রফতানির বিপরীতে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনার আওতাভুক্ত হতে চায় প্রচ্ছন্ন রফতানিখাত হিসেবে পরিচিত গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাত। একই সঙ্গে এক্সেসরিজ খাতের সার্বিক কমপ্লায়েন্স উন্নয়নে অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা, উৎসে কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৭ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ করা ও করপোরেট কর ৩৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এছাড়া এক্সেসরিজ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে একটি প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আবদুল কাদের খান। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের কাজে এক চিঠিতে এসব প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
সরকার আগামী জুনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপন করতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে এনবিআর। অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের মতো বিজিএপিএমইএ তাদের বাজেট প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো বেশকিছু দাবি জানানো হয়েছে।
সূত্র মতে, রফতানির বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা নগদ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। নতুন বাজারে রফতানিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিন্ন ভিন্ন হারে এ প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার। উদ্দেশ্য, রফতানিকারকদের আগ্রহ তৈরি করা। পোশাক তৈরিতে কাপড়ের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো এক্সেসরিজ নামে পরিচিত। পোশাক রফতানিকারকরা রফতানি মূল্যের উপর নগদ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক হওয়ায় এক্সেসরিজ খাত এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
দীর্ঘদিন থেকেই গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাত প্রণোদনা দাবি করে আসছিল। কিন্তু বারবারই পোশাক শিল্পের পশ্চাদসংযোগ শিল্প হিসেবে পরিচিত সম্ভাবনাময় এই খাতকে অবহেলাই করা হয়েছে। তবে এবারো এই শিল্প সংশ্লিষ্টরা বাজেটের আগে শিল্পের প্রসারে আগের মতো বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। প্রণোদনার যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সরকার এ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ শতভাগ রফতানিমুখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হওয়া সত্তে¡ও এখন পর্যন্ত এ খাত প্রণোদনা পাচ্ছে না।
তৈরি পোশাকের দুটি উপাদানের একটি হচ্ছে এক্সেসরিজ। এর বাইরে শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট বিষয়েও সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি জানানো হয়েছে। বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা দেয়ার কর্তৃত্ব বিজিএপিএমইএ’র কাছে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বন্ড লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়নের দায়িত্ব বিজিএপিএমইএ’র উপর। কিন্তু এনবিআরের ঘোষিত নীতিমালার আলোকে আমদানি প্রাপ্যতা ইস্যুর ক্ষমতাও তাদেরকে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বন্ড অফিস থেকে বার্ষিক অডিট সম্পাদন করার পরও ‘শুল্ক মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কমিশনারেট’ থেকে ফের অডিট করায়ও আপত্তি রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো কার্যকর হয়নি। এতে উদ্যোক্তাদের হয়রানি বাড়ছে। এছাড়া বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র ন্যায় চলমান বন্ডের সুবিধা বিজিএপিএমইএকে দেয়া, এ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পুরো কারখানা প্রাঙ্গণকে বন্ডেড এলাকা হিসেবে গণ্য করা এবং এ খাতভুক্ত শিল্পের জন্য অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম আমদানির শুল্ক অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানের রফতানির বিপরীতে বিদ্যমান উৎসে কর কমানোরও দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে রফতানি মূল্যের উপর দশমিক ৭০ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রযোজ্য রয়েছে। এটি কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া এ খাতের উৎসে কর বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব ধরনের পণ্য ও সেবার উপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য অনুদান দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।