Home বাংলা নিউজ শুল্ক ফাঁকি রোধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর

শুল্ক ফাঁকি রোধে কঠোর হচ্ছে এনবিআর

এনবিআর

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অংশ হিসেবে আমদানি পণ্য খালাসে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষকে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মূলত শুল্ক ফাঁকি বন্ধ ও দ্রুত পণ্য খালাস করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে বন্দরে খালাসের সময় প্রত্যেক পণ্যের চালানের ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্টে পণ্যের বর্ণনা থাকতে হবে। এ নিয়ম না মেনে কেউ পণ্য আমদানি করলে তা খালাস করা হবে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ নিয়ম ভঙ্গ করে খালাসের অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করতে হবে। এনবিআর সূত্র জানায়, অনেক পণ্যের চালানে প্যাকিংলিস্ট থাকে না। ফলে এ প্রক্রিয়ায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে। আমদানি করা চালানে জালিয়াতি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণা রোধে এবারের বাজেটে দুই শতাধিক ভোগ্যপণ্য আমদানিতে নূ্যনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, উচ্চহারের শুল্কের পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সতর্ক নীতি অনুসরণ করতে হবে। এসব পণ্যের শ্রেণিকরণ (এইচএস কোড) ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। ঠিকমতো মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করতে হবে। সশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত যেসব পণ্যের শুল্কহার বেশি, সেগুলো আমদানিতে ফাঁকি বেশি দেওয়া হয়। ফাঁকি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ঘোষণায় পণ্যের যে মূল্য উল্লেখ করা হয়, তার যথার্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে তা মিলিয়ে দেখতে হবে।

এনবিআর সূত্র জানায়, বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যসহ কয়েকশ’ পণ্য রয়েছে, যেগুলোতে বেশি শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালেও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে কাস্টমসের ট্যারিফ তালিকায় শ্রেণিভুক্ত (এইচএস কোড) পণ্যের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। এগুলোর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ পণ্য আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েস তথা মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব পণ্য আমদানিতে সর্বনিম্ন ৫০ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশ’ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য কম দেখানো হয়। বেশিরভাগ পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ রয়েছে। কাস্টমসের তালিকায় শুল্ক ফাঁকির দিক থেকে পণ্যগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সম্প্রতি এনবিআরে এক বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি রোধে ‘ক্রাশ কর্মসূচি’ গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র বলছে, মূল্য বেঁধে দেওয়ার পরও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি ঠেকানো যাচ্ছে না। নূ্যনতম মূল্য অর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে সংশ্লিষ্ট পণ্যের যে দামই থাকুক না কেন, আলোচ্য পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের নিচে ঘোষণা দেওয়া যাবে না। যেমন_ চকোলেট আমদানিতে প্রতি কেজির নূ্যনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ থেকে আড়াই ডলার, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি টাকায় ১৫৬ থেকে ১৯৫ টাকা। আমদানিকারক এনবিআরের বেঁধে দেওয়া দামের নিচে চকোলেটের মূল্য ঘোষণা দিতে পারবেন না। নির্ধারিত দামের ওপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হারে শুল্ক-কর আদায় করবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।