বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানি আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোই ভালো করছে। তাই ২০১৭ সালের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমেছে পাঁচ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অথচ ভারত, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের যথাক্রমে দশমিক ৯৪, পাঁচ দশমিক ৬৪ ও দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। এমনকি প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সবার নিচে। একই সঙ্গে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাকের রপ্তানি কমছে ছয় দশমিক ৬৩ শতাংশ।
তৈরি পোশাকের বড় বাজারগুলোতেও রপ্তানি কমে গেছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে বেলজিয়ামে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কমেছে ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। ইউরোপিয়ান দেশভুক্ত জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর প্রধান প্রধান নতুন বাজার তুরস্ক, জাপান, মেক্সিকো ও কোরিয়াতেও একই অবস্থা।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রকৃত অর্থে বাড়েনি, বরং তিন দশমিক সাত শতাংশ কমেছে। অথচ একই সময়ে প্রধান প্রতিযোগী চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, ফিলিপাইন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার রপ্তানি অনেকটাই বেড়েছে। একই তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠনও (বিজিএমইএ)।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববাজারে গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান। দেড় দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল তিন দশমিক ২৮ শতাংশ, আর ভিয়েতনামের একেবারেই সামান্য (মাত্র দশমিক শূন্য আট শতাংশ)। অথচ ২০১৪ সালে একই বাজারে বাংলাদেশের পাঁচ দশমিক ৭০ আর ভিয়েতনামের বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এর কারণ হিসেবে গত কয়েক বছরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার মান কমে যাওয়া ও বাংলাদেশের মুদ্রার দর বাড়ার প্রবণতাকে দায়ী করছেন তারা। কেননা স্থানীয় মুদ্রার মান বাড়লে রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে আগের চেয়ে কম অর্থ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনের পর কিছু কারখানা আংশিক, সাময়িক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ ও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেকের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএর তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় ৩৩৯ কোটি ৭১ লাখ মর্কিন ডলার। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান দেশভুক্ত দেশে রপ্তানি হয়েছে ১৮৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার। কানাডায় হয়েছে ১৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর নতুন বাজারগুলোয় ৪৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী আমাদের সময়কে বলেন, এ খাত এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ কারখানাগুলোয় অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, ইউরোর দরপতন ও বছরের মাঝামাঝি শ্রমিক অসন্তোষের মতো বিষয়। তাই বর্তমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের উচিত বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
এদিকে ভারত সরকার দেশটির তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ৮৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ (এক ধরনের অর্থনৈতিক ত্রাণ প্রকল্প) ঘোষণা করেছে। এ বিশাল ভর্তুকির কারণে দেশটির পোশাকশিল্প ব্যবসায়ীরা এখন অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ক্রেতাদের আহ্বান জানাতে পারছে। আর দেশটি ক্রমবর্ধমান হারে বাজার দখল করায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রেতা হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটেন পৃথক হয়ে যাওয়ায় ইউরোপে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীও তৈরি হচ্ছে। তাই নতুন বাজার তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশে পোশাক মেলার আয়োজন করছেন। একই সঙ্গে পোশাকের ব্র্যান্ডিং করারও চেষ্টা চলছে, যার মাধ্যমে নতুন ক্রেতাদের হাতে পোশাক পৌঁছে যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সম্ভাবনাময় একটি বড় বাজার হতে পারে রাশিয়া। কারণ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক আমদানিকারক দেশ সেটি। তবে রাশিয়ার পোশাক বাজারের একটা বিরাট অংশ বর্তমানে দখল করে আছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। এখন সেই বাজার ধরারই চেষ্টা চলছে।
ইপিবির দেওয়া তথ্যমতেও রাশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে দুই কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক। তবে মেক্সিকোতে রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এক কোটি ২৭ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পোশাক গেছে এক কোটি ১৭ লাখ ডলারের।