এশিয়ার দেশ হলেও এত দিন কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এবার সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রাজধানী নমপেনের সোখা হোটেলে দিনব্যাপী এ কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশর পণ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
কম্বোডিয়ার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চুয়োন দারা সকালের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, কম্বোডিয়ার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীম, বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজী আমিনুল ইসলাম, এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, কম্বোডিয়ার চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নেইক ওখা কিথ মিংসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার একপর্যায়ে কম্বোডিয়ার দায়িত্বে থাকা থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়া। আর রাজনৈতিক সম্পর্ক হলে অন্য যে কোনো প্রয়োজন সহজে মেটানো যায়।
তিনি বলেন, মূলত থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের ট্রেড শো আয়োজনের অভিজ্ঞতা থেকেই কম্বোডিয়ায় এ কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে ট্রেড শো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেখানে প্রায় ১৩ শতাংশ বাণিজ্য বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, কম্বোডিয়ায়ও এ ধরনের নতুন যুগের সূচনা হবে। কম্বোডিয়ার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চুয়োন দারা বলেন, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির নানান সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে এই কনফারেন্স বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। কারণ এই কনফারেন্সে অংশ নেওয়া বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা যেসব পরামর্শ দেবেন তা নীতি প্রণয়নে সহজ হবে। বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাণিজ্য হলো প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। এ ইঞ্জিন সচল রাখতে দুই দেশেরই চেষ্টা থাকতে হবে। যেহেতু কম্বোডিয়া ৮০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আমদানি করে, সেহেতু কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের জন্য বিশাল সুযোগ অপেক্ষা করছে। তবে এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে দূতাবাস না হওয়া পর্যন্ত বাণিজ্য বিনিয়োগের কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই অন্তত দূতাবাস না হওয়া পর্যন্ত অনারারি কনসাল জেনারেল নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ কনফারেন্স শুরুর আগে সকাল থেকেই সোখা হোটেলের বলরুমে কম্বোডিয়াপ্রবাসীদের এক ধরনের মিলনমেলা চলে। দিনভর বিভিন্ন সেশনে বাংলাদেশের ওষুধ, পাট, গার্মেন্ট, প্লাস্টিক, লেদার, সিরামিক, চা, স্টিল, বেভারেজ ও জনশক্তি সম্পর্কে আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপনা করা হয়। কনফারেন্সের প্রথম প্যানেল আলোচনায় ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর সম্পর্কে জানান ওয়ান ফার্মার এমডি কে এস এম মুস্তাফিজুর রহমান, পাটপণ্য সম্পর্কে জুট জেডিপিসির ইডি নাসিমা বেগম, গার্মেন্ট সম্পর্কে মেহমুদ ইন্ডাস্ট্রিজের আবদুল ওয়াদুদ। দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় বেঙ্গল পলিমারের পক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন প্লাস্টিক পণ্য, দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী মুনতাসির মোর্শেদ সিরামিক পণ্য, ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম চামড়াজাত পণ্য এবং বেজার নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ আবদুস সামাদ জানান বাংলাদেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের সুবিধাদি সম্পর্কে। তৃতীয় প্যানেল আলোচনায় চা শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন কাজী অ্যান্ড কাজী টির পরিচালক কাজী এনাম আহমেদ, বেভারেজ অংশ সম্পর্কে তুলে ধরেন গ্লোব ড্রিঙ্কসের রহিমুল ইসলাম ভূঁইয়া, স্টিল সেক্টরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিএসআরএমের মোহাম্মদ মনির হোসাইন এবং বাংলাদেশের জনশক্তি কম্বোডিয়ায় কীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সে সম্পর্কে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দূতাবাসের শ্রম সচিব এ কে এম মনিরুজ্জামান।