পোশাক খাতের অ্যাকসেসরিজ বা অনুষঙ্গ হিসেবে ৩০ প্রকারের বেশি পণ্য ব্যবহূত হয়। একসময় এসব পণ্যের বেশির ভাগই আমদানি করতে হলেও এখন প্রায় সবই দেশে তৈরি হচ্ছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে অনুষঙ্গ খাতে। তবে বেশির ভাগ পণ্য প্রস্তুতকারীই তৈরি করছে গুটিকয়েক পণ্য। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, প্রধানত পাঁচটি পণ্য ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের ৭০ শতাংশ অনুষঙ্গ প্রস্তুতকারী কারখানা। জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্পের অনুষঙ্গ প্রস্তুতকারী কারখানায় উত্পাদিত পণ্যের মধ্যে আছে— পলিব্যাগ, বোতাম, জিপার, হ্যাংগার, কার্টন, নেকবোর্ড, ব্যাকবোর্ড, সুইং থ্রেড, হ্যাংট্যাগ, প্রাইসট্যাগ, ইলাস্টিক ও ড্রস্ট্রিং, ইন্টারলাইনিং, কুইল্টিং, বারকোড, এমব্রয়ডারি, গামটেপ, পিপি ব্যান্ডসহ ৩০-৩৫ প্রকারের পণ্য। আর এসব পণ্য প্রস্তুতের জন্য রয়েছে ১ হাজার ৪৯৯টি কারখানা, যার ৭০ শতাংশই তৈরি করে কার্টন, পলিব্যাগ, সুইংথ্রেড, লেবেল এবং ইলাস্টিক ও ড্রস্ট্রিং। সূত্রমতে, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প অনুষঙ্গ প্রস্তুতকারকরা তাদের উত্পাদিত পণ্যের প্রচ্ছন্ন রফতানি (ডিমড এক্সপোর্ট) করেন, যার মাধ্যমে আয় হয় ৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু তিনটি পণ্যের নির্ভরতা অ্যাকসেসরিজ খাতের ভবিষ্যত্ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। খাতটিকে টেকসই করতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে উদ্যোক্তাদের। কারণ তিনটি পণ্য তৈরিতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের মুনাফার হারে লাগাম টানতে শুরু করেছে। ক্রয়াদেশ পেতে শুরু হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। জানা গেছে, প্রায় দেড় হাজার অনুষঙ্গ প্রস্তুতকারী কারখানার মধ্যে শুধু কার্টন তৈরি করে ৬৭৫টি কারখানা। এছাড়া পলিব্যাগ এবং ইলাস্টিক ও ড্রস্ট্রিং তৈরি করে যথাক্রমে ১৪৫টি ও ১২৩টি কারখানা। এ হিসাবে মোট কারখানার ৬২ শতাংশ তৈরি করে কার্টন, পলিব্যাগ এবং ইলাস্টিক ও ড্রস্ট্রিং। এছাড়া সুইং থ্রেড কারখানা আছে ৭৮টি ও লেবেল তৈরির কারখানা আছে ৫৭টি। এ দুই পণ্যসহ হিসাব করলে মোট কারখানার ৭১ দশমিক ৯ বা ৭২ শতাংশই পাঁচটি পণ্য তৈরিতে নিয়োজিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সদস্যদের মধ্যে বোতাম প্রস্তুতকারক কারখানার সংখ্যা ২৮। এছাড়া একটি কারখানা কেমিক্যাল, চারটি এমব্রয়ডারি, আটটি গামটেড, ১১টি হ্যাংগার, ১১টি ইন্টারলাইনিং, ৩১টি প্যাকেজিং, তিনটি প্যাডিং, দুটি পিপি ব্যান্ড, তিনটি কুইল্টিং অ্যান্ড প্যাডিং, একটি রেসিন, আটটি স্ক্রিন প্রিন্ট ও ২৫টি কারখানা জিপার প্রস্তুতকরণে জড়িত। এছাড়া একাধিক পণ্য প্রস্তুতকারী কারখানা আছে ২৭৫টি। পণ্যের পাশিপাশি ১ হাজার ৪৯৯টি কারখানার মধ্যে আছে স্থানভিত্তিক নিবিড়তা। বেশির ভাগ কারখানাই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অবস্থিত। এর মধ্যে ঢাকায় কারখানা আছে ৮০৭টি, নারায়ণগঞ্জে ১৬০টি, গাজীপুরে ২৫৩টি ও চট্টগ্রামে ২৩৫টি। এ হিসাবে মোট কারখানার ৯৭ শতাংশই এ চার অঞ্চলে অবস্থিত। নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভরতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএপিএমইএ সভাপতি আবদুল কাদের খান বণিক বার্তাকে বলেন, তিন থেকে পাঁচটি পণ্য তৈরি করছে ৭০ শতাংশ কারখানা। গুটিকয়েক পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকার কারণ এসব পণ্যে বিনিয়োগ করতে স্বস্তি বোধ করেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ ধরতে প্রস্তুতকারকদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এতে মুনাফার হার কমে যায়। তাই এখন পলি কার্টনের বাইরেও বিনিয়োগ হওয়া উচিত।