Home বাংলা নিউজ ৮২ পোশাক কারখানার ব্যবসা বন্ধ হতে যাচ্ছে!

৮২ পোশাক কারখানার ব্যবসা বন্ধ হতে যাচ্ছে!

accord

বৈদ্যুতিক, অগ্নিকাণ্ড ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনে গাফিলতি করায় বিপদে পড়তে যাচ্ছে ৮২টি তৈরি পোশাক কারখানা। সংশোধনকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি দেখাতে না পারলে কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার সেফটি ইন বাংলাদেশ।

ব্যবসা বন্ধের খড়্গের নিচে থাকা ৮২টি কারখানার কোনোটিই ৪০ শতাংশ ত্রুটিও সংশোধন করতে পারেনি। এর মধ্যে কিছু কারখানার অগ্রগতি খুবই নাজুক। ১০ শতাংশের বেশি ত্রুটি সংশোধন করতে পারেনি ১২টি কারখানা। ২০ শতাংশ পর্যন্ত ত্রুটি সংশোধন করতে পেরেছে ১৮টি।

সংশোধনকাজে যথাযথ অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৬০টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে অ্যাকর্ড। এর ফলে কারখানাগুলো অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২১৫টি ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ১২৯টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

জানা যায়, পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কারখানা পরিদর্শন করেছে অ্যাকর্ড। প্রাথমিক পরিদর্শনে কারখানাগুলোতে চিহ্নিত বৈদ্যুতিক, অগ্নিকাণ্ড ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে ত্রুটি সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে আরও তিন-চার দফা সময় বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। তারপরও অগ্রগতি দেখাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কারখানাকে একাধিকবার সতর্ক করে চিঠি দেয় অ্যাকর্ড। তারপরও কাজ না হলে অ্যাকর্ড তালিকা দিয়ে বিজিএমইএকে অবহিত করে, কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসা ছিন্ন করতে চায় তারা।

ত্রুটি সংশোধনকাজে ব্যর্থ কারখানাগুলো নিয়ে তিনটি তালিকা (অগ্রগতি অনুযায়ী) করেছে অ্যাকর্ড। প্রথম ধাপের তালিকায় আছে ৫৫৩টি কারখানা। ইতিমধ্যে কারখানাগুলো একবার সতর্কতামূলক চিঠি পেয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের তালিকায় আছে ১৯৭টি কারখানা। এগুলো এখন পর্যন্ত দুই দফা সতর্কতামূলক চিঠি পেয়েছে। প্রথম দুই তালিকায় ৪৬টি বন্ধ কারখানা আছে। তৃতীয় বা সর্বশেষ ধাপের তালিকায় রয়েছে ৮২টি কারখানা। ত্রুটি সংশোধনকাজে অগ্রগতি না পেলে এই কারখানাগুলোই পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেবে অ্যাকর্ড।

সর্বশেষ তালিকায় থাকা সাসকোটেক্স (বিডি) লিমিটেড মাত্র ২০ শতাংশ ত্রুটি সংশোধনের কাজ শেষ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাসকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ আছে। মার্চের মধ্যে অধিকাংশ ত্রুটি সংশোধন করে কারখানা চালু করব।’ পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, কারখানার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের গাফিলতির কারণেই সংশোধনকাজ পিছিয়ে আছে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাকর্ডের তালিকা অনুযায়ী সংশোধনকাজে পিছিয়ে থাকা কারখানাগুলোকে আমরা ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এখন কোনো কারখানা যদি দাবি করে যে সংশোধনকাজে তাদের অগ্রগতি আছে কিংবা সংস্কারকাজে পিছিয়ে থাকার পেছনে গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে পারে, তবে আমরা সংশ্লিষ্ট কারখানার বিষয়ে অ্যাকর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসব। অন্যদের বিষয় আমাদের কিছু করার নেই।’

মাহমুদ হাসান আরও বলেন, সংশোধনকাজে পিছিয়ে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশই শেয়ারড বা কারখানাসহ অন্য প্রতিষ্ঠান আছে এমন ভবনে ভাড়া হিসেবে আছে। ফলে অনেক কারখানার মালিক ত্রুটি সংশোধনের জন্য ভবনের মালিককে রাজি করাতে পারছেন না। তাঁদের কারখানা অন্যত্র স্থানান্তর করা ছাড়া উপায় নেই। আবার অনেক কারখানার মালিক অর্থাভাবে সংশোধনকাজ করতে পারছেন না।