ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে অন্যান্য বাজারে পোশাক রপ্তানিতে সরকার তিন শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। উদ্দেশ্য, এ সব বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ানো। এর সুফলও মিলেছিল গত কয়েক বছরে। তবে ধাক্কা খেয়েছে গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে। আলোচ্য সময়ে এ সব বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি না বেড়ে উল্টো কমেছে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এ সব বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪২৪ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলারের। আর এর আগের অর্থ বছরে রপ্তানি ছিল ৪৩১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে গত অর্থ বছরে এ সব বাজারে ৬ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার বা ৫৪৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি কমেছে। এটি সরকারকেও কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে। কেননা সরকার চাইছে, ইউরোপ ও আমেরিকার উপর রপ্তানিতে অতিনির্ভরশীলতা কমিয়ে বাজার বহুমুখী করতে।
অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন বাজার। তৈরি পোশাকের প্রায় ১৫ শতাংশ যায় এ সব বাজারে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, বাজার বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে নতুন বাজারে সরকার নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। তবে গত বছর অন্যান্য বড় বাজারেও রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। সেটি নতুন বাজারেও প্রভাব ফেলেছে।
ইপিবি’র পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত অর্থ বছরে সার্বিকভাবে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ (০.২০%)। আলোচ্য সময়ে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থ বছরে (২০১৫-১৬) পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলারের।
উদ্যোক্তারা বলছেন, নানামুখী কারণে রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির মনে করেন, নতুন-পুরনো সব বাজারেই রপ্তানি কমছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ খাতের জন্য সব বাজারেই ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি কেবল রপ্তানির জন্য আলাদা মুদ্রানীতিও প্রয়োজন। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নতুন বাজারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও বড় রপ্তানি বাজারের উপর নির্ভর করে। সার্বিকভাকে সেসব বাজারেও চাহিদা কমেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের কারণে কিছু কিছু বাজারের চাহিদা কমেছে। তবে বাংলাদেশের পোশাকের নতুন বাজারে মিশ্র প্রবণতা রয়েছে। অর্থাত্ সব বাজারে রপ্তানি কমেনি। নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে বিদ্যমান নগদ সহায়তা আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটি ভাবা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এ সব বাজারে মোট ৪২৪ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আর পূর্বের অর্থ বছরে (২০১৫-১৬) রপ্তানি হয়েছিল ৪৩১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক। অর্থাত্ এ সব বাজারে রপ্তানি কমেছে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। অথচ পূর্বের অর্থ বছরে বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চীন, চিলি, রাশিয়া ও আরো দু-একটি বাজার বাদে অন্যান্য সব নতুন বাজারে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি কমেছে।
অস্ট্রেলিয়ায় পূর্বের বছর ৬৩ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হলেও গত অর্থ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে। একইভাবে জাপানে ৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার থেকে কমে ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, তুরস্কে ৪৬ কোটি থেকে ৩৮ কোটি, কোরিয়ায় ১৮ কোটি ৬২ লাখ থেকে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ, ভারতে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ থেকে কমে ১২ কোটি ৯৮ লাখে, ব্রাজিলে ১২ কোটি থেকে ৯ কোটি ৯৮ লাখ।
আর এই সময়ে চীনে ৩৪ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৯ কোটি ডলারে, চিলিতে চার কোটি ৫৮ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ও রাশিয়ায় ২৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।