রাজশাহী টেক্সাটাইল মিলস লিমিটেড। ১৯৭৯ সালের ১৩ জানুয়ারি উৎপাদন শুরুর পর মাত্র দুই অর্থবছর লাভের মুখ দেখেছে মিলটি। বাকি অর্থবছরগুলোয় লোকসান হওয়ায় বর্তমানে মিলটির দেনা ১১১ কোটি টাকায় ঠেকেছে। জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তত্কালীন শিল্পমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ‘রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস’ প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন পায়। ১৯৭৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মিলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ১৩ জানুয়ারি। মিলটি থেকে মূলত সুতা উৎপাদন করা হয়।
মিলের পুরনো নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, উৎপাদন শুরুর প্রথম অর্থবছরে (১৯৭৯-৮০) উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ২৫ লাখ কেজি সুতার। উৎপাদন হয়েছিল ১১ লাখ ১২ হাজার কেজি। মিলটি প্রথম লাভের মুখ দেখে ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে। সে বছর ১৪ লাখ ১৫ হাজার কেজি সুতা উৎপাদন হয়, লক্ষ্য ছিল ১৯ লাখ ৮৪ হাজার কেজি। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে মিলটি মোট ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা লাভ করে। এর পরের বছর (১৯৮৪-৮৫) লাভ করে ৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এর পর ফের লোকসানে পড়ে মিলটি। ৩৭ বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি টাকায়। লোকসান কমাতে মিলটি বর্তমানে ভাড়ায় চালানো হচ্ছে।
১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে পরীক্ষামূলক সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে ভাড়ায় চালানোর এ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৩ সালে মিলটি পুরোপুরি ভাড়ায় চলে যায়। সে বছরের ৩০ জুন সরকারিভাবে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সে সময় মিলটির এক হাজার স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছায় অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানো হয়। পরে ২০০৪ সালের আগস্টে মিলটি ফের চালু হলে এ শ্রমিকরা দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ পান। রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত মিলটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি টাকায়। বর্তমানে দুই শিফট মিলিয়ে মোট ১৬০ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখানে। এদের দৈনিক ১২০-১৮০ টাকা মজুরি দেয়া হয়। পাশাপাশি মাস্টাররোল ও স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন বেশকিছু। বর্তমানে মিলটি থেকে মাসে ৫ লাখ টাকার মতো আয় হয়, যার পুরোটাই বিদ্যুত্ বিল বাবদ চলে যায়। কর্মীদের বেতন ও মিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে অন্তত ১০ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে মিলটির।
মিল সূত্রে আরো জানা গেছে, বর্তমানে পৌরকর হিসেবে মিলটির কাছ থেকে ২ কোটি ৬৯ হাজার ৯৯৬ টাকা পাবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় দিন দিন পৌর কর বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছেই। সরকারিভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকায় মিলটির শ্রমিকরা অল্প মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সম্পর্কে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলে ৩৭ বছর ধরে সিংগেল ফাইবার ফিনিশিং বিভাগে কাজ করা জরিনা বেগম জানান, মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি এ কাজে যোগ দেন। সে সময় তার মাসিক বেতন ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে তিনি দৈনিক ১৪০ টাকা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ফিনিশিং মাস্টার নূরুল ইসলাম জানান, অন্য শ্রমিকদের চেয়ে তার অবস্থা একটু ভালো। মাস্টাররোলে থাকায় তিনি দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরি পান। তবে মাস্টারোল কর্মচারীর সংখ্যা সীমিত। বিকল্প কাজ না থাকায় বাধ্য হয়ে সস্তায় শ্রম দিচ্ছেন বেশির ভাগ শ্রমিক। এসব বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মিলের ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মিলটি বর্তমানে পুরোপুরি লোকসানে চলছে। লোকসান ঠেকাতে মিলটির আধুনিকায়ন জরুরি।’তিনি আরো বলেন, ‘মিলটি আধুনিকায়ন করতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বিষয়টি অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি মিলটির আধুনিকায়ন করে পুনরায় সরকারিভাবে উৎপাদন শুরু হয়, তাহলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারের আয়ের একটি খাত তৈরি হবে।’