ঢাকা ও গাজীপুরে কর্মরত ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ তৈরি পোশাক শ্রমিকের বৈধ নিয়োগপত্র নেই। আর নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে এ হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে সবাইকে আইডি কার্ড দেয়া হয়। কর্মক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারীদের বেশি লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। যৌন হয়রানি, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুত হতে হয়।
বুধবার রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে প্রকাশিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা তেরে দেস হোমস (ইতালি) ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকের অবস্থা ও অধিকার’ শীর্ষক সমীক্ষাটি পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল এইচ সুমন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
সমীক্ষার সার্বিক বিষয় তুলে অধ্যাপক ড. মাহমুদুল এইচ সুমন জানান, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ৭৭০ শ্রমিকের ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে শ্রমিকদের কাছে বাসস্থান, কর্মপরিবেশ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন হয়রানি, শ্রম আইনে দেয়া সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। কারখানাভেদে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কর্মক্ষেত্রে নানা অজুহাতে বেতন কাটা হয়। নারী শ্রমিকদের গালিগালাজ একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে মধ্যবর্তী শ্রেণীর কর্মচারীরা শ্রমিকদের মারধর, অশ্রাব্য গালিগালাজ দেয়। এটিতে অনেক কারখানার নারী শ্রমিকরা খুবই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়। এছাড়া সন্তান সম্ভাব্য নারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার চল এখনো কম। বরং অনেক ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন সময়ে নানা অজুহাতে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে উৎসাহ দেয়া হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকা ও গাজীপুরে প্রায় ২৯ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে প্রায় ৩৫ শতাংশ শ্রমিককে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকি ৫৮ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ শ্রমিক জানেই না কী কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়ে থাকে। ঢাকা ও গাজীপুরে মাত্র ৫ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত আছেন। অন্যদিকে ঢাকা ও গাজীপুরের ৭২ দশমিক ২০ শতাংশ শ্রমিক কখনোই সরকারি পরিদর্শকদের কারখানাতে দেখেননি, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে এ হার ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ। নানা অজুহাতে শ্রমিকদের বেতন কর্তন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা ঠিক বুঝতেও পারে না কেন বেতন কাটা হল। ঢাকা ও গাজীপুরে বেতন কর্তনের হার ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ৪০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতের আজকের অবস্থানের পেছনে মালিক-শ্রমিক উভয়েরই ভূমিকা আছে। উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি আর শ্রমিকদের শ্রমে ভর করেই এ শিল্প আজ শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। তাই মালিক-শ্রমিক একজন অপরজনের কাছ থেকে আলাদা করার সুযোগ নেই। আর উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখার দায়িত্ব সরকারের। এজন্য মজুরি বোর্ডসহ শ্রম আইন সংশোধনে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব রাখা হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন মজুরি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।