তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বর্তমান নুন্যতম মজুরি জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। তাদের জীবনযাত্রার ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, পরিবারের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ও পোশাকের নূ্যনতম চাহিদাও তারা মেটাতে পারেন না। চালের দাম বাড়লে তাদের অন্য খরচ কমিয়ে দিতে হয়। চিকিৎসার জন্য ধার করতে হয়। বর্তমানের যে মজুরি কাঠামো তা বাসযোগ্য জীবনের জন্য যথেষ্ট নয়।
কেয়ার বাংলাদেশ গত শনিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এ জরিপ প্রকাশ করে। গবেষণা সংস্থা সানেম এ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ খাতে আগামীতে নূ্যনতম মজুরি নির্ধারণে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
কেয়ার বাংলাদেশ ২০০৫ সাল থেকে তৈরি পোশাক খাতে মৌলিক শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ‘ঐক্য’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় জরিপটি করা হয়। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার এবং এ-সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, খানা আয় ও ব্যয় জরিপ (২০১৬) অনুযায়ী, একটি দরিদ্র পরিবারের যেখানে মাসে কমপক্ষে আয় ৮ হাজার ৭০০ টাকা, সেখানে পোশাক খাতে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নূ্যনতম মজুরি খুবই অপর্যাপ্ত। তিনি বলেন, কত টাকা হলে শ্রমিক পরিবার মানসম্পন্ন জীবনযাপন সম্ভব তা নির্ধারণ করতে হবে। বর্ধিত মজুরির জন্য সরকার, মালিক ও ক্রেতার কতটুকু দায় নিতে হবে তাও নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মজুরি নির্ধারণে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকে না। মূল্যস্ম্ফীতি এবং রফতানি আয়ের বাইরে আর কোনো তথ্য থাকে না বিবেচনার জন্য। ফলে আলোচনা কার্যকর হয় না। আগামীতে সব তথ্য নিয়ে মজুরি বোর্ডের আলোচনায় বসা উচিত।
বাংলাদেশ লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, শিল্পের সামর্থ্য এবং শ্রমিকদের প্রয়োজন বিবেচনায় নূ্যনতম মজুরি কত টাকা হওয়া প্রয়োজন তা নির্ধারণে সিপিডি, সানেম, বিলস ও অর্থনীতি সমিতি একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
জরিপে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের দর বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা নিম্নমানের খাদ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। পোশাক উৎপাদন করলেও শ্রমিকরা মানসম্মত পোশাক পরতে পারে না। বড় ধরনের অসুখ-বিসুখে না পড়লে ডাক্তারের ফির ভয়ে অনেকে চিকিৎসা নেয় না। ব্যয় মেটানো সম্ভব না হওয়ায় অনেক শ্রমিকের ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। তিন সদস্যের পরিবারে একজন শ্রমিকের মাসিক নূ্যনতম ব্যয় ৭ হাজার ৭০০ টাকা।