Home বাংলা নিউজ পোশাক খাতে আরো কঠোর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

পোশাক খাতে আরো কঠোর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

টিকফা বৈঠক ১৭ মে

gsp

বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করার চার বছর পরও নিজের অবস্থান পাল্টায়নি যুক্তরাষ্ট্র। উল্টো বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ভেতরে-বাইরে থাকা সব পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার বিষয়ে চাপ আরো বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও বিশ্ব শ্রম সংস্থাকে (আইএলও) সঙ্গে নিয়েছে তারা।

গত ১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে ‘২০১৭ বাণিজ্য নীতি আলোচ্য (ট্রেড পলিসি এজেন্ডা) এবং ২০১৬ বার্ষিক প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) আরো কঠোর হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

এই অবস্থার মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) নিয়ে আগামী ১৭ মে ঢাকায় বৈঠক বসছে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের কারণে স্থগিত থাকা জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের কোনো আশা করতে পারছেন না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গত বুধবার কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী ১৭ মে ঢাকায় টিকফার যে সভা হবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়খ্যাত ইউএসটিআরের চারজন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। প্রতিবছর দুই দিন ধরে এ বৈঠক হলেও এবার হবে এক দিনেই। তবে দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৮ মে ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে টেকসই চুক্তিবিষয়ক (সাসটেইনিবিলিটি কমপ্যাক্ট) সভায়ও যোগ দেবেন ইউএসটিআরের প্রতিনিধিরা। এতে ইইউ প্রতিনিধিদল ও আইএলওর কর্মকর্তারাও থাকবেন। উভয় বৈঠকেই বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ইপিজেডভুক্ত কারখানাগুলোতে শ্রম আইন কার্যকর করা এবং ইপিজেডের ভেতরে-বাইরে সব পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে চাপ দিতে পারেন তাঁরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর ওই বছরের জুনে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সুবিধা ফিরে পেতে ওই বছরের নভেম্বরে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনার বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারাও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করছেন; কিন্তু জিএসপি পুনর্বহাল নিয়ে তাঁদের কোনো আগ্রহ নেই। আরো উন্নয়নের তাগিদ দিচ্ছেন বারবার। এই অবস্থায় বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকফার বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। কারণ ওই বৈঠক থেকে আমাদের পাওয়ার কিছু নেই। এ কারণেই ১৭ মের টিকফার বৈঠকটি অনেকটা নিয়ম রক্ষার বৈঠক হতে যাচ্ছে। আর দেশটি যেখানে গুটিকয়েক পণ্যের জিএসপি সুবিধাই পুনর্বহাল করছে না, সেখানে সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা দাবি করা শুধুই আলোচনা ছাড়া আর কিছু নয়। ’

বাণিজ্য চুক্তি কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে; জিএসপি সুবিধা পুনবর্হালের আগে তাদের আরো অনেক অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন দেওয়া এবং শ্রমিক নেতাদের সুরক্ষা দিতে হবে। শ্রমিক অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রগতি অর্জনে ইউএসটিআর ২০১৭ সালেও বাংলাদেশের অংশীজনদের উৎসাহ দিয়ে যাবে। ইউএসটিআর সার্বিক বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে নজরদারিতে রাখবে। কারণ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতেও বাংলাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, টিকফার বৈঠক উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয় এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানও জানতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ২০১৭ সালে ইউএসটিআরের পরিকল্পনা হলো আরো কঠোর সম্মান দেখানো। যেসব উদ্বেগ থেকে জিএসপি প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা দূর করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, শ্রম দপ্তর ও ইউএসএইড বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে কর্মরত অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ছাড়াও আইএলও, ইইউয়ের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে ইউএসটিআর।