Home বাংলা নিউজ বায়িং হাউসের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ চায় বিজিএমইএ: বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ

বায়িং হাউসের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ চায় বিজিএমইএ: বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ

apparel

বায়িং হাউস বা বায়িং এজেন্টদের কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ চায় তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এজন্য সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক শিল্পে বিদেশি ক্রেতার পক্ষে নিয়োজিত তাদের স্থানীয় এজেন্ট বা বায়িং হাউস রফতানি আদেশ সংগ্রহসহ এলসি স্থানান্তর করে থাকে। সেই সঙ্গে রফতানি কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তদারক করে। তবে তাদের কার্যক্রমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পোশাক রফতানিকারকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, কিছু অসাধু বায়িং হাউস অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট ছাড়াই রফতানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করে দেয়। ফলে ক্রেতার কাছ থেকে রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসন ব্যাহত হয়। অসাধু বায়িং হাউসগুলো বায়ারের সঙ্গে যোগসাজশে পণ্যের চালান সময়মতো জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটায়। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাপড় সরবরাহ করে। বায়ারের কাছ থেকে কম মূল্যে অর্ডার সংগ্রহ করে কৌশলে কারখানার সঙ্গে অসম চুক্তি করে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা, বিশ্ববাজারে ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা তথা রফতানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি ও প্রতারণা থেকে সুরক্ষার জন্য স্থানীয় বায়িং হাউস বা এজেন্টদের বেআইনি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, কোনো কোনো বায়িং হাউসের অসাধুতার কারণে কারখানা মালিকরা প্রায়ই সমস্যায় পড়ছেন। প্রতি মাসেই বিজিএমইএতে বায়িং হাউসের কার্যকলাপ নিয়ে অভিযোগ আসছে। কোনো ক্ষেত্রে তারা সময়মতো পেমেন্ট আনছেন না, কোনোটিতে কাগজপত্র ঠিকমতো তৈরি না করায় মালপত্র ডেলিভারিতে দেরি হচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু বায়িং হাউস বা এজেন্টদের এসব কাজের জবাবদিহিতা নেই বা জবাবদিহিতার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। এজন্য বিজিএমইএ চায় বায়িং হাউস বা এজেন্টগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হোক। সেজন্য মন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতির এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) মহাসচিব আমিনুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, বিজিএমইএ সভাপতি যেসব অভিযোগ করেছেন বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ, এনডোর্সমেন্ট ছাড়া পণ্য পাঠানোর সুযোগ নেই। এই কাজটি ব্যাংক টু ব্যাংক হয়ে থাকে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, বায়িং হাউসগুলো বৈশ্বিক ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে স্থানীয় গার্মেন্ট কারখানায় পণ্য তৈরির কার্যাদেশ সরবরাহ করে। কারখানা মালিকের সম্মতির পরে চূড়ান্ত অর্ডার হয়। তখন এলসি ট্রান্সফার করা হয়। বায়িং হাউস কারখানাতে যথাযথ মান অনুযায়ী পণ্য তৈরি হচ্ছে কি-না তা দেখে। আর সময়মতো পণ্য সরবরাহের কাজ করে। কিন্তু পণ্য বন্দরে পাঠানো, এলসি, শিপমেন্ট- এগুলো বায়িং হাউস করে না।

তবে এ কথা সত্য যে, অনেকদিন ধরে বিজিবিএও সালিশি বোর্ড গঠনের বিষয়ে সরকার ও বিজিএমইএকে অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু সরকার ও বিজিএমইএ এ বিষয়ে গা করছে না। পরে বিজিবিএ নিজেদের মতো করে একটি সালিশি বোর্ড গঠন করে, যে বোর্ড এখন বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, গতকালই বিকেএমইএর সঙ্গে একটি সালিশ বৈঠক হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত বায়িং হাউস বিজিবিএর সদস্য নয়। ওই বায়িং হাউস মাল শিপমেন্ট হলেও ফ্যাক্টরিকে এলসি দেয়নি, আবার ডকুমেন্ট পাঠিয়েছে অথচ রফতানি মূল্য আসেনি। যাহোক, বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। তিনি কারখানা ও বায়িং হাউসের নাম বলতে চাননি।

আমিনুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় কারখানা মালিক ক্ষমতার চেয়ে বেশি অর্ডার নেয়। পরে মালপত্র সময়মতো সরবরাহ করতে পারে না। অনেক বায়ার সময়মতো পেমেন্ট করছে না। এজন্য বিজিবিএ অনেক সময় সংশ্লিষ্ট ক্রেতার দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে। বিজিবিএ মহাসচিবের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬৫০টি বায়িং হাউস সংগঠনটির সদস্য। এই ৬৫০টি বায়িং হাউসসহ অন্য যেসব বায়িং হাউস রয়েছে তাদের ক্রেতাদেরও এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানি হয় তার ৭৫ শতাংশ কার্যাদেশ আসে বায়িং হাউসগুলোর মাধ্যমে। বিশ্বের সব দেশের ক্রেতারাই বায়িং হাউসের মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যাদেশ দিয়ে থাকেন।