ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকভেদে এসএমই ঋণে মোট ১৪ ধরনের চার্জ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো ব্যাংক ৬টি বিষয়ের বাইরে চার্জ নিতে পারবে না। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এসব ক্ষেত্রে চার্জ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বড় ঋণের তুলনায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি হওয়ায় এমনিতেই ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণে বেশি সুদ নিয়ে থাকে। এর বাইরে বিভিন্ন নামে বাড়তি চার্জ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন গ্রাহক। এসব অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে, ব্যাংকভেদে ১৪টি নামে চার্জ নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রত্যেক ব্যাংক সব ক্ষেত্রে চার্জ নিচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে চার্জ নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৬টি খাতে চার্জ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ইতিমধ্যে উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ব্যাংকভেদে বর্তমানে যে ১৪ ধরনের চার্জ নেওয়া হয় তা হলো_ ঋণ আবেদন, ডকুমেন্টেশন, দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ, সিআইবি, স্ট্যাম্প, লিগ্যাল অ্যান্ড ভ্যালুয়েশন, ঋণ প্রক্রিয়াকরণ, আংশিক নিষ্পত্তি, পুনঃতফসিল, মূল্যায়ন ফি, দেরিতে পরিশোধ, সার্ভিস চার্জ, সীমা বর্ধিতকরণ ও অন্যান্য নামে। তবে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ঋণ আবেদন, ডকুমেন্টেশন, দ্রুত নিষ্পত্তি, সিআইবি, স্ট্যাম্প ও লিগ্যাল অ্যান্ড ভ্যালুয়েশন_ এই ৬টি খাতে চার্জ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঋণ আবেদন ফি নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। দ্রুত নিষ্পত্তি ফি বাবদ সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নেওয়া যাবে। এ ছাড়া অন্য ৪টি খাতে যা খরচ হবে তাই নিতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো চার্জ নেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এসএমই ঋণে বাড়তি চার্জের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আলোচনায়ও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্রাহকরা জানান, অন্য সব খাতের তুলনায় এমনিতেই এসএমই ঋণে বেশি সুদ দিতে হয়। তার ওপর বিভিন্ন নামে চার্জ কাটার ফলে সুদহার ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনাও রয়েছে, দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য বিভিন্ন চার্জ বাবদ ১২ হাজার টাকা কেটে রাখা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে চার্জ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রতিটি ঋণ বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে সাধারণ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। একটি সময় প্রতি একশ’ টাকা এসএমই ঋণের বিপরীতে এক টাকা সঞ্চিতি রাখতে হতো। তবে এসএমই ঋণ উৎসাহিত করতে বছর দুয়েক আগে তা কমিয়ে ২৫ পয়সা করা হয়েছে। তিনি জানান, ছোট ছোট ঋণের দেখভালের খরচ বেশি হওয়ায় এসএমই ঋণে সব সময়ই বেশি সুদ নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো।