দেশের পণ্য রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক আছে। তার মানে রপ্তানি আয় বাড়ছে। সে জন্য প্রবাসী আয়ে মন্দাভাব থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় নিয়ে হাঁসফাঁস তৈরি হয়নি। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানিতে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের ১ হাজার ২৮৮ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। গত জুলাই বাদ দিলে বাকি চার মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। জাতিসংঘ সংস্থা এসকাপের এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর রপ্তানি আয়ে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের বেলায় এ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশ। পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রপ্তানি আয়ের স্বস্তির বিপরীতে প্রবাসী আয় নিয়ে আছে শঙ্কা। কারণ, গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রবাসী আয় এখন সর্বনিম্ন। গত নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ৯৫ কোটি ডলার। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ ৯০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। এরপর প্রতি মাসেই আয় ছিল ১০০ কোটি ডলারের ওপরে। পোশাকের ওপর ভর করেই চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের পণ্য রপ্তানি আয় সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। আলোচ্য সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ বা ১ হাজার ১১৩ কোটি ডলার এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। চলতি অর্থবছর পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৮ কোটি ডলার।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। অন্যদিকে বছরের এই সময়টাতে ক্রয়াদেশ তুলনামূলক কম থাকে। দুটি ঈদের কারণে সব কারখানা ১০-১৫ দিন বন্ধ ছিল। ফলে পোশাক রপ্তানি আয় কিছুটা কম হয়েছে। তা না হলে এ খাত থেকে আয় আরও বাড়ত বলে মনে করেন বিজিএমইএর এই নেতা।
আগামী ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বিজিএমইএ। সেটি অর্জন করতে হলে বছরে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। কারণ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রবৃদ্ধি এখনো ৫ শতাংশ কম। তবে অর্থবছরের শেষের দিকে এসে বোঝা যাবে আমরা কতটুকু পিছিয়ে আছি।’ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
গত নভেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানিতে ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের আয় হয়। এটি গত নভেম্বরের চেয়ে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যে গত মাসেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়। আগস্টে হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও হস্তশিল্প পণ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ৫৩ কোটি ডলারের আয় হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের ৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৩৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যে ২৪ কোটি, কৃষিজাত পণ্যে ২২ কোটি, প্রকৌশল পণ্যে ১৭ কোটি, প্লাস্টিক পণ্যে ৫ কোটি, বিশেষায়িত বস্ত্রে ৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে।