Home Bangla Recent ন্যায্য দাম পেতে আন্তর্জাতিক সংলাপের তাগিদ

ন্যায্য দাম পেতে আন্তর্জাতিক সংলাপের তাগিদ

তৈরি পোশাকে দামের ন্যায্যতা নিশ্চিতে উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক সংলাপে বসার পরামর্শ রেখেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয় বিশ্বের এমন সব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, প্রতিনিধিত্বকারী ভোক্তা সংগঠন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন, দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ এবং দেশীয় উদ্যোক্তা প্যানেল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সিপিডি এ আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিতে পারে। বেসরকারি এ সংস্থাটি বলেছে, পোশাক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার সুযোগ থাকতে হবে। কিন্তু সেটি গণহারে নয়, পোশাক খাতে মালিকদের সংগঠন হচ্ছে একটি। শ্রমিকদেরও সংগঠন থাকবে একটি।

শনিবার ‘পোশাক খাতের অগ্রগতি মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংলাপে এসব বার্তা দিয়েছে সংস্থাটি। এতে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. এনামুল হক, মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি বেগম শামসুন্নাহার, বিকেএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান, শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার। এছাড়া উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিসিসিআইএর সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষসহ আরও অনেকে। ড. রেহমান সোবহান বলেন, সময় এসেছে পরিবর্তনের। একুশ শতকে এসে উনবিংশ শতকের চিন্তা করলে চলবে না। এ পরিবর্তন মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের মধ্যেই আসতে হবে। পোশাক খাতে এত বেশি ইউনিয়নের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মালিকদের সংগঠন যেহেতু একটি। তাই শ্রমিকদের ফেডারেশন একটি হওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে। এতে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন, কারখানায়ও স্থিতিশীলতা থাকবে। যা পোশাক খাতের ক্রমাগত উন্নতি নিশ্চিত করবে। পোশাকের দামে ন্যায্যতা নিশ্চিত সম্পর্কে ড. রেহমান সোবহান বলেন, ৫ ডলারের পোশাক ৩০ ডলারে বিক্রি হয়। মাঝখানের ২৫ ডলারের সুবিধাভোগী কারা তা সামনে আনা দরকার। ক্রেতারা পোশাক খাতে স্থিতিশীলতা দেখতে চান। কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা চান। শ্রমিকের জীবনমানের উন্নতির কথা বলেন। উদ্যোক্তার ব্যবসার স্বার্থেই এসব চাহিদা নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার ব্যবসাটা উদ্যোক্তার একার নয়। এখানে ক্রেতা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা রয়েছে। তারাও এর থেকে ব্যবসা করছে। সবাইকেই এই কমপ্ল্যায়েন্সে শরিক হওয়া দরকার। এর জন্য ক্রেতাদের কাছে এ বার্তা জোরালোভাবে তুলে ধরা অতি জরুরি হলেও সম্মিলিত উদ্যোগ নেই। তিনি দামে ন্যায্যতার জন্য দেশি-বিদেশি সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংলাপ আয়োজনের পরামর্শ দেন। গবেষণা প্রতিবেদনে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, এখনও পুরনো ভবনে ব্যবসা করছে ১২ ভাগ কারখানা। আর বিদেশি লোক কাজ করছে ১৬ ভাগ কারখানায়। কারখানার আকৃতি ও আকারে গুণগত ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, পোশাক খাতের সামাজিক অগ্রগতি ভালো লক্ষণ। তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলনামূলক কম হলে সামাজিক অগ্রগতি টেকসই হয় না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পোশাক খাত আজ একটি স্বীকৃত পর্যায়ে এসেছে। এখন পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। কিভাবে খাতটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায় সে ভাবনা উদ্যোক্তা এবং মালিক উভয়কেই নিতে হবে। কারণ ব্যবসা ও জীবনের স্বার্থে তারা একে অপরের পরিপূরক।

এদিকে শ্রমিকের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার ব্যাখা দেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে পোশাকের চাহিদা ও দাম দুটোই কমেছে। একই সঙ্গে দেশে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। অবকাঠামোগত কারণে ‘লিডটাইম’ও বেড়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাকে কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মজুরি বোর্ড গঠন হয়েছে। ১৯ মার্চ বোর্ডের প্রথম বৈঠক বসবে। শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা ও মালিকের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখেই ন্যূনতম মজুরি দেয়া হবে। তিনি মালিকদের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, শ্রমিক ছাড়া কারখানা চলবে না। তাই শ্রমিকদের প্রতি তারা যাতে যত্নবান থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here