অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। এর আগেই প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ডের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হবে। তবে চাকরি বহাল থাকছে দুই প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর। শিল্পায়নে গতি আনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ বোর্ড এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বিডা গঠন করা হয়। নতুন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে গতি আসবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তবে প্রতিষ্ঠানটি যাতে গতানুগতিক না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তারা। বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত গতি আনতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ড একীভূত করে বিডা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী, সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এফবিসিসিআইর সভাপতিসহ বিশেষায়িত দুটি চেম্বারের প্রতিনিধিও থাকবেন কমিটিতে।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া, শিল্প স্থাপনে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই হবে বিডার প্রধান কাজ। এ ছাড়া সরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমিকে উৎপাদনে ব্যবহার করতে সহায়তা করবে বিডা। উল্লেখযোগ্য অন্য কাজের মধ্যে রয়েছে, শিল্প প্রকল্প অনুমোদন ও নিবন্ধন দেওয়া, বেসরকারি খাতে শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সরকারের নীতি বাস্তবায়ন, বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য তফসিল প্রণয়ন এবং এলাকা নির্বাচন ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া। বিডার একটি শাখা বিনিয়োগ নিবন্ধন নিয়ে কাজ করবে। জমি ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্য বিষয়গুলো দেখভাল করবে আরেক শাখা। একটি কার্যকর ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে সহনীয় একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যেই সেবা পাবেন উদ্যোক্তারা।
বিডাকে শক্তিশালী আইনি ভিত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করেছে সরকার। গত ৩১ জুলাই জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটিতে বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি ও সংস্থার যুগ্ম সচিব তৌহিদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ের নিজস্ব ভবনে বিডার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ভবনের নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে যতটুকু সম্ভব ব্যবহার উপযোগী করে আপাতত কাজ শুরু হবে। তার আগেই যে কোনো দিন প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। আইন অনুযায়ী, একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন কর্তৃপক্ষের প্রধান। বিডা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মনোভাব জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসাইন খালেদ বলেন, বিনিয়োগে গতি ফেরাতে বিডার মতো প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানান তারা। সত্যিকারের ওয়ানস্টপ সেবা দিয়ে সহজ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এ প্রতিষ্ঠান। তবে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো এটিও যেন শেষ পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বিনিয়োগে বিদ্যমান প্রতিকূলতা চিহ্নিত করে সমাধানে জুতসই কৌশল নিতে হবে।