পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা অ্যাপারেল সামিট-২০১৭ আয়োজন করতে যাচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী শনিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক দিনের এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
ঢাকার বিজিএমইএ কার্যালয়ের অ্যাপারেল ক্লাবে গতকাল রোববার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা অ্যাপারেল সামিটের লক্ষ্য হচ্ছে সরকার, বেসরকারি খাত, ব্র্যান্ড, শ্রমিক সংগঠনসহ পোশাকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে বাংলাদেশের পোশাক খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
অবশ্য এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স ও সিঅ্যান্ডএর মতো বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা অ্যাপারেল সামিটে অংশ নেবেন না বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, গত ডিসেম্বরে আশুলিয়ার শ্রমিক আন্দোলনের পর শ্রমিক নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটকের প্রতিবাদে ব্র্যান্ডগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে ব্র্যান্ডগুলো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘শোনা যাচ্ছে, ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিরা অ্যাপারেল সামিটে অংশ নেবেন না। এমনটি হলে কি সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?’ জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘শোনা কথায় কান দেওয়া উচিত না। আমরা সবাইকে (ব্র্যান্ড) আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কেউ আসতে পারে, আবার কেউ না-ও আসতে পারে। বিভিন্নজনের বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। তার জন্য সম্মেলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি না।’
পরে জানতে চাইলে বিজিএমইএর একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হয় বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা সামিটে আসছেন না। কারণ সামিটের সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য এইচঅ্যান্ডএমসহ কয়েকটি বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সামিটে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।’
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি ছিল, আশুলিয়ার ঘটনায় আটক হওয়া সব শ্রমিকনেতার মুক্তি। সর্বশেষ গতকাল দুজন শ্রমিকনেতা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। বর্তমানে আর কেউ কারাগারে নেই। সে জন্য ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদের সামিটে না আসার আর কোনো কারণ বা যুক্তি নেই। তাদের আসা উচিত। আসাটা জরুরিও।’ তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বড় ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা না এলেও ছোট ও মাঝারি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
এবারের অ্যাপারেল সামিটের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টুগেদার ফর বেটার টুমোরো’। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করে বিজিএমইএ। সেই সম্মেলনে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫ হাজার কোটি বা ৫০ বিলিয়ন ডলারের নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়। এ জন্য একটি পথনকশা বা রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে পরের বছর সরকারকে দেন সংগঠনটির নেতারা।
পথনকশায় বলা হয়, প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক ও রেলযোগাযোগ উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ অন্য বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং যেসব খাতের সম্ভাবনা আছে, সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গত দুই বছরে অবকাঠামো উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শিল্প কারখানা হলে অবকাঠামোও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সে জন্য আমি বলব না যে কিছুই হয়নি।’
অ্যাপারেল সামিটে তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনটি আয়োজনে বিজিএমইএকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। টাইটেল স্পন্সর হিসেবে আছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান, মঈনুদ্দিন আহমেদ, এস এম মান্নান, মোহাম্মদ নাছির ও মাহমুদ হাসান খান, ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর ও অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।