রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যদিও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। রপ্তানি আয়ের বাইরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক বড় উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয়। আর চার মাস ধরেই প্রবাসী আয়ে চলছে মন্দাভাব। তবে আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়েনি বলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো সন্তোষজনকই আছে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে। তবে গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ১৩৮ কোটি ডলার। তার মানে ৩৮ কোটি ডলার প্রবাসী আয় কমে আসে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই। পরের তিন মাসেও প্রবাসী আয়ের এই নেতিবাচক ধারা বজায় ছিল। সব মিলিয়ে গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫০৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসেবে জনশক্তি রপ্তানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রার দরপতন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যহ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাই মূলত দায়ী।
অন্যদিকে, দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ের বড় তিন ভরসা তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। এই খাতগুলো থেকেই রপ্তানি আয়ের ৮৮ শতাংশ এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই তিন খাতের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের সাম্প্রতিক ওঠানামা আপাতত বৈদেশিক লেনদেনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। তবে এই উত্থানপতন শিল্প উৎপাদন, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানুষের আয়ে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১ হাজার ৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ১৩ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল। তার মানে এবার রপ্তানি বেড়েছে ৬৬ কোটি বা ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৫৮ কোটি ডলার, তবে পণ্য রপ্তানি ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে। ১ হাজার ৭৯ কোটি ডলারের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ৭৪ শতাংশ বা ৮৮২ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৮২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। তার মানে এবার পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫৯ কোটি ডলার বা ৭ শতাংশ। অবশ্য আলোচ্য সময়ে ৯৫১ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পোশাক রপ্তানি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ কম হয়েছে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পোশাক রপ্তানিতে ১২ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আমরা সেটি পারছি না। বরং ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার অতি মূল্যায়ন ও গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততার জন্যই রপ্তানি আয় প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আসছে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোশাকের ক্রয়াদেশ পাওয়ার মৌসুম। ফলে সে সময় পোশাক রপ্তানি আয় বাড়তে পারে। তবে বর্তমানে কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ আসার পরিমাণ কিছুটা শ্লথ বলে জানান তিনি।
রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে খাতটি থেকে ৪২ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ২৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের উৎস পাট ও পাটজাত পণ্যে ২৯ কোটি ৬২ লাখ ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের চেয়ে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে হোম টেক্সটাইলে ২১ কোটি, হিমায়িত খাদ্যে ১৯ কোটি ৬৬ লাখ, কৃষিজাত পণ্যে ১৬ কোটি ৯০ লাখ, প্রকৌশল পণ্যে ১২ কোটি, হস্তশিল্পে ৫ কোটি ৬৬ লাখ, প্লাস্টিক পণ্যে ৪ কোটি ৯১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে। এর মধ্যে হস্তশিল্পে ৫৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, প্রকৌশল পণ্যে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ, হিমায়িত খাদ্যে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।