Home Bangla Recent পাটপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য বেড়েছে ৭৭ শতাংশ

পাটপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য বেড়েছে ৭৭ শতাংশ

bangladesh jute products: india moves to impose anti-dumping duty

বর্তমানে বাংলাদেশে উদ্যোক্তারা ২৪০ প্রকারের পাটপণ্য উৎপাদন করছেন। এক বছর আগেও দেশে ১৩৫ ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন হতো। এ হিসাবে পাটপণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। জাতীয় পাট দিবস-২০১৮ উপলক্ষে গতকাল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ তথ্য জানান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআইয়ের পাটের বহুমুখীকরণ-বিষয়ক বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক ও ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. রাশেদুল করিম মুন্না। এছাড়া নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) উপদেষ্টা (গবেষণা) বাবুল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এএফএম আকতারুজ্জামান ও বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিসিসিআইয়ের পরিচালক এসএম জিল্লুর রহমান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এমএস সেকিল চৌধুরী, সাবেক পরিচালক আহম্মদ হোসেন মজুমদার, একেডি খায়ের মোহাম্মদ খান, আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (জিটিপিডিসি) পরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক পাটোয়ারী।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছে। তবে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিক সৃজনশীল জ্ঞানস্বল্পতার কারণে পাটের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং কাঁচা পাটের ৯০ শতাংশ রফতানি করে। তার মতে, বাংলাদেশের পাট খাত ও দেশ-বিদেশে পাটের বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে হলে ‘জুট পাল্প পেপার অ্যাক্ট’ ও ‘পাট আইন’ প্রণয়ন করা দরকার।

মূল প্রবন্ধে মো. রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, পরিবেশ সচেতনতা ও সবুজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাটের তৈরি শপিং ও ফুড গ্রেড ব্যাগ, কম্পোজিট, জিও-টেক্সটাইল, পাল্প ও কাগজের বিশাল বাজার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৯ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমাদের পাট শিল্পের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। তিনি ‘জুট প্যাকেজিং অ্যাক্টের কার্যকর বাস্তবায়ন, পাটপণ্যের জন্য রিফিন্যান্সিং ফান্ড বা গ্রিন ফান্ডের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদান, প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি ও দক্ষ জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিজেএমসি উপদেষ্টা বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার ডিসকস আমদানি করা হয়, যা মূলত কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। অথচ বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট থেকে ভিসকস প্রস্তুত করা যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ সরাসরি পাট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকার জুট প্যাকেজিং অ্যাক্টের মাধ্যমে পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় দেশে পাটের ব্যবহার ও উৎপাদন বেড়েছে। পাটচাষীরা আগের চেয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে দেশে ৬৫ লাখ বেল, ২০১৫ সালে ৭০ লাখ, ২০১৬ সালে ৮৫ লাখ ও ২০১৭ সালে ৯২ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের উদ্যোক্তারা পাটপণ্যের বহুমুখীকরণে অত্যন্ত মনোযোগী ও আন্তরিক। এ খাতে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকার এরই মধ্যে ছয়টি টেক্সটাইল কলেজ ও ১২টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। পাটপণ্য বহুমুখীকরণের জন্য পাট-বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। স্বল্পমূল্যে পাটের তৈরি ব্যাগ উৎপাদনের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে আরো উৎসাহিত করা যাবে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পাট শুধু আমাদের সোনালি অতীতই নয়, সোনালি ভবিষ্যৎও বটে। গত কয়েক দশক তৈরি পোশাক খাত ও প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এখন সময় এসেছে নতুন কিছু খুঁজে বের করার। এক্ষেত্রে পাটের সম্ভাবনা খুবই বেশি।

তিনি আরো বলেন, পাটপণ্য বহুমুখীকরণের জন্য দেশের উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে নিজেদের তৈরি করেছেন। এ খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নও বেশ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু পাটের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here