পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির কারখানা বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অভাবে ঠিকভাবে উত্পাদন কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এর মধ্যে সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় দুই বছর ধরে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। উচ্চ দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতের কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৌশল খাত, সিরামিক ও সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোতেও রয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। যার ফলে এসব খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ও কমে গেছে।
ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৪৮টি কোম্পানির মধ্যে ২৪টি কোম্পানির মুনাফা সর্বশেষ প্রান্তিকে (তৃতীয়) কমেছে। আর লোকসানে পড়েছে ৬টি কোম্পানি। অর্থাত্ তালিকাভুক্ত কোম্পাগুিলোর মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ কোম্পানির আয় কমেছে। অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয়ও ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে জানা গেছে। কোম্পানিগুলোর আয় কমার ক্ষেত্রে তুলার দাম বাড়লেও ইয়ার্নের দাম সেই অনুযায়ী না বাড়া এবং উচ্চ দাম দিয়েও গ্যাস না পাওয়াকেই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বস্ত্র খাত সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বিটিএমএ’র সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন ইত্তেফাক’কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুলার দাম যতটা বেড়েছে ইয়ার্নের দাম ততোটা বাড়েনি। ফলে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেছে। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের পেছনে কোম্পানিগুলোকে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বেশি খরচ করেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া মজুরি খরচ বেড়েছে। অথচ ইয়ার্নের দাম সে অনুযায়ী বাড়েনি। জাহাঙ্গীর আলামিন আরও বলেন, সুতার কল প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা করে চলে। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে যদি এক বেলাও কারখানা বন্ধ থাকে সেক্ষেত্রে উত্পাদন ও উত্পাদনশীলতায় পিছিয়ে পড়তে হয়।
বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, আগে গ্যাসের দাম প্রতি কিউবিক মিটারে ছিল ৪ টাকা ৪০ পয়সা। এখন দিতে হয় ৯ টাকা। এরপরও ঠিকভাবে গ্যাস পাওয়া যায় না। সবাই এ সমস্যায় পড়ছে। এছাড়া বেশিরভাগ বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই পাওয়ার বরাদ্দ রয়েছে। অথচ কখনও ৮ কখনও ৪ কিংবা কখনও ১০ পিএসআই পাওয়া যায়। ফলে কোম্পানিগুলোর জ্বালানি বাবদ খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গ্যাস সংকট নিয়ে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, পোশাক খাত একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চাপের ফলে অনেক কারখানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো— দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। সংকট থাকলেও দফায় দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের। তাই ন্যায্য দামে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির ব্যবস্থা করা না হলে এ খাতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ প্রান্তিকে যে কোম্পানিগুলোর মুনাফা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে সে কোম্পানিগুলো হলো— আনলিমা ইয়ার্ন, অ্যাপেক্স স্পিনিং, সিএনএ টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল, ফেমিলিটেক্স, ফার ইস্ট নিটিং এন্ড ডায়িং, হামিদ ফেব্রিক্স, হা ওয়েল টেক্সটাইল, ম্যাকসন্স স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, মতিন স্পিনিং, প্যাসিফিক ডেনিমস, প্রাইম টেক্সটাইল, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, রহিম টেক্সটাইল মিল, সাফকো স্পিনিং, সায়হাম কটন, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, স্কয়ার টেক্সটাইল, স্টাইল ক্র্যাফট, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, তুং হাই নিটিং এবং জাহিন টেক্সটাইল। এছাড়া লোকসানে পড়েছে মেট্রো স্পিনিং, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা ডায়িং, দুলামিয়া কটন, মেট্রো স্পিনিং এবং তাল্লু স্পিনিং। লোকসান অনেক বেড়ে যাওয়ায় বস্ত্র খাতের তিন কোম্পানির শেয়ারের দাম গায়ের দরেরও (ফেসভ্যালু) নিচে চলে এসেছে। কোম্পানিগুলো হলো—ঢাকা ডায়িং, ফেমিলিটেক্স ও মেট্রো স্পিনিং। আর কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম রয়েছে ফেসভ্যালুর কাছাকাছি।
বস্ত্র খাতের বাইরে অন্য কোম্পানিগুলোতেও গ্যাস সংকট রয়েছে। বিশেষ করে প্রকৌশল ও সিমেন্ট খাত। প্রকৌশল খাতের সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কারখানা সম্প্রসারণ করলেও গ্যাস সংকটের কারণে কারখানা চালাতে না পারেনি। এতে দুই বছর বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। এছাড়া সিমেন্ট খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির আয়ও এবার কমে গেছে।
আর লোকসানে পড়ায় ঠিকভাবে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।