Home বাংলা নিউজ বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে চামড়াশিল্প

বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে চামড়াশিল্প

leather products

তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। কাঁচামাল হিসেবে দেশি চামড়ার ব্যবহার হওয়ায় সর্বোচ্চ মূল্যসংযোজন হয় এ খাতে। রফতানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা বা জিএসপি, সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে এ খাত। তবে চামড়াশিল্পের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অংশ এখনও ১ শতাংশেরও কম। টানা দুই অর্থবছরে কমার পর গত অর্থবছরে সামান্য ব্যবধানে আয় বাড়লেও নাজুক অবস্থা কাটেনি। এত অনুকূল অবস্থায়ও কেন উঠে দাঁড়াতে পারছে না চামড়া ও চামড়াশিল্প, সে বিষয়ে একটি নিবিড় গবেষণা চালিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটকে (বিএফটিআই) দিয়ে পেশাদার এ গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পিছিয়ে পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়েছে। যেমন- চামড়া সংগ্রহে সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা, পরিবেশসম্মত উৎপাদন শর্তের প্রতি তোয়াক্কা না করা ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমিকের অভাব। এ ছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কার্যকর সমন্বয় না থাকা, উচ্চমানের পণ্য তৈরিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সংকট, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাব এবং মূলধনি পুঁজির সংকটকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সুবিধাজনক অবস্থান প্রসঙ্গে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা, সস্তা শ্রম, নিজস্ব কাঁচামালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, তৈরি পোশাকে ব্যবহারসহ বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্ববিখ্যাত এডিডাস, মার্ক অ্যান্ড স্পেনসার, নাইকি ও কে মার্টের মতো ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে জুতা ও চামড়াপণ্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশের প্রতি বিখ্যাত এসব ব্র্যান্ডের আস্থাকে শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিএফটিআই। ‘সেক্টর বেইজড নিড অ্যাসেসমেন্ট অব বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল- লেদার সেক্টর’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করে বিএফটিআইর একটি পেশাদার গবেষণা দল। চামড়াশিল্প কারখানার বাস্তব পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনে তথ্য সংগ্রহ, শ্রমিক-মালিক ও কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এবং তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। চিহ্নিত প্রতিবন্ধতা দূর করা এবং বর্ধিত বিশ্বচাহিদা কাজে লাগাতে চামড়া ও চামড়া খাতে বড় আকারের বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানতে চাইলে বিএফটিআইর প্রধান নির্র্বাহী আলী আহমেদ সমকালকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের অধীনে একটি নিবিড় এবং পেশাদার গবেষণা করছেন তারা। গবেষণায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চামড়াশিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের অভাব এবং মৌসুমে চামড়া সংগ্রহে সমন্বয়হীনতাকে তাদের কাছে বড় কারণ বলে মনে হয়েছে। গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তারা প্রতিবেদনটি দিয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধান এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করেন তিনি। তবে এ প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস, ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়শেনের (বিএফএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের। সমকালকে তিনি বলেন, বিশ্ব প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে প্রতিবেদনে উল্লেখিত অনেক কারণের তথ্যই সঠিক নয়। তবে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবের যে কথা বলা হয়েছে, সেটা মেনে নিতেই হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাতে মূল্যসংযোজন হয় ৮৫ শতাংশ। মোট উৎপাদনের ৯৫ শতাংশই রফতানি হয়।