Home বাংলা নিউজ ‘জামদানি’ আমদানি করা যাবে না

‘জামদানি’ আমদানি করা যাবে না

জামদানি-আমদানি-করা-যাবে-ন

এখন থেকে দেশের বাজারে অন্য কোনো দেশের জামদানি কেনাবেচা হবে না। কেননা, জামদানি কাপড়ের আদি ভূমি হিসেবে বাংলাদেশ এর স্বত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডবি্লউআইপিও) নিয়ম মেনে জামদানিকে এ দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন_জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া শেষ করায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) এই জিআই স্বত্ব দেওয়া হয়। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ডবি্লউআইপিওর নিয়ম অনুযায়ী, দেশের কোনো সংস্থা, সমিতি ও ব্যবহারকারী গোষ্ঠীকে জিআই দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরকে (ডিপিডিটি)। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে এ অধিদপ্তর। ফলে দেশি জামদানির ওপর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। এখন এ দেশে অন্য কোনো দেশের জামদানি বিক্রি করার সুযোগ নেই। এ দেশে জামদানির নামে কিছু বিক্রি করতে হলে ডিপিডিটির কাছ থেকে আলাদা নিবন্ধন নিতে হবে। একইভাবে বাংলাদেশের জামদানি রফতানির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা নিতে অন্য দেশগুলোতে জিআই নিবন্ধন নিতে হবে। এ প্রক্রিয়াও চালাবে বাংলাদেশ বলে কর্মকর্তারা জানান। যেসব দেশে বাংলাদেশের জামদানির চাহিদা রয়েছে, সেখানে নিবন্ধন নেওয়ার পর ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে। তখন ওই বাজারেও অন্য দেশ একই জামদানি বিক্রি করার সুযোগ পাবে না। এ কারণে বাংলাদেশের জামদানির আলাদা ইমেজ দাঁড় করতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে।

ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার মো. সানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, জিআইর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সনদের কোনো ব্যবস্থা নেই। এক সনদে সব দেশে স্বীকৃতি মিলবে না। যেমন_ উপাদ্দা জামদানি নিবন্ধন করেছে ভারত। বাংলাদেশও এখন জামদানির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। বিশ্ববাজারে জিআই সুবিধা পেতে হলে প্রতিটি দেশ থেকে আলাদা নিবন্ধন নিতে হবে। আবার বাংলাদেশের জামদানি নিবন্ধন হওয়ায় এখন অন্য কোনো দেশের জামদানি আমদানি করে বাজারে বিক্রি যাবে না। এককভাবে এ দেশের বাজারে বাংলাদেশের জামদানি কেনাবেচা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জামদানির জিআই নিবন্ধন করেছে বিসিক। এখন যারা উৎপাদন করবে, তাদের আবেদনের ভিত্তিতে আলাদা নিবন্ধন দেওয়া হবে। নিবন্ধন নেওয়ার পর যারা নিবন্ধন নেবে, তারাই কেবল উৎপাদন করবে। অন্য কেউ জামদানি উৎপাদন করতে পারবে না। এতে উৎপাদনকারীরা জামদানির সঠিক মূল্য পাবেন। অন্যদিকে ক্রেতারাও সঠিক জামদানি কিনতে পারবেন।

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য বলতে ভৌগোলিক নির্দেশকসম্পন্ন কৃষিজাত, প্রক্রিয়াজাত ও প্রস্তুত করা পণ্যকে বোঝাবে। এ পণ্য কোনো বিশেষ দেশে বা ভূখণ্ডের কোনো বিশেষ অঞ্চলে জাত বা প্রস্তুত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওই পণ্যের বিশেষ গুণাগুণ, সুনাম ও অন্যন্য বৈশিষ্ট্য আবশ্যিকভাবে তা ভৌগোলিক উৎপত্তিস্থলের ওপর প্রযুক্ত। পণ্য প্রস্তুত করা হলে সেটির উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণের কোনো একটি ওই ভূখণ্ডে হতে হবে। এমনকি কোনো দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলে সেটিকে সে দেশের ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জামদানিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ বলে ভাবা হয় শত শত বছর ধরে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রাচীন ভারতীয় অর্থশাস্ত্রবিদ কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র বইয়ে ঢাকাই মসলিন ও জামদানির কথা উল্লেখ হয়েছে। ইবনে বতুতাও ১৪ শতকে তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে জামদানি তৈরির কথা তুলে ধরেছেন। সেই প্রাচীনকালেই বাংলাদেশের জামদানি বস্ত্রের চাহিদা ছিল বাইরের দেশগুলোতে। ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সে সময়ও জামদানি রফতানি হতো।

গত ৪ আগস্ট জিআই নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর তাদের নিজস্ব জার্নালে বাংলাদেশের জামদানির জন্ম, উৎপাদন, বিস্তার এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ২৬ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। শঙ্কা ছিল নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আপত্তি আসতে পারে। কিন্তু গত দুই মাসেও আপত্তি না আসায় এ ব্যাপারে বাংলাদেশের একক দাবি স্বীকৃতি পেয়েছে।