Home Bangla Recent এখনও অনেক পিছিয়ে তৈরি পোশাক খাত

এখনও অনেক পিছিয়ে তৈরি পোশাক খাত

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে, অর্থাৎ ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সময় আছে আর মাত্র তিন বছর। অথচ বর্তমানের রফতানি আয় থেকে লক্ষ্যমাত্রার ব্যবধান এখনও প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে পোশাক রফতানি থেকে আয় ২৮ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

দুই বছর আগে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সময় বছরে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়। গত দুই বছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১০ এবং শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। তৃতীয় বছরে এসে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের কিছু কম। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে রফতানির চলতি প্রবণতা এবং লক্ষ্যমাত্রার ব্যবধানটা কত বড়। বাকি তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখন বছরে ১৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি দরকার। বিশাল এ প্রবৃদ্ধি অর্জনযোগ্য নয় বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর তা অর্জনে একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা তৈরি করে বিজিএমইএ।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় সম্ভব হচ্ছে না। অবকাঠামো ঘাটতি এবং কারখানা মালিকদের কিছু দুর্বলতাও এ জন্য দায়ী। এ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর ব্যাপক সংস্কারকাজের বাইরে উদ্যোক্তাদের খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া বা বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্রেক্সিটের ধাক্কা, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা নীরব মন্দার কারণে পোশাকের চাহিদা কমেছে। পোশাকের দর কমছে। এসব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রায় একটা বড় ব্যবধানেই পিছিয়ে আছেন তারা।

৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পথনকশা প্রণয়ন করা হয় ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অ্যাপারেল সামিটে। দেশি-বিদেশি সংশ্নিষ্ট সব পক্ষ এতে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয় সামিটে। অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পথনকশা তৈরিতে মূল পরামর্শকের ভূমিকা পালন করে। পথনকশায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ১৮টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়। এসবের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দরসহ সহায়ক অবকাঠামো, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা, দক্ষ শ্রমশক্তি, পণ্যের দর ও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টায় এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় পথনকশায়। এতে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, সরকার, ক্রেতা, উন্নয়ন অংশীদার, ক্রেতা দেশের সরকার, ট্রেড ইউনিয়নসহ মোট ১০টি পক্ষের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের কথা বলা হয়।

পথনকশায় সরকারের দায়িত্ব ছিল গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট সমাধান, বিনিয়োগে জমির চাহিদা মেটানো, প্রণোদনা, কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা,অগ্নিনিরাপত্তাসহ দুর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতি ও পোশাক খাত নিয়ে কূটনীতি। ক্রেতাদের দায়িত্ব ছিল মধ্যস্বত্ব বাদ দিয়ে সরাসরি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পোশাক আমদানি, ন্যায্য দর দেওয়া ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চুক্তি। এভাবে সব পক্ষের কিছু না কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। পথনকশায় বিজিএমইএর দায়িত্ব ছিল কর্মপরিবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বহুপাক্ষিক সামাজিক সংলাপের ব্যবস্থা, নতুন নতুন বাজার সন্ধান ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ।

দায়-দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ, বন্দরসহ সব অবকাঠামো ঘাটতির কারণে যথেষ্ট বিনিয়োগ নেই। এ কারণে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। লিডটাইম (ক্রেতা আদেশ পাওয়ার পর পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত সময়) বেশি লাগছে। বিশেষ করে এখনও ওভেন পোশাক তৈরির ৬০ থেকে ৬২ শতাংশ কাপড় আমদানি করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ থাকলে এ আমদানির প্রয়োজন হতো না। তবে সরকার অন্যান্য দায়িত্ব পালন করেছে ভালোভাবেই। যেমন পোশাক খাতে কূটনীতির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে সম্মেলন করেছেন। সিদ্দিকুর রহমান স্বীকার করেন, নিজেদের অনেক দুর্বলতা আছে। যেমন গবেষণা ও উন্নয়নে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বিপণন কৌশলেও দুর্বলতা আছে। উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদন উপযোগী আধুনিক মেশিনারিজ ব্যবহারেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব না হলেও এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে পোশাক খাত- মন্তব্য করেন তিনি।

কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পথনকশা অনুযায়ী সব পক্ষ তাদের দায়িত্ব পালন করলে লক্ষ্যমাত্রা আর রফতানি আয়ের মধ্যে এতবড় ব্যবধান থাকত না। কিন্তু কোনো পক্ষই পুরোপুরি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তাদের মতে, পথনকশা প্রণয়নেও সব দিক বিবেচনা করা হয়নি। উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদনের বিষয়টি পথনকশার কোথাও নেই। অথচ দুই ডলারের গোলগলা টি-শার্ট পরিমাণে কয়েকগুণ বেশি রফতানি করলেও এ লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা যাবে না। উচ্চ মূল্যের পোশাকের পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক উৎপাদনে যেতে হবে। উদাহরণ দিয়ে একজন উদ্যোক্তা সমকালকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের টুপি বা ক্যাপ একটা সাধারণ পোশাক। তবে ফ্যাশন ভাবনায় অন্য পোশাকের সঙ্গে একই রঙের ডিজাইনের ক্যাপের চাহিদা আছে ক্রেতাদের। তারা যেখানে একসঙ্গে একাধিক পণ্য নিতে পারবে সেখানেই পুরো প্যাকেজের রফতানি আদেশ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এ ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক কমই করে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here