্রিম করের পরিমাণ ১৫০০ সিসি পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা, ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা; ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা; ৩০০০ সিসি পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা; ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ১ লাখ টাকা এবং ৩৫০০ সিসির বেশি হলে সোয়া ১ লাখ টাকা। এ পরামর্শক ও উপদেষ্টা সেবা দিতে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী হিসেবে টাকা নেন। সেই টাকার ওপরে ১০-১২ শতাংশ হারে অগ্রিম কর কেটে রাখার পর সম্মানীর টাকা হাতে পান ওই পরামর্শক বা উপদেষ্টা। তিনি বছর শেষে এ অর্থও সমন্বয় করতে পারবেন।

বিনিয়োগে কর রেয়াত: চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগে কর রেয়াতি সুবিধা ৩০ শতাংশ থেকে কিছুটা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। কীভাবে এ বিনিয়োগের কর রেয়াতি সুবিধা পাওয়া যাবে, এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একজন করদাতা সারা বছরে ভবিষ্য তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমায় ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। এটা ওই করদাতার বিনিয়োগ। ওই বছরে ৪ লাখ টাকা আয় করলে সেই হিসাবে করের পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা। তবে কর রেয়াত পেতে বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাবে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বা ১ লাখ টাকা। কিন্তু ওই করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগ এর চেয়ে কম; মাত্র ২৫ হাজার টাকা। এই ২৫ হাজার টাকার ১৫ শতাংশ; মানে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা কর রেয়াত পাবেন। ওই করদাতার নির্ধারিত ১৫ হাজার টাকা থেকে কর রেয়াতের টাকা বাদ দিতে হবে।

এ ছাড়া এফডিআর কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত। কোনো চাকরিজীবী বা করদাতার যদি গৃহসম্পত্তি থেকে আয় থাকে; তা-ও করের মধ্যে পড়বে। তবে গৃহসম্পত্তির মোট আয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়িঘর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, দারোয়ানের বেতন, সিটি করপোরেশন বা পৌর কর বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া কারও সম্পদ সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি হলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ দিতে হবে। এ সারচার্জ ওই ব্যক্তির আয়ের ওপর বসবে। আর যদি সম্পদ থাকে কিন্তু আয় নেই। তবু ন্যূনতম তিন হাজার টাকা দিতে হবে।